চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলিতে পড়ুয়া শিশুদের উপর যৌননির্যাতনের ঘটনা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। মাদ্রাসার শিক্ষকেরাই আবাসিক ছাত্রদের বলাৎকারের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার, নারী ও শিশু অধিকার কর্মীরা মনে করেন, মাদ্রাসার হুজুরদের একটি বড় অংশ পায়ুকামী হওয়ায় মাদ্রাসাগুলিতে ভর্তি পড়ুয়াদের যৌন নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন।
হেফাজতে ইসলাম ও জামায়াতে ইসলামীর মতো সংগঠনগুলি মাদ্রাসায় শিশুদের উপর যৌননির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করতেই অভ্যস্ত। এদিকে ৫ অগাস্টের পর সমাজে অন্যান্য অপরাধের মতোই মাদ্রাসায় ছাত্র ধর্ষণের ঘটনাও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে বলে দাবি করছেন দেশটির একটি মহল।

এদিকে পড়ুয়াকে ধর্ষণের অভিযোগে চট্টগ্রামে ৩২ বছরের এক মাদ্রাসা শিক্ষককে রবিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃত ব্যক্তির নাম ওমর ফারুক। তিনি চট্টগ্রাম শহরের বন্দর থানা এলাকার একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন। মাদ্রাসার ১৩ বছরের এক পড়ুয়াকে ওমর দিনের পর দিন ধরে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ। নিগৃহীত কিশোর মাদ্রাসার ছাত্রাবাসে থাকে। সে হিফজ বিভাগের ছাত্র বলে জানা গেছে। রোজ ভোর রাতে কিশোরটিকে ঘুম থেকে তুলে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ওই হুজুর তাকে বলাৎকার করতেন।
২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) শেষরাতেও ছাত্রটিকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন ওমর ফারুক। নির্যাতিত কিশোর আতঙ্কে কান্নাকাটি শুরু করলে শিক্ষক তাকে ধমকে চুপ করিয়ে দেন। ওমর ফারুক ছাত্রটিকে বলেন, “যদি মুখ খুইলস পোল্যা, তোক কাইট্টা কর্ণফুলীত ভাসাই দিমু!” শুক্র ও শনি- এই দু’দিন মাদ্রাসায় ছুটি ছিল। নির্যাতিত কিশোর ঘটনার পরদিনই বাড়ি ফিরে বাবাকে সবকিছু খুলে জানায়। কিশোরটির বাবা রবিবার (২৭ জুলাই) থানায় মামলা করলে অভিযুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে পুলিশ।
বন্দর থানার উপপরিদর্শক ফরিদ আহমেদ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, “মামলা দায়ের হওয়া মাত্রই অভিযুক্ত শিক্ষককে ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। রবিবার মধ্যরাতে ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” নিগৃহীত কিশোরকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ। একটু স্বাভাবিক হলেই কিশোরটির জবানবন্দি নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থলে গিয়েও আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করবেন মামলার তদন্তকারীরা।

গত এক বছরে বাংলাদেশের একাধিক মাদ্রাসায় শিশু বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। মাদ্রাসাগুলিতে শিশুদের উপর যৌননির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ্যে আসে না বলে মনে করেন দেশটির শিশু ও মানবাধিকারকর্মীরা। বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলিতে সাধারণত এতিম ও দরিদ্র পরিবারের ছেলেরাই পড়ালেখা করে। সন্তান মাদ্রাসায় হুজুরের দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে জানার পরেও নানা কারণে মুখ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন অভিভাবকেরা। টাকা-পয়সা দিয়েও তাদের মুখ বন্ধ করে দেন প্রভাবশালী হুজুরেরা।
Feature image is representational and designed by NNDC.