কলকাতা: শনিবারের নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন আরজি করের নির্যাতিতার বাবা-মা। স্বাভাবিকভাবেই এই আন্দোলনে কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা ছিল না। দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকেই ডাক দিয়েছিলেন তাঁরা। বাম-ডান সবাই তাঁদের ডাকে সাড়া দিতেই পারতেন। এমনকি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদেরও অভিযানে যোগ দিতে বাধা ছিল না। যদিও দল হিসেবে একমাত্র বিজেপিই অভয়ার বাবা-মার ডাকে সাড়া দিয়েছে। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং অগ্নিমিত্রা পাল, শঙ্কর ঘোষ, সুব্রত ঠাকুর, জোয়েল মুর্মু ও আশিস বিশ্বাস সহ একাধিক বিজেপি বিধায়ককে নবান্ন অভিযানে শামিল হতে দেখা গেছে।
অভয়ার বাবা-মার ডাকে নবান্ন অভিযান ঘিরে কলকাতায় ধুন্ধুমার। জাতীয় পতাকা হাতে আন্দোলনকারীরা। ব্যারিকেড দিয়ে আটকাচ্ছে পুলিশ। সংগৃহীত ফটো
আরজি করে মহিলা পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনার এক বছর পার। সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলমান। কিন্তু অভয়ার বাবা-মা মনে করেন, তাঁরা ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। শুধু নির্যাতিতার বাবা-মাই নন, বাংলার অসংখ্য মানুষও মনে করেন, আরজি কর কান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হচ্ছে না। নিম্ন আদালতের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে সঞ্জয় রাই। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছে সে। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে আরও অনেকেই আছে বলে প্রথম থেকেই গুঞ্জন। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের দাবি, ঘটনার পরপরই অনেক কিছুই ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে এমনকি সিবিআইয়ের তদন্তও রহস্যের জট ছাড়াতে ব্যর্থ।
আরজি কর কান্ডের এক বছর। মেয়েকে নির্যাতন ও হত্যার বিচার চেয়ে পথে নেমে পুলিশের মারে আহত অভয়ার মা। সংগৃহীত ফটো
মেয়েকে নির্যাতন ও হত্যার বিচার চেয়ে এক বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অভয়ার বাবা-মা। একমাত্র মেয়ে তাঁদের। টাকা দিয়ে তাঁদের মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সন্তান হারা বাপ-মায়ের কাছে টাকার কী মূল্য! মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে সরব হওয়ায় বারেবারে তৃণমূলের নেতাদের কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁদের। সন্তানহারা প্রৌঢ় দম্পতিকে রীতিমতো অপমান করতে ছাড়েন নি কুণাল ঘোষেরা। এবার কলকাতার রাস্তায় ফেলে অভয়ার বাপ-মাকে পেটালো মমতার পুলিশ! পুলিশের লাঠির বাড়িতে অভয়ার মায়ের কপালে চোট লেগেছে। কপালের ডানপাশ ফুলে যায়। পুলিশ লাথি মেরে তাঁকে রাস্তায় ফেলে দেয় বলে অভিযোগ। রাস্তায় ফেলে দিয়ে অভয়ার বাপ-মাকে পুলিশ লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। অভয়ার মায়ের হাতের শাঁখাও পুলিশ ভেঙে দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের হাত থেকে জাতীয় পতাকা কেড়ে নিয়ে তা পা দিয়ে মাড়াতে পর্যন্ত দ্বিধা করে নি পুলিশ।
ভিডিও: অভয়ার বাবা-মায়ের ডাকে নবান্ন অভিযানে মানুষ সামিল হয়েছিলেন জাতীয় পতাকা হাতে। জাতীয় পতাকা মাটিতে পড়ে রয়েছে। পায়ে মাড়াচ্ছে পুলিশ। সংগৃহীত ফুটেজ
আরজি করের নির্যাতিতার মাকে শনিবার বেলা তিনটার দিকে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর আঘাত গুরুতর বলে জানা গেছে। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের উপর পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের কাছে রাস্তার বসে যান শুভেন্দু অধিকারী। বিকেল চারটার দিকে অবস্থান তুলে নিয়ে অভয়ার আহত মাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান শুভেন্দু। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সাংবাদিকদের বলেন, “নবান্ন অভিযান ছিল শান্তিপূর্ণ। নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আবেদনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিল মানুষ। সম্পূর্ণ বিনা প্ররোচনায় আন্দোলনকারীদের উপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।” পুলিশের মারে আহত হয়ে শহরের একাধিক হাসপাতালে ২২-২৩ জন চিকিৎসাধীন বলে শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন।