সম্পাদকীয়
একটা ব্যাপার মানতে হবে তৃণমূলের মর্দ নেতারা সাচ্চা মর্দ। নারী ঘটিত ব্যাপারে তাঁদের কোনও লুকোছাপা, লাজলজ্জা নেই। উপপত্নী, বান্ধবী, রক্ষিতা- সঙ্গের নারীটি সম্পর্কে যাই হোক, তৃণমূলের নেতারা ডঙ্কা বাজিয়ে চলেন। মদন-শোভন-বালুদের এই স্কুলিংটা কে করিয়েছেন, সেটা জানার একটা কৌতূহল থাকল। জেল ফেরত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গলার তেজ দেখছি জেল পূর্ব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের থেকেও চড়া। জেলের ভাতের গুণ আছে মানতে হবে। অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে পার্থও লুকোছাপা কিছু করেন নি। বলেছেন, কারও দুটো বউ থাকতে পারলে আমার একটা বান্ধবী থাকতে পারে না! বোঝাই যাচ্ছে ইঙ্গিতটা কোন মহাজনের দিকে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই সাহসিকতা ও স্বীকারোক্তি প্রশংসার দাবি রাখে।
তবে পাশ্চাত্যের মানদণ্ডের নিরিখে একটি কিন্তু আছে। ইউরোপ-আমেরিকায় রাষ্ট্রীয় পদাধিকারীদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নাগরিকদের মাথাব্যথা নেই। সেখানে বান্ধবী, সঙ্গিনী প্রভৃতি রাখার জন্য কোনও মন্ত্রীর পদ যায় না। ইউরোপ-আমেরিকার জনগণ দেখে, প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টাররা বউ হোক আর বান্ধবী, তাকে পদের ক্ষমতা খাটিয়ে কোনও ফেভার পাইয়ে দিয়েছে কিনা। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের গাঁটের কড়ি গচ্চা দিয়ে তাঁর কোনও বান্ধবীকে এমনকি কোনও যৌনকর্মীকে দশ লক্ষ ডলারের নেকলেস কিনে দিলেও আমেরিকায় সেটা কোনও ইস্যু নয়। কিন্তু ট্রাম্প যদি প্রেসিডেন্টের প্রভাব খাটিয়ে বান্ধবীকে কোনও সুবিধা পাইয়ে দেন, তবে আমেরিকার জনগণ ট্রাম্পের প্যান্ট হাঁটুর নিচে নামিয়ে ছাড়বে।
পশ্চিম ইউরোপের রাজনীতিতেও একই কথা। তুমি প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী যাই হও না কেন, পদাধিকার বলে তুমি যেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভোগ কর, তা দিয়ে তুমি তোমার বউ-বাচ্চা-বান্ধবী কাউকেই খুশি করতে পারবা না। কাজেই অর্পিতার খাটের তলা থেকে যে পঞ্চাশ-ষাট কোটি টাকা নগদ উদ্ধার হয়েছে, সেই টাকা যদি পার্থ তাঁর বান্ধবীকে নিজের অথবা বাপের সম্পত্তি বেচে দিয়ে থাকে, তবে কোনও কথা ছিল না। কিন্তু পার্থ চট্টোপাধ্যায় তো নিজের বৈধপথে উপার্জনের টাকা বান্ধবীর খাটের তলায় রাখেন নি। তিনি শিক্ষামন্ত্রীর পদে থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চাকরি বেচে বান্ধবীর গয়না গড়িয়ে দিয়েছেন। গাড়ি-ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। নগদ পঞ্চাশ-ষাট কোটি টাকা বান্ধবীর ফ্ল্যাটে মজুত করেছেন।
আমেরিকা বা পশ্চিম ইউরোপের কোনও মন্ত্রী এই রকম দুর্নীতি করে জেলে গেলে, জেল থেকে ফিরে আসার পর লজ্জায় মুখ দেখাতেন না, নিভৃতে বাস করতেন। আমরা ভারতীয়রা নীতি-নৈতিকতার বড় বড় বুলি ঝাড়ি। কিন্তু আমাদের যে আসলে গন্ডারের চামড়া, আমাদের মধ্যে যে কোনও মনস্তাপ, অনুশোচনা, কোনও অপরাধবোধ (Guilt) নেই, জেল ফেরত পার্থ চট্টোপাধ্যায় তার প্রমাণ। লোকটা শুয়োরের মতো ঘোঁত ঘোঁত করতে করতে চ্যানেলের পর চ্যানেলে বাইট দিয়ে যাচ্ছে।
আরে বাহাত্তুরে নির্লজ্জ বুড়ো, তুই কার সঙ্গে শুয়েছিস, কে তোর বান্ধবী, এটা কোনও বিচার্য বিষয়ই না। কিন্তু আজকে তোদের করা নিয়োগ দুর্নীতির জেরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা, বাংলা মাধ্যম সরকারি স্কুলের পড়ালেখা সম্পূর্ণ তছনছ হয়ে গেছে। নাগরিক হিসেবে আমরাও যে অসভ্য, অপদার্থ, বেহায়া তার প্রমাণ আমরা এই ধরণের ইন্টারভিউগুলোকে কালেক্টিভলি এন্টারটেইন করছি। শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরেও যে জাতির হুঁশ হয় না, সেই জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
Feature image is representational and AI created.