শ্রদ্ধাঞ্জলি: হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু। গল্পকাহিনী নয়, সত্য ঘটনা। ১৯০৮ সালের ১১ অগাস্ট ভোর ছ’টায় মুজফ্ফরপুর জেলে ফাঁসি হয়েছিল ক্ষুদিরামের। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন! ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধে কনিষ্ঠতম শহিদ বাঙালি ক্ষুদিরাম।
মৃত্যু ভয়কে জয় করা সহজ নয়। কিন্তু ভারতের বিপ্লবীরা তা জয় করেছিলেন। প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু উদাহরণ। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল রাতে বিহারের মুজফ্ফরপুরে বোমা মেরেছিলেন এই দুই বিপ্লবী। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, অত্যাচারী ইংরেজ বিচারক ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যা করা।
ভুলক্রমে বোমা পড়ে মিস ও মিসেস কেনেডির গাড়িতে। তাঁরা মারা যান। পরদিন অর্থাৎ পয়লা মে সকালে ঘটনাস্থল থেকে ২৫ মাইল দূরে ওয়াইনি স্টেশনে ধরা পড়ে যান ক্ষুদিরাম। ২ মে তারিখে মোকামা স্টেশনে ধরা পড়ার মুহূর্তে নিজের রিভলবারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন প্রফুল্ল চাকী।
বিচারশালায় কাঠগড়ায় নির্বিকার ক্ষুদিরামকে দেখে অবাক হয়ে যেতেন বিচারক ও উকিলেরা। মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত। কিন্তু আঠারো বছরের ছেলেটির মনে বিন্দুমাত্র ভয়ডর নেই। আশ্চর্য হয়ে এক উকিল ক্ষুদিরামকে বললেন, “তোমার ভয় করে না?” ক্ষুদিরামের জবাব, “কেন ভয় করবে? আমি গীতা পড়েছি।”
ফাঁসির হুকুম হয়ে যাওয়ার পরেও ক্ষুদিরাম ছিলেন অচঞ্চল! রায় শুনে হেসে দেন ক্ষুদিরাম। মুজফ্ফরপুর সেশন কোর্টের বিচারক কর্নডেজ ভাবলেন বাচ্চা ছেলে, নিজের চরম পরিণতির কথা বুঝতে পারছে না। তিনি আবার ক্ষুদিরামকে প্রশ্ন করলেন, তুমি বুঝতে পেরেছো তো, তোমার ফাঁসি হবে? ক্ষুদিরাম আবার হেসে জবাব দেন, হ্যাঁ, বুঝেছি।
ব্রিটিশের আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধের কনিষ্ঠতম আত্মবলিদানকারী বিপ্লবী বাঙালি ক্ষুদিরাম বসু। ছবি: আর্কাইভ
ফাঁসির আগের রাতে জেলার ক্ষুদিরামের কাছে জানতে চাইলেন, তোমার শেষ ইচ্ছা কী? ক্ষুদিরাম বললেন, “বোমা তৈরির কৌশল দেশবাসীকে শিখিয়ে দিতে চাই।” ফাঁসির মঞ্চে উঠে গেছেন ক্ষুদিরাম। ফাঁসুড়ে যমটুপি পরাতে যাবে। ক্ষুদিরাম ফাঁসুড়ের কাছে জানতে চাইলেন, “আচ্ছা, ফাঁসির দড়িতে মোম কেন মাখানো হয়?” কয়েক মুহুর্ত পরেই যাঁর মৃত্যু, তাঁর মুখে এই কথা শুনে জল্লাদ নিজেই স্তম্ভিত।
ফাঁসির সময় উপস্থিত ছিলেন ক্ষুদিরাম বসুর আইনজীবী মোহিনীমোহন চট্টোপাধ্যায়। পুরো ঘটনার সাক্ষী ছিলেন তিনি। মোহিনীমোহনের মুখ থেকেই পরবর্তীকালে বাঙালি জানতে পারে, তাদের ক্ষুদিরাম হাসতে হাসতেই ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন। মৃত্যুর মুহূর্তে তাঁর মুখে ছিল গীতার শ্লোক এবং তিনি বলেছিলেন, দেশের জন্য মরতে পারা গৌরবের।
প্রফুল্ল চাকী, ক্ষুদিরাম বসু মরে প্রমাণ করেছিলেন বাঙালি মরতে ভয় পায় না। এরপর থেকেই মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হল বলিদান…। আর যে বাঙালিরা এখন বলে, ক্ষুদিরাম বাড় খেয়ে ফাঁসিতে ঝুলেছে, তারা আসলে জারজ। তারা বেজন্মা।
শহিদ ক্ষুদিরাম বসুর উপরে দুটি শর্টস ভিডিও দেখে নিন-