ডেস্ক রিপোর্ট: পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এখনও গুচ্ছের মামলা ঝুলছে আদালতে। প্রায় রোজই শুনানি চলছে হাইকোর্টের কোনও না কোনও বেঞ্চে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা যাবে না- এমনই নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। আদালতের নির্দেশের কথা জেলা শাসকদের কানে পৌঁছেও দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারপরেও কোন অভিসন্ধি নিয়ে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করে দিল সরকার? জানতে চাইছে বিরোধীরা।
নির্বাচন কমিশনের আদালতকে উপেক্ষা!
প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পঞ্চায়েতের ভোটে নানা অনিয়ম ও গণনায় কারচুপির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ১৭ অগাস্ট। তার আগেই রাজ্যের সব জেলায় বোর্ড গঠনের কাজ সেরে ফেলতে চাইছে নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রী বোর্ড গঠন সংক্রান্ত যে ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া ৮ অগাস্ট থেকে শুরু হয়ে ১৬ অগাস্টের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের আগে নির্বাচন কমিশনকে ফলের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও কীভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করল কমিশন? প্রশ্ন বিরোধীদের।
আদালতের নির্দেশে ফাঁকফোকর খুঁজছে সরকার
রাজ্য নির্বাচন কমিশন ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে সোমবারই বাম-বিজেপির তরফে হাইকোর্টে নতুন মামলা দায়ের হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় বোর্ড গঠনের নোটিশ পাঠাতে শুরু করেছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর। পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের যে বক্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, আইনের ফাঁকফোকর খুঁজছে সরকার। তাই হাইকোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানির আগেই কাজ সেরে ফেলতে তৎপর মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেছেন, “বোর্ড গঠনে আদালতের কোনও নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমার জানা নেই।” কিন্তু আদালতের নির্দেশ যখন বিজয়ী প্রার্থীদের আইনগতভাবে বিজয়ী বলা যাচ্ছে না, তখন চূড়ান্ত ফল ঘোষণার উপরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা না ওঠা পর্যন্ত বোর্ড গঠনের সভায় কারা উপস্থিত থাকবেন? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর রাজ্যের কাছ থেকে পাওয়া যায় নি।
আইনকে ঘুঁটি করে আদালতকে উপেক্ষার পরিকল্পনা
আগামী ১৬ অগাস্টের মধ্যে বোর্ড গঠন করতে না পারলে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত প্রশাসনে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা অবশ্য আছে। মুখ্যমন্ত্রী এটাকে ঘুঁটি করেই আদালতের নির্দেশকে অকার্যকর করার পাঁয়তারা করছেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। পঞ্চায়েত ভোটে আদালতের নির্দেশকে উপেক্ষা করায় রাজ্যের একাধিক ব্লকের বিডিওর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একজনের মাথায় ইতিমধ্যেই শাস্তির খাঁড়া নেমেছে বিচার বিভাগের নির্দেশে। আরও এক জনের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশে তদন্ত চলছে এবং কয়েকজনকে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে।
পঞ্চায়েত বিতর্কে জল ঢালতেই তড়িঘড়ি বোর্ড গঠন
এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের প্রশ্ন, ৬ মাস পঞ্চায়েতে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানোর সংস্থান আইনে থাকার পরেও কেন বোর্ড গঠনে তাড়াহুড়ো লাগিয়েছে সরকার? আদালতকে উপেক্ষা করার পেছনে মমতার মনে কোনও রাজনৈতিক মতলব আছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই বিরোধীদের। দ্রুত বোর্ড গঠন পর্ব মিটিয়ে ফেলে তিনি হয়তো পঞ্চায়েত ভোট সংক্রান্ত যাবতীয় বিতর্কে জল ঢেলে দিতে চাইছেন। অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই নিয়ে আরও একপ্রস্থ আইনি লড়াই শুরু হতে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা।
Feature image/graphic is representational.