দার্জিলিং: পুজো মিটতেই প্রকৃতির রোষে বিপন্ন উত্তরবঙ্গ। এক রাতের অতি ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দার্জিলিং পাহাড়। দার্জিলিং জুড়ে ধসে মৃত ১৭ জন। সবথেকে বেশি বিধ্বস্ত মিরিক এলাকা। শুধু মিরিকেই মাটি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। সুকিয়াপোখরি থেকে ৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বিজনবাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।
শনিবার গভীর রাত থেকে রবিবার ভোর পর্যন্ত প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে। দুর্গতদের উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। এনডিআরএফ-এর জওয়ানদের কাজে লাগানো হচ্ছে। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ধসে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। আরও অনেকের মাটি চাপা পড়ে থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না উদ্ধারকারীরা।
শনিবার রাতে প্রবল জলস্রোতে মিরিকের দুধিয়ায় বালাসন নদীর উপর লোহার সেতুর একটি অংশ ভেঙে পড়লে শিলিগুড়ি ও মিরিকের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শিলিগুড়ি ও দার্জিলিঙের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য এখন একমাত্র অবলম্বন বিপজ্জনক পাঙ্খাবাড়ি রোড। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কেও ধস নেমেছে। ফলে সিকিমের সঙ্গেও সমতলের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পুজোর মরশুম বলে দার্জিলিং পাহাড় পযটকে ছয়লাপ। হঠাৎ দুর্যোগে পর্যটকদের একটা বড় অংশ আটকে পড়েছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দার্জিলিং শহরে থাকা পর্যটকদের হোটেল ছেড়ে না বেরোতে পরামর্শ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

ধসে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামগুলি থেকে দুর্গতদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা। দার্জিলিং জেলার একাধিক জায়গায় ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। পর্যটকেরা ভিড় জমান, এমন বহু স্পট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিস্তা, বালাসন, তোর্ষা, জলঢাকা, রায়ডাক, সংকোশ সহ উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদীতে জলস্তর বেড়েছে। তিস্তা, জলঢাকা রীতিমতো ফুঁসছে। ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে তিস্তার জল উঠে আসায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ।
কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার সকাল থেকেই মুখ্যমন্ত্রী নবান্নের কন্ট্রোল রুমে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার উত্তরবঙ্গে আসবেন মমতা। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আটকে পড়া পর্যটকদের কাছ থেকে হোটেলওয়ালারা যাতে বাড়তি ভাড়া আদায় না করে, তা দেখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পাহাড় ও ডুয়ার্সের জঙ্গলের বন্যপ্রাণীরাও ভারী বৃষ্টি ও হড়পা বানে বিপন্ন। রবিবার সকালে গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন এলাকায় জলঢাকা নদীতে একটি একশৃঙ্গ গণ্ডারকে ভেসে যেতে দেখেন স্থানীয়রা। জঙ্গল থেকে অনেক পশু লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কয়েকটি হরিণকে বনকর্মীরা উদ্ধারও করেছেন।
ভিডিও: পুজো মিটতেই দুর্যোগের কবলে উত্তরবঙ্গ
Video Credit: Infoyana youtube channel.