চড়া ফি চাপিয়ে 'এইচ–১বি' ভিসা প্রায় তুলেই দিলেন ট্রাম্প! বিপদ বাড়ল আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের

চড়া ফি চাপিয়ে ‘এইচ–১বি’ ভিসা প্রায় তুলেই দিলেন ট্রাম্প! বিপদ বাড়ল আমেরিকায় কর্মরত ভারতীয়দের


‘এইচ-১বি’ ভিসা হল সবথেকে জনপ্রিয় অ-অভিবাসী মার্কিন ভিসা। এর মাধ্যমে আমেরিকান সংস্থাগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের দক্ষ কর্মীদের আমেরিকায় এসে তাদের সংস্থায় কাজ করার সুযোগ দিয়ে থাকে। বিশেষত মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ‘এইচ-১বি’ ভিসার মাধ্যমে অন্য দেশের তথ্যপ্রযুক্তির সেরাদের নিজেদের কোম্পানিতে নিয়োগ করার সুযোগ পায়। আমেরিকান কোম্পানি ও মার্কিন ভিসা প্রত্যাশী বিদেশি দক্ষ কর্মী- উভয়েই ‘এইচ-১বি’ ভিসা থেকে লাভ তোলেন। কিন্তু ট্রাম্প যে চড়া মূল্য চাপালেন, তারপর আর কোন সংস্থা ‘এইচ-১বি’ ভিসায় বিদেশি কর্মী নিয়োগের সাহস করবে!

‘এইচ-১বি’ ভিসার উপর ট্রাম্পের নতুন নীতি লাগু হলে নিঃসন্দেহে সবথেকে অসুবিধায় পড়বেন আমেরিকান ভিসা প্রত্যাশী ভারতীয়রা। যে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা বিভিন্ন মার্কিন সংস্থায় বর্তমানে কর্মরত, তাঁদের অধিকাংশই এই ভিসায় আমেরিকায় গিয়েছেন। ২০২৪ সালে আমেরিকা যত ‘এইচ-১বি’ ইস্যু করেছিল, তার ৭১ শতাংশ‌ই পেয়েছিলেন ভারতীয়রা। এরপরেই চিন। মোট ১১.৭ শতাংশ চিনা ‘এইচ-১বি’ ভিসা পেয়েছিলেন। সংখ্যার হিসেবে চার থেকে সাড়ে চার লক্ষ ভারতীয় ‘এইচ-১বি’ ভিসায় আমেরিকার বিভিন্ন কোম্পানিতে কাজ করছেন।

হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ভিসা সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনামায় স্বাক্ষর করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংগৃহীত ছবি

ভিসা নীতি কঠোর করে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বার্তাটি দিতে চাইছেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক তা খোলসা করেছেন। লুটনিক আমেরিকান সংস্থাগুলির মালিকদের উদ্দেশে বলেছেন, “আপনি যদি কাউকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে চান, তবে আমেরিকানদের‌ই প্রশিক্ষণ দিন। আর আপনি যদি দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার বিদেশ থেকে আনতে চান, তাহলে ‘এইচ–১বি’ ভিসার জন্য বছরে ১ লক্ষ ডলার জমা দিন।’‌ ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্দেশ্য খুব পরিস্কার- তারা চায় না, আমেরিকার কর্মক্ষেত্রে বিদেশিদের সংখ্যা বাড়ুক এবং এর ফলে আমেরিকানরা কাজের সুযোগ হারাক।

শুক্রবার ঘোষিত ট্রাম্পের ভিসা নীতিতে আরও কয়েকটি নতুন জিনিস যোগ হয়েছে। গোল্ড ও প্ল্যাটিনাম ভিসা চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনও বিদেশি আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাসে ইচ্ছুক হলে তাঁকে ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার দিয়ে ‘গোল্ড কার্ড’ কিনতে হবে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার‌ও বেশি। ‘প্ল্যাটিনাম কার্ড’ আরও মহার্ঘ। ‘প্ল্যাটিনাম কার্ড’ পেতে কোনও বিদেশিকে ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার গুনতে হবে, ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪৪ কোটি টাকারও বেশি। এত বিপুল অর্থের বিনিময়ে ‘প্ল্যাটিনাম কার্ড’ কিনে একজন অভিবাসী বছরে মাত্র ২৭০ দিন আমেরিকায় থাকতে পারবেন!

অভিবাসীদের জন্য আমেরিকার দরজা বন্ধ করতেই ট্রাম্প প্রশাসন ভিসা নীতিতে এত বড় পরিবর্তন আনল বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। ট্রাম্প একদিকে চাইছেন ভিসা কঠোর করে অভিবাসন ঠেকাতে, আরেক দিকে চাইছেন ভিসা বেচে কোষাগারে কোটি কোটি ডলার ঢোকাতে। ভিসা সংক্রান্ত নির্দেশনামায় স্বাক্ষরের পর উৎফুল্ল ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মনের কথা গোপন রাখেন নি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, “আমেরিকান করদাতারা বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে লাভবান হতে চলেছেন। আমার মনে হয় এটা দারুণভাবে সফল হবে। এটা কয়েক কোটি ডলার আনতে চলেছে। ফলে আমেরিকানদের উপর করের বোঝা কমবে আর ভাল কাজ হবে।”

আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত ভারতীয়দের বড় অংশই ‘এইচ-১বি’ ভিসাধারী। সংগৃহীত ফটো

ট্রাম্পের নতুন ভিসা নীতি চালু হয়ে গেলে অভিবাসন তো দূরের কথা বিদেশিদের জন্য আমেরিকায় ঢোকাই কঠিন হয়ে পড়বে। তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ ভারতীয়দের বড় অংশের স্বপ্ন ‘এইচ–১বি’ ভিসায় আমেরিকায় পা দিয়ে বড় কোনও কোম্পানিতে চাকরি। ট্রাম্পের নির্দেশিকা তাঁদের বজ্রাহত করার জন্য যথেষ্ট। নতুন করে ‘এইচ–১বি’ ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা তো র‌ইল‌ই না এমনকি এই ভিসায় বর্তমানে যে ভারতীয়রা আমেরিকায় কর্মরত, তাঁরাও বিপদে পড়লেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বহু ‘এইচ–১বি’ ভিসাধারীকে আমেরিকা ছাড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা।

ট্রাম্পের নির্দেশ নিয়ে স্বস্তিতে নেই মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যাপেল এবং মেটার মতো টেক জায়ান্টরাও। ভারত ও চিনের মতো দেশ থেকে তুলনায় সস্তায় দক্ষ কর্মী নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে এই আমেরিকান সংস্থাগুলি। আমেরিকার মেধাভিত্তিক কর্মক্ষেত্রগুলিতে বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে ভারতীয় মেধাবীদের আধিপত্য দিন দিন চোখে পড়ার মতোই বাড়ছে। ভারতীয়দের ঠেকাতেই কি ভিসা নিয়ে এত কড়াকড়ি করলেন ভারত বিদ্বেষী হয়ে ওঠা ডোনাল্ড ট্রাম্প?


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *