শুভেন্দু অধিকারীকে টেনে ফের বেফাঁস কথা কুন্তলের মুখে! আড়ালে বসে কে খেলাচ্ছেন কুন্তলকে? - nagariknewz.com

শুভেন্দু অধিকারীকে টেনে ফের বেফাঁস কথা কুন্তলের মুখে! আড়ালে বসে কে খেলাচ্ছেন কুন্তলকে?


বুদ্ধিমানরা মৌন থাকেন অথবা ভেবে-চিন্তে কথা বলেন। পোড় খাওয়া পার্থ-মানিক যখন সাংবাদিকদের বিতর্কিত প্রশ্নের জবাব সাবধানে এড়িয়ে যাচ্ছেন তখন বারেবারে কেন বেফাঁস বলছে অর্বাচীন কুন্তল ঘোষ?

বিশেষ প্রতিবেদন: নিয়োগ দুর্নীতিকান্ডে ধৃত যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের মুখে কথা জোগাচ্ছেন কে? কুন্তলের লেখা এক চিঠির জেরে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও শেষ পর্যন্ত রেহাই পান নি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআই-এর মুখোমুখি অভিষেককে বসতেই হয়েছে। ‘কালীঘাটের কাকু’ এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর খাঁচায় বন্দী। জনমহলে জোর গুঞ্জন, কান টানলে মাথা আসে। তবে কি এবার সত্যিই মাথা ধরে টান দেবেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা? কালীঘাটের কাকু সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে কাজ করেন। ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে তোলা টাকার হিস্যা নিয়ে কুন্তল ও কাকুর মধ্যে লেনদেন হয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেছে ইডি। সুজয়কৃষ্ণকে ৭০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা জেরায় স্বীকার করেছে কুন্তল ঘোষ। আদালতে এমন‌ই দাবি ইডির। সেই টাকা কালীঘাটের কাকুর হাত ঘুরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছে বলেও আদালতকে জানিয়েছেন ইডির তদন্তকারীরা।

কালীঘাটের কাকু গ্রেফতার হ‌ওয়ার পর যখন রাজ্য জুড়েই ফিসফাস, অবশেষে নাটক বুঝি ক্লাইমেক্সের দিকে পৌঁছাচ্ছে, তখন ফের আদালতে যাওয়ার পথে মুখ খুলল কুন্তল। কুন্তল ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছে, “ইডি বিজেপির ক্যাডার হয়ে কাজ করছে। ইডির বস শুভেন্দু অধিকারী!” বিরোধী দলনেতার ফোন পরীক্ষা করার দাবি জানিয়ে কুন্তল বলে, “৩০ মে তিনি ( শুভেন্দু অধিকারী) কতবার ইডি আধিকারিকদের কল করেছেন, তা তাঁর ফোন চেক করে দেখা হোক।” গত ২১ জানুয়ারি কুন্তল ঘোষকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। যে লোকটা চারমাস জেলের ভেতরে, তার কাছে শুভেন্দু কত তারিখে কার সঙ্গে কতবার ফোনে কথা বললেন, এই ডিটেইলস পৌঁছাল কীভাবে? উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এই প্রশ্নের সদুত্তর না দিয়েই আদালতের দিকে র‌ওনা দেয় কুন্তল।

রাজনৈতিক মহল বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, নিয়োগ দুর্নীতিকান্ডে ফেঁসে গিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সহ আরও অনেক হেভিওয়েট‌ই জেলের ডাল-রোটি খাচ্ছেন কিন্তু কুন্তলের মতো বেফাঁস কথা আর কারও মুখ দিয়েই বেরোচ্ছে না। এর আগে আদালত ও হেস্টিংস থানার পুলিশকে চিঠি লিখে কুন্তল ঘোষ অভিযোগ করেছিল,”নিয়োগ দুর্নীতিকান্ডে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম নিতে তাকে জোর করছে ইডি-সিবিআই।” শহিদ মিনারের সভায় কুন্তলের কথায় সায় দিয়ে ফেঁসে যান অভিষেক। হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে শেষ পর্যন্ত সিবিআই-এর জেরার মুখে পড়তে হয়। সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও রেহাই মেলে নি। ২০ মে টানা নয়ঘন্টা অভিষেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই-এর আধিকারিকেরা। কুন্তলের চিঠিতে নাম না থাকলে এত দ্রুত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর জেরার মুখে পড়তে হত না বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা। রাজনৈতিক মহলের এটাও প্রশ্ন, চিঠি কি কুন্তল নিজের বুদ্ধিতে লিখেছিল না অন্য কেউ তাকে লিখতে প্ররোচনা দিয়েছিল? ঠিক একইভাবে প্রশ্ন উঠেছে কুন্তলের শুক্রবারের অভিযোগ নিয়েও। প্রশ্ন একটাই- কুন্তল নিজে থেকেই এতসব বলল না অন্যের শেখানো বুলি নিজের মুখ দিয়ে বলতে বাধ্য হল?

বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু অধিকারী সহ বিরোধী নেতাদের জড়িয়ে সিবিআই-এর কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল সারদা মামলায় জেলবন্দী সুদীপ্ত সেন। বিরোধীদের কার‌ও কার‌ও দাবি, জেলে থাকা সুদীপ্ত সেনকে দিয়ে যিনি সিবিআই-এর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখিয়েছিলেন, তিনিই টাইম টু টাইম চাপ দিয়ে কুন্তলের মুখ খোলাচ্ছেন। এইসব বিটলা বুদ্ধি তৃণমূল শিবিরের কার মাথা থেকে আসতে পারে তা অনেকেই অনুমান করতে পারছেন। তাঁর মনে কী আছে। তিনি ঠিক কী চান, এটাই একটা রহস্য। কুন্তলের চিঠি ‘ব্যাকফায়ার’ করেছে। তাতে কে ঘায়েল হয়েছেন, তা সবাই দেখতে পারছে। কুন্তল ঘোষের শুক্রবারের মন্তব্য নিয়েও চর্চা শুরু হয়ে গেছে। বিরোধী দলনেতা কার সঙ্গে কী ফোনালাপ করেন, তা কারোরই জানার কথা না। শুধু শুভেন্দুর ফোন নিয়ে করা কুন্তলের মন্তব্যের কারণেই জল অনেক দূর পর্যন্ত ঘোলা হ‌ওয়ার সম্ভাবনা। কুন্তলকে ফের সিবিআই হেফাজতে নিয়ে জেরা করার দাবি উঠতে পারে। কে বা কারা কুন্তলকে দিয়ে চিঠি লিখাচ্ছেন, বিতর্কিত মন্তব্য করাচ্ছেন, তা অনুসন্ধানের দাবিও করতে পারে বিজেপি।

বুদ্ধিমানরা মৌন থাকেন অথবা ভেবে-চিন্তে কথা বলেন। পোড় খাওয়া পার্থ-মানিক যখন সাংবাদিকদের বিতর্কিত প্রশ্নের জবাব সাবধানে এড়িয়ে যাচ্ছেন তখন বারেবারে কেন বেফাঁস বলছে অর্বাচীন কুন্তল ঘোষ? কুন্তলকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করা সহজ বলেই কি তার মুখ দিয়ে বাজার গরম করা কথা বলিয়ে নিচ্ছেন অতিধূর্ত কেউ? পর্দার পেছনে থাকা সেই ধূর্ত শেষ পর্যন্ত কাকে বাঁশ দিতে চান, এটা জানার জন্য আমাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয়।

Feature Image is Representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *