ডেস্ক রিপোর্ট: ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রখ্যাত লেখক সলমন রুশদির উপর হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হাদি মাতারকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিল নিউইয়র্কের একটি কাউন্টি আদালত। ২০২২ সালের ১২ অগাস্ট নিউ ইয়র্কের ‘চটোকোয়া ইনস্টিটিউশনে’ ‘লেখকদের নিরাপত্তা’র উপরে আয়োজিত একটি আলোচনায় নিজের মতামত প্রকাশ করার সময় মঞ্চেই হাদি মাতারের হাতে আক্রান্ত হন রুশদি। ঘটনার সময় হাদির বয়স ছিল চব্বিশ। রুশদির চুয়াত্তর।

বুকার পুরস্কার জয়ী উপন্যাসিককে মেরে ফেলাই ছিল হাদি মাতারের লক্ষ্য। মঞ্চে রুশদির সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন হেনরি রিস। অনুষ্ঠানটি দেখছিলেন ১,৪০০ দর্শক। আচমকাই মঞ্চে লাফিয়ে উঠে অতর্কিতে সলমন রুশদির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নিউজার্সির বাসিন্দা হাদি মাতার। মঞ্চের মেঝেতে রুশদিকে ফেলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে হাদি। ভেন্টিলেশন থেকে বেঁচে ফিরলেও ছুরির আঘাতে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ হারিয়েছেন প্রখ্যাত এই লেখক। একটি হাতও অকেজো হয়ে গেছে।
১৯৮৮ সালে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ লেখার পর থেকেই ইসলামিক মৌলবাদীদের নিশানায় সলমন রুশদি। রুশদির মুন্ডু চেয়ে ‘ফতোয়া’ জারি করেছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেইনি। সাড়া দুনিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সে’সময়। পৃথিবীর বহু দেশে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ভারতেও ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’কে নিষিদ্ধ করেছিল রাজীব গান্ধীর সরকার। নিজের প্রাণ বাঁচাতে টানা নয় বছর আত্মগোপনে ছিলেন রুশদি। পরে প্রকাশ্যে আসলেও কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপের মধ্যে থাকতেন তিনি। ‘দ্য স্যাটেনিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার ৩৪ বছর পর রুশদির উপর বদলা নিয়েছিল হাদি মাতার।
শিয়া মুসলমান হাদি মাতারের জন্ম আমেরিকার নিউজার্সিতে হলেও তার বাবা-মা দক্ষিণ লেবাননের ইয়ারুন অঞ্চল থেকে আমেরিকায় অভিবাসী হয়েছিলেন। জন্মসূত্রে আমেরিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার পরেও লেবাননের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নি হাদি। ২০০৬ সালে লেবাননের ইরানপন্থী শিয়া মিলিশিয়া ‘হিজবুল্লাহ’-র প্রধান হাসান নাসরাল্লাহর (২০২৪-এর ২৭ সেপ্টেম্বর ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত) একটি বক্তৃতা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই সে রুশদির উপর খোমেইনির ‘ফতোয়া’ কার্যকর করার সুযোগ খুঁজতে থাকে বলে পুলিশকে জানিয়েছে হাদি।

২০২২-এর ১২ অগাস্ট ঘটনাস্থল থেকেই হাদি মাতারকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর আগে দু’বছর কারাবন্দি ছিল হাদি। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। তিন সপ্তাহের বিচার শেষে হাদি মাতারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার তিন মাস পর শুক্রবার (১৬ মে, ২০২৫) তার শাস্তি ঘোষণা করলেন বিচারক। রুশদির উপর প্রাণঘাতী হামলার অপরাধে হাদির ২৫ বছরের জেল হয়েছে। মঞ্চে রুশদির সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী হেনরি রিসকে আহত করার ঘটনায় হাদি মাতারকে আরও সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে নিউইয়র্কের কাউন্টি আদালত।

ঘটনার পর শরীরে ১৫-টি ছুরির কোপ নিয়ে পেনসিলভানিয়ার একটি হাসপাতালে ১৭ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন সলমন রুশদি। কয়েকদিন তাঁকে ভেন্টিলেশনেও রেখেছিলেন চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেও নিউইয়র্কের একটি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে তিন সপ্তাহ থাকতে হয়েছিল রুশদিকে। এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন লেখক। আঘাতে স্নায়ুতন্ত্রের স্থায়ী ক্ষতি হওয়ায় একটি হাতও অকেজো হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রুশদির যকৃতও।

ট্রমা কাটিয়ে উঠে আবার কলম ধরেছেন ‘মিডনাইট চিল্ড্রেন’-এর ৭৭ বছর বয়সী লেখক। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখেছেন নতুন বই ‘নাইফ: মেডিটেশনস আফটার এন অ্যাটেম্পটেড মার্ডার’। ২০২৪-এর এপ্রিলে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।
Feature graphic is representational and designed by NNDC