নিয়োগ দুর্নীতি থেকে কয়লা পাচার, গরু পাচার থেকে বালি-পাথরের অবৈধ কারবার- রাজ্যে যাবতীয় ঘোটালার আসল সর্দার নাকি এখনও অধরা। সবান্ধবী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে। সকন্যা অনুব্রত তিহাড়ে। কয়লা পাচার কান্ডের অন্যতম অভিযুক্ত বিনয় মিশ্র দেশান্তরে। তাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে ইডি-সিবিআই। কিন্তু বিনয়-পার্থ-অনুব্রতদের একজন বস আছে। তদন্তকারীদের হাত কি সেই কিংপিনের গলা অব্দি কোনও দিন পৌঁছাবে? নাকি প্রায় পৌঁছে গেছে? এই রকম হাজার প্রশ্ন এখন বাংলার সাধারণ মানুষের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনকি হাইকোর্টের বিচারপতিদেরও তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে একই প্রশ্ন। দিন কয়েক আগেই ইডি-সিবিআইয়ের কাছে বিচারপতি অমৃতা সিনহা জানতে চেয়েছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতির মূল পান্ডা ধরা পড়বে নাকি তদন্ত অনন্তকাল চলবে?
কারও মাথা কাছে টেনে আনার সবথেকে সহজ উপায় তার কান ধরে টান মারা। অপরাধের তদন্তে নেমেও এই ফরমুলা কাজে লাগান দুঁদে গোয়েন্দারাও। কালীঘাটের কাকুই কি সেই কান, যা টেনে শেষ পর্যন্ত মাথা ধরতে পারবে ইডি-সিবিআই? কাকু কালীঘাটের বলেই কাকুকে নিয়ে সবার এত কৌতূহল। স্থান মাহাত্ম্য বলে কথা। নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে মানিক, কুন্তল, শান্তনু, সৎ রঞ্জন ওরফে চন্দন মন্ডল, তাপস মন্ডল সহ আরও কতজনই তো গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু মামলার তদন্তকারীদের কাছে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের খাতিরই আলাদা। গত ৩০ মে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ছয়দিন আগেই কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে ১২৬ পাতার ‘সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট’ পেশ করেছে ইডি। ‘ভদ্র’ কাকুর নামে জমা পড়া চার্জশিটে একজন ভাইপোরও নাম যোগ হয়েছে বলে জানা গেছে।
চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে বাজারে অনেক এজেন্ট রিক্রুট করা হয়েছিল বলে ইডি-সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে। কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দন মন্ডল, তাপস মন্ডলের মতো এজেন্টদের ‘বস’ বলা চলে কালীঘাটের কাকুকে। কাকু বয়সে সিনিয়র। চিটিংবাজি সেক্টরে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হেতু কাজে ঘাঘু। তাই তিনি ছিলেন চাকরি বেচা ব্যবসার নেটওয়ার্কের ডিও বা ডেভেলপমেন্ট অফিসারের পদে। বাজারের সব এজেন্টের নাড়িনক্ষত্র নখ দর্পণে রাখতেন কাকু। এজেন্ট রিক্রুট থেকে প্রশিক্ষণ, মোটিভেশন এবং সবশেষে কালেকশন- বিরাট দায়িত্ব ছিল কালীঘাটের কাকুর কাঁধে। তাই কুন্তল, শান্তনু, তাপস সহ যারাই নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হয়েছে, তাদের সবার মুখ থেকেই একটা ‘কমন’ নাম শুনতে পেয়েছেন ইডি-সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা- কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র।
ইডির পেশ করা চার্জশিটে বলা হয়েছে, কুন্তল-শান্তনুদের মতো এজেন্টদের কাছ থেকে আদায় হওয়া কালো টাকা সাদা করতে সবথেকে বড় ভূমিকা রাখেন সুজয়কৃষ্ণ। এখন প্রশ্ন- কার হয়ে এই গুরু দায়িত্ব পালন করতেন কালীঘাটের কাকু? নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় বেনামে যে অঢেল সম্পত্তি বানিয়েছেন কাকু, কোন ভাইপোর তা ভোগে লাগত? চক্রের মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে আরও কতটা সময় লাগবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দুই সংস্থার?
যখন কালীঘাটের কাকুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা পড়ছে, তখনই বাংলার মানুষের কানে আসছে একটা রোমহর্ষক গুঞ্জন- গরু-কয়লা পাচার, নিয়োগ সহ নানা দুর্নীতি থেকে উপার্জিত টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে রাজ্য থেকে মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বিলেতে ভাগলবা! লন্ডন প্রবাসী এক রুশ সুন্দরীর অ্যাকাউন্টে বাংলার টাকা, বাঙালির টাকা। ওহ লাভলি! একদা রুশদেশ থেকে বাঙালি নেতারা বিপ্লব, দিন বদলের স্বপ্ন আমদানি করতেন এখন বাঙালি নেতা স্বজাতির টাকা মেরে রুশ বান্ধবীর কাছে রপ্তানি করছেন। কে সেই রত্নগর্ভা, ধন্য নেতা? তাঁহার নাম জানিতে, তাঁহার নাম শুনিতে জাতি বড়ই উদগ্রীব। থ্রিলার ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছাতে আর কতক্ষণ?
Feature iamge/graphic is representational.