ডেস্ক রিপোর্ট: ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে বিস্তর দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের জন্য প্রকল্পের বরাদ্দ আটকে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। এই নিয়ে মামলা হওয়ায় গত ১৮ জুন কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধানবিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতে হবে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট গিয়েছিল কেন্দ্র, তবে হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখল দেশের শীর্ষ আদালত।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি বিক্রম নাথ ও বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ কেন্দ্রীয় সরকারের আর্জি খারিজ করে দেয়। কেন্দ্র চেয়েছিল, ১৮ জুন দেওয়া হাইকোর্টের রায় পুনর্বিবেচনা করুক সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু এদিন শুনানির শুরুতেই কেন্দ্রের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বিচারপতিদ্বয় কেন্দ্রীয় সরকারের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “আপনারা মামলাটি তুলে নেবেন, নাকি আমরাই খারিজ করে দেবো?” পরে মামলাটি খারিজই করে দেয় দুই বিচারপতির বেঞ্চ।
রাজ্যে একশ দিনের কাজ নিয়ে ভুঁড়ি ভুঁড়ি অভিযোগ। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পাঠানো অনুসন্ধানী দল একাধিকবার বাংলায় অনুসন্ধানে এসে পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে ঘুরে ১০০ দিনের কাজের মজুরি বন্টনে অজস্র গড়মিল খুঁজে পায়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে এই খাতে বাংলার জন্য আর নতুন করে কোনও বরাদ্দ মঞ্জুর করে নি কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের অডিটে কী ধরা পড়েছে? ধরা পড়েছে এটাই, ১০০ দিনের কাজের টাকার যাঁরা প্রকৃত প্রাপক, তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা না ঢুকিয়ে ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে। এইভাবে কয়েক শত কোটি টাকা নয়ছয় হয়েছে বলে অভিযোগ।
১০০ দিনের কাজ নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, তা অস্বীকার করতে পারে নি রাজ্য সরকারও। কেন্দ্রের চাপের মুখে দুর্নীতি বন্ধে একাধিক কড়া পদক্ষেপ করতেও বাধ্য হয়েছে রাজ্য। যদিও রাজ্যের ব্যবস্থায় তুষ্ট হতে পারে নি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তাই তিন বছর ধরে ১০০ দিনের প্রকল্পে রাজ্যকে টাকা দেয় নি কেন্দ্র। টাকা আটকে থাকায় গ্রামে গ্রামে ১০০ দিনের কাজ থমকে যায়। এই প্রকল্প বন্ধ থাকায় বাংলায় প্রকল্পের সুবিধাভোগীরা নিঃসন্দেহে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে মোদী সরকারকেই বারেবারে কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা। মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার গ্রামের মানুষকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছে।
চার বছর ধরে রাজ্যে ১০০ দিনের প্রকল্প বন্ধ থাকায় হাইকোর্টে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেতমজুর সমিতি। হাইকোর্ট সব শুনে গত ১৮ জুন কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল, “দুর্নীতি রুখতে রাজ্য সরকারকে যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র কিন্তু ১০০ দিনের কাজ আবার শুরু করতেই হবে।” ১ অগাস্ট থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ পুনরায় চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। রায় দিতে গিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, “১০০ দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত অভিযোগ ২০২২ সালের আগের। সে সব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নিক। কিন্তু গরীব সুবিধাভোগীদের কথা মাথায় রেখে এখন প্রকল্পটি আবার চালু করা হোক।”
১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা আটকে রাখায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তৃণমূল। বঞ্চিতদের নিয়ে দিল্লিতে ধর্নাও দিতে গিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি থেকে ফিরে পাঁচ দিন ধরে কলকাতায় রাজভবনের সামনেও ধর্নাতে বসেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়ের উপর হস্তক্ষেপ না করায় এখন রাজ্যের হাতে ১০০ দিনের কাজের টাকা তুলে দিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে।