নবান্ন থেকে এক ঘন্টার দূরত্ব! ভাঙড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন ব্যর্থ রাজ্য প্রশাসন? - nagariknewz.com

নবান্ন থেকে এক ঘন্টার দূরত্ব! ভাঙড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কেন ব্যর্থ রাজ্য প্রশাসন?


বিশেষ প্রতিবেদন: নামে দক্ষিন ২৪ পরগনার মধ্যে পড়লেও নিউটাউন সংলগ্ন ভাঙড় আসলে কলকাতার অংশ। নবান্ন থেকে র‌ওনা দিলে ভাঙড়ে পৌঁছাতে এক ঘন্টার বেশি সময় লাগে না। সেই ভাঙড়ের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ প্রশাসন! সারা বছর‌ই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ভাঙড় সংবাদ শিরোনামে রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে ভাঙড় থেকেই উঠে আসে তৃণমূলের তাজানেতা আরাবুল ইসলাম। এইট পাশ যে আরাবুল কলেজের অধ্যক্ষকে জলের জাগ ছুঁড়ে মেরে দলের মধ্যে নিজের ‘ওয়েট’ বাড়িয়ে নিয়েছিল। ভাঙড়ের জায়গিরদারি নিয়ে তৃণমূলের দুই নেতা আরাবুল ইসলাম ও শ‌ওকত মোল্লার মধ্যে সারা বছরই বাওয়াল লেগে থাকে। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এ যাবৎ ভাঙড়ে কম লোকের সর্বনাশ হয় নি। কতবার বোমা পড়েছে, গুলি চলেছে হিসেব নেই। জীবিত মানুষ লাশ হয়ে গেছে। কতজনের হাতপা উড়ে গেছে। বাড়িঘরে হামলা হয়েছে। কিন্তু ভাঙড় আছে ভাঙড়েই।

ভাঙড়ে বহুদিন থেকেই তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরছে। একুশে ফুরফুরা শরীফের পীর খানদানের তিরিশ বছরের ছেলে নওশাদ সিদ্দিকি টিএমসি-র রেজাউল করিমকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করে ভাঙড়ের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে ভাঙড়ে ন‌ওশাদের আইএস‌এফ-এর সঙ্গে তৃণমূলের মারামারি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ে যে কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়বে না, তা প্রশাসনের অজানা নয়। কিন্তু তারপরেও ভাঙড়কে দুর্বৃত্তদের হাতে ছেড়ে দিয়ে কীভাবে নিশ্চিন্তে বসেছিল পুলিশ? পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে রাজ্যের বহু জায়গাতেই গন্ডগোল চলছে কিন্তু সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতেই সংঘর্ষের তীব্রতা বেশি। মনোনয়ন শুরুর দিন থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের তিনটি স্থানে হিংসায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনটিই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। মৃত চারজন‌ এবং যাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ, তারা সকলেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।

কলকাতার কন্ঠলগ্ন ভাঙড়কে বাগে আনতেই যে প্রশাসন ব্যর্থ, তারা মুর্শিদাবাদের ডোমকল কীভাবে ঠান্ডা করবে? খুব সম্ভবত রাজ্যের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলির আইনশৃঙ্খলার ভার আল্লার ওয়াস্তে ছেড়ে দিয়ে বসে থাকেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। এর বাইরে হয়তো আর কিছু করার‌ও নেই তাঁদের। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন শুরুর দিন থেকেই ভাঙড়ের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। বোমা পড়ার বহর দেখলে মনে হয় যেন রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র। ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত যথেচ্ছ বোমাবাজি চললেও লাশ পড়ে নি। জখমেই সীমাবদ্ধ ছিল সংঘর্ষ। কিন্তু সপ্তম তথা শেষ দিনে ভাঙড়ের রণক্ষেত্রে লাশ পড়ল দুটি। পুলিশের দিক থেকে সংখ্যার কমতি ছিল না। থাকার কথাও নয়।‌ কারণ মনোনয়ন পেশের অন্তিম দিনে ভাঙড় যে ভয়াবহ উঠতে পারে, এই তথ্য নবান্নের কাছে ছিল। তারপরেও আইএস‌এফ প্রার্থীদের মনোনয়ন পেশ ঠেকাতে যখন ভাঙড়ের দু’টি ব্লক অফিস ঘিরেই বৃষ্টির মতো বোমা পড়তে লাগল, তখন থামের আড়ালে লুকিয়ে‌ই আপন আপন কর্তব্য সম্পন্ন করলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষার শপথ নেওয়া সশস্ত্র উর্দিধারীরা। সংঘর্ষে মহম্মদ মহিউদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএস‌এফ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলির আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে। রশিদ মোল্লা নামে আরও একজন মারা গেছে। রশিদের শরীরে তিনটি বুলেট লেগেছে। তৃণমূলের দাবি, রশিদ তাদের লোক।

এই ঘটনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হল- কলকাতা পুলিশের অধীনে থাকা ভাঙড় বোমাগুলির স্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশকে বোমা, বিস্ফোরক, কার্তুজ ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ কতটা অপারগ, বৃহস্পতিবারের ভাঙড় তার প্রমাণ। ভাঙড় জ্বলল। ভাঙড়ে মানুষ মরল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যতটা রাজনীতি খুঁজে পাওয়া গেল ততটা উদ্বেগ নয়। নির্বিকার মুখ্যমন্ত্রীর হাতে কেউ একটা বেহালা তুলে দিন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *