ডেস্ক রিপোর্ট: স্বাধীনতার পর ভারতীয় রেলের ইতিহাসে যতগুলি ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরে শুক্রবার সন্ধ্যার আপ করমন্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাও স্থান পাবে। সরকারি মতেই মৃতের সংখ্যা ২৬০ ছাড়িয়ে গেছে। আহত ৬৫০-এর বেশি। নিহতের সংখ্যাত ৩০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলেও উদ্ধারকর্মীদের আশঙ্কা। এদিকে দুর্ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে কারও কারও দাবি, বালেশ্বরের বাহানগা বাজার এলাকায় দ্রুতগতিতে ছুটে চলা করমন্ডল এক্সপ্রেস মালগাড়ির পিছনে ধাক্কা মারায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় মালগাড়িকে পেছন থেকে করমন্ডলের ধাক্কা মারার ঘটনা সত্য নয় বলে উড়িয়ে দিয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষ। যদিও শনিবার বিকেলে রেলের যৌথ পরিদর্শক দলের প্রাথমিক রিপোর্টে ধাক্কা মারার তত্ত্বকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ত্রুটির কারণেই আপ করমন্ডল এক্সপ্রেস আপ মেইন লাইনে না ঢুকে লুপ লাইনে ঢুকে পড়েছিল বলে যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে। আপ মেইন লাইনে না ঢুকে করমন্ডল এক্সপ্রেস ঢুকে পড়েছিল লুপ লাইনে। লুপ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল খড়্গপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি মালগাড়ি। করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালগাড়িটিকে পেছন থেকে ধাক্কা মারলে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। যৌথ পরিদর্শক দলের প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, “আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া থাকলেও করমন্ডল এক্সপ্রেস সেই লাইনে ঢোকে নি।” এখন করমন্ডলের চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করে লুপ লাইনে ট্রেন নিয়ে গিয়েছিলেন নাকি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিগন্যাল সবুজ হয় নি, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
একই সময় ঘটনাস্থলের ডাউন লাইন দিয়ে হাওড়া অভিমুখে যাচ্ছিল বেঙ্গালুরু-হাওড়া যশবন্তপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। ডাউন লাইনে করমন্ডলের বগি ছিটকে পড়ায় বগিগুলির সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের দুটি বগিও লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। তবে যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের কোনও যাত্রীর মৃত্যু হয় নি। যশবন্তপুরের লাইনচ্যুত বগিদুটিকে ঘটনাস্থলে রেখে শনিবার দুপুরে ট্রেনটি গন্তব্য হাওড়ায় ফিরে আসে।
২৩ কামরার করমন্ডল এক্সপ্রেসের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনটির গতি যথেষ্টই বেশি ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে করমন্ডলের শক্তিশালী ইঞ্জিন মালগাড়ির উপরে উঠে গেছে। ১৫ টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ডাইনে-বায়ে ছিটকে পড়ে। একাধিক কামরা দুমড়েমুচড়ে গেছে। কয়েকটি বগি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। গুরুতর আহতদের ২ লক্ষ টাকা এবং সামান্য আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছেন। বালেশ্বর হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওড়িশায় রওনা দেওয়ার আগে সকালে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান দিল্লিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেছেন নরেন্দ্র মোদী। দুর্ঘটনার পিছনে গাফিলতি থাকলে কেউ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা খুবই দুঃখজনক ও গুরুতর ঘটনা। আহতদের চিকিৎসায় কোনও খামতি রাখবে না সরকার। পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।”
Feature Image Source- Collected.