ডেস্ক রিপোর্ট: সোমবার দুপুরে বন্যা বিধ্বস্ত নাগরাকাটায় ত্রাণ দিতে গিয়ে আক্রান্ত মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু ও শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। পুলিশের সামনেই এক পাল জনতা সাংসদ ও বিধায়কের উপর হামলা করে। লাঠি ও পাথরের আঘাতে গুরুতর জখম হন খগেন মুর্মু। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় কোনও রকমে উদ্ধার করে শিলিগুড়িতে এনে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। খগেনের অবস্থা এখন শঙ্কামুক্ত হলেও তাঁর চোট নিরাময় হতে সময় লাগবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পরেও হামলাকারীদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারে নি পুলিশ। এটা নিয়ে তৃণমূল বা রাজ্য প্রশাসনের তরফে কোনও উচ্চবাচ্য না থাকলেও বুধবার ত্রিপুরা নিয়ে সুর চড়িয়েছেন মমতা।

দলের সাংসদ আক্রান্তের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের নিচুতলাতেও ক্ষোভ ছড়িয়েছে। যদিও বাংলায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতিবাদ ছিল যথেষ্টই সংযত। ত্রিপুরায় বিজেপির সরকার। বাংলায় দলীয় সাংসদকে মেরে রক্তাক্ত করার প্রতিবাদে রাজধানী আগরতলায় তৃণমূলের রাজ্য দফতরে ঢুকে বিজেপির সমর্থকরা ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। তেইশের বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয় বিপর্যয়ের পর এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় তৃণমূলের সংগঠন বলতে কিচ্ছু নেই। শুধু রাজ্য দফতরের মাথায় দলের সাইনবোর্ডটুকু ঝুলছে। ঘটনার কথা কানে আসতেই কলকাতায় ফুঁসে ওঠেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। মঙ্গলবারই তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছিল, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে তাদের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার আগরতলায় যাবে।
আগরতলাগামী তৃণমূলের প্রতিনিধিদলে আছেন দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ, সাংসদ সায়নী ঘোষ, সাংসদ প্রতিমা মন্ডল, রাজ্যের মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা ও টিএমসিপি নেতা সুদীপ রাহা। আগরতলা বিমানবন্দর থেকে বেরোনো মাত্রই কুণাল-সায়নী সহ তৃণমূলের প্রতিনিধিদলটিকে পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ। কলকাতা থেকে আসা দলের প্রতিনিধিদের রাজ্য দফতরে পৌঁছে দিতে বিমান বন্দরের বাইরে চারটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব। কিন্তু কুণাল-সায়নীরা বিমানবন্দরের বাইরে এসে দেখেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে একটি মাত্র গাড়ি। পুলিশ তাঁদের ঘিরে ফেলে বলে সায়নী ঘোষ অভিযোগ করেন। গাড়ির অভাবে প্রিপেইড ট্যাক্সি ভাড়া করে দলের দফতরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা। কিন্তু প্রিপেইড ট্যাক্সি বুক করতেও পুলিশ তাঁদের বাধা দেয় বলে অভিযোগ করেছেন কুণাল ঘোষ। পুলিশের বাধায় দলের দফতরে রওনা দিতে না পেরে বিমানবন্দর চত্বরেই ধর্নায় বসে পড়েন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা।
আগরতলা বিমানবন্দরের বাইরে তৃণমূলের ধর্না প্রায় তিন ঘন্টা চলে। যদিও পরে ত্রিপুরা পুলিশই প্রিপেইড ট্যাক্সি ডেকে তৃণমূলের পাঁচ নেতানেত্রীকে তাঁদের দলীয় অফিসে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। চারটি ট্যাক্সিতে সওয়ার হয়ে ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের দফতরে পৌঁছান কুণাল ঘোষরা। দলের দফতর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক বৈঠকও করেন তৃণমূলের নেতা-নেত্রীরা। তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ত্রিপুরা পুলিশের ডিজিরও সাক্ষাৎ হয়েছে বলে জানা গেছে। বুধবার সকালে আগরতলা বিমানবন্দরে নেমেই কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, “আগরতলায় আমাদের রাজ্য দফতর ভাঙচুর করেছে বিজেপির দুষ্কৃতীরা। পুলিশ দাঁড়িয়ে দেখেছে। ত্রিপুরায় আমাদের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। অতীতে এখানে অভিষেকের কনভয়েও হামলা হয়েছে। আমাদের আটক করা হয়েছে। সেই রাতে কোনওক্রমে প্রাণে বেঁচেছিলাম। গতকাল থেকে সামাজিক মাধ্যমে আবার হুমকি-ধামকি শুরু হয়েছে। আমরা আজ যাচ্ছি, আমাদের মৃতদেহও ফিরতে পারে।”

যদিও আগরতলা বিমানবন্দরে তিন ঘণ্টার নাটক বাদ দিলে বুধবার ত্রিপুরায় তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সফর ছিল নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ। বিজেপির দাবি, তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের সফরে কোনও বাধা দেয় নি পুলিশ। সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কলকাতা থেকে আসা তৃণমূলের অভিনয়ে পটু নেতা-নেত্রীরা বিমান বন্দরের বাইরে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন বলে ত্রিপুরার বিজেপি নেতৃত্বের কটাক্ষ।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যাওয়া তৃণমূল প্রতিনিধিদলের ত্রিপুরা সফর শেষ পর্যন্ত ভালভাবে মিটলেও হুঙ্কার দিতে ছাড়েন নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে বাগডোগরা থেকে রওনা দিয়ে কলকাতা বিমানবন্দরে নেমেই মমতা জানতে পারেন, কুণাল-সায়নী-বিরবাহারা আগরতলা বিমানবন্দরের বাইরে ধর্নায় বসেছে। প্রতিক্রিয়ায় মমতা বলেন, “ত্রিপুরায় আমাদের টিমকে প্রিপেইড ট্যাক্সিও নিতে দেওয়া হয় নি। বাধ্য হয়ে আমি হেঁটে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। সে রকম হলে আমিও যাব। দেখি কার কত দম!”
মমতার রাজ্যে আদিবাসী সাংসদ দুর্গতদের ত্রাণ দিতে গিয়ে আক্রান্ত। সাংসদের উপর হামলাকারীরা বিশেষ একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বলে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ। ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পরেও দুষ্কৃতীদের ধরতে ব্যর্থ পুলিশ। তা নিয়ে বাংলার তৃণমূল নেতৃত্বের কোনও আক্ষেপ না থাকলেও ত্রিপুরা নিয়ে উৎকণ্ঠার শেষ নেই। বিষয়টিকে মোটেই ভালভাবে দেখছে না রাজনৈতিক মহল।
Feature Image: NNDC.