The Bengal Files: বিতর্ক যত চড়বে, মানুষের দেখার আগ্রহ তত বাড়বে

The Bengal Files: বিতর্ক যত চড়বে, মানুষের দেখার আগ্রহ তত বাড়বে


দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস: বাবাকে খুন করেছে। শিশুকেও রেহাই দেয় নি নরপিশাচের দল।

বিবেকের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আপনার অবশ্যই আছে। কিন্তু বিবেক কেন গুজরাট ফাইলস বানালেন না, কেন মণিপুর ফাইলস বানালেন না, বিবেকের কাছে এই কৈফিয়ত চাওয়া নিতান্তই ছেলেমানুষী এবং চাওয়াটার মধ্যেও রাজনীতি আছে। দ্যাখেন, জগতে কেউ সাধু না, নিরপেক্ষ না। বিবেক তো বিবেকের মতো করেই ফিল্মের বিষয়বস্তু চয়ন করবেন এবং ফিল্ম বানানোর সময় নিজের মতো করেই ন্যারেটিভ সাজাবেন। ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ বানানোর পেছনে বিবেকের পলিটিক্যাল মোটিভ‌ও থাকতে পারে। পলিটিক্যাল মোটিভ থাকা কোনও অপরাধ নাকি!

উৎপল দত্ত অত্যন্ত উঁচুদরের একজন পেশাদার শিল্পী ছিলেন। তিনি অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি কমার্শিয়াল সিনেমায় অভিনয় করে রোজগার করেছেন। কিন্তু উৎপল দত্ত নিজে যখন পরিচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তখন তিনি সগৌরবে তাঁর রাজনৈতিক দর্শন বামপন্থার প্রচার করতেন। এ ব্যাপারে উৎপলের মধ্যে কোনও লুকোছাপা ছিল না। তিনি ঢাক পিটিয়ে জোর গলায় বলতেন, হ্যাঁ, আমি ‘প্রোপাগান্ডিস্ট’। উৎপল দত্তের এই সততাকে আমি শ্রদ্ধা করি।

যাঁদের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে, গোধরা কান্ড নিয়ে কিম্বা মণিপুরের চলতি sectarian violence নিয়ে মুভি বা অন্য কিছু বানানোর ইচ্ছে তাঁরা বানান না। বিবেক অগ্নিহোত্রীকে সেই দায় ঘাড়ে তুলে নিতে হবে কেন? চাইলে তাঁরা ‘দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস’ নিয়েও মুভি বানাতে পারেন। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সাজাতে পারেন তার প্লট। উৎপল দত্তকে রামজন্মভূমি আন্দোলনকে গ্লোরিফাই করে নাটক নামাতে বললে তিনি তা নামাতেন? না বেঁচে থাকলে তাঁকে কেউ নামাতে বলত? পরিচালক বিবেক‌ও নিশ্চয় কার‌ও আব্দার রাখতে নিজের সিনেমার সাবজেক্ট বাছবেন না।

চলচ্চিত্র পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী: বিবেক একজন পেশাদার ফিল্ম ডিরেক্টর। বিবেকের স্বাধীনতা আছে নিজের পছন্দমাফিক সাবজেক্ট বেছে নেওয়ার।

কলকাতা প্রেস ক্লাবে আজ যে ক’জন বিদ্বজ্জন ইত্যাদি ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে বিবেক অগ্নিহোত্রীকে শাপশাপান্ত করলেন, তাঁদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবথেকে টাউট খুন্তিদেব সেনগুপ্ত। এই লোকটাই ‘স্বস্তিকার’ সম্পাদক ছিলেন। লোকসভা ও বিধানসভায় বিজেপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কে জানে, লোকসভায় জিতলে হয়তো কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারতেন। হেরো খুন্তিদেব এখন মোদীকে ‘ফ্যাসিস্ট’ না বলে রেতে শুতে যান না। মধ্যবিত্ত বাঙালির একটা বড় অংশই যে স্বভাবে ছ্যাঁচ্চড়, ধান্ধাবাজ ও আদপে চরিত্রহীন, খুন্তিদেবের মতো লোকেরা তার প্রমাণ।

গাধার পালেদের উদ্দেশ্যে বলছি। একটা কথা মনে রাখবেন , ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’-কে নিয়ে বোকার মতো যত বিতর্ক সৃষ্টি করবেন আপনারা, মানুষের ফিল্মটি দেখার আগ্রহ তত‌ই বাড়বে। যাদের দেখার ইচ্ছে ছিল না, তারাও দেখবে। বক্স অফিসে রিলিজ হ‌ওয়ার পর, পশ্চিমবঙ্গের কোনও সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্সে ফিল্মটি দেখতে দেওয়া হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু তাতে করেও দ্য বেঙ্গল ফাইলস দেখা থেকে দর্শকদের বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। টিভিতে প্রিমিয়ার শো হবে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে রিলিজ হবে। লোকে ঘরে বসে নিজের মোবাইলে দেখবে।

ছেচল্লিশের ১৬ অগাস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’-র ডাক দিয়েছিলেন পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ। দাঙ্গা বাঁধিয়েছিল মুসলিম লিগ। অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক সরকারেও ছিল মুসলিম লিগ। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সেদিন তৃণমূল কংগ্রেস তো ক্ষমতায় ছিল না। তো আজ দ্য গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংসের উপর নির্মিত মুভি বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কীসের এত মাথাব্যথা?

Feature graphic is representational and designed by NNDC.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *