মহাবিস্ময়ের মহাকুম্ভ! কুম্ভের তত্ত্বকথা এবং যেমন দেখলাম মানুষের মহাতীর্থ

মহাবিস্ময়ের মহাকুম্ভ! কুম্ভের তত্ত্বকথা এবং যেমন দেখলাম মানুষের মহাতীর্থ


প্রয়াগের ত্রিবেণী সঙ্গমে মহাকুম্ভের জলে ভারতবর্ষ এসে মিশেছে। কত পথ, কত মত, কত বর্ণ! মানুষের এই মহাতীর্থে জলে তো বটেই ধুলোয় অবগাহন করলেও পুণ্য। মহাকুম্ভ থেকে ফিরে কী উপলব্ধি, জানাচ্ছেন নব্যেন্দু মৌলিক

কুম্ভ শব্দের অর্থ ‘কলস’ বা ‘ঘট’ জাতীয় পাত্র। যার উল্লেখ প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য বেদ এবং জ্যোতিষচর্চায় ‘কুম্ভ-রাশি’ হিসেবেও রয়েছে। যদিও অমৃত কুম্ভ লাভের উদ্দেশ্যে আয়োজিত কুম্ভমেলার কোনও বর্ণনা বেদ বা হিন্দু পুরাণে নেই। হিন্দু কিংবদন্তি অনুসারে, মহর্ষি দুর্বাসার অভিশাপে দেবরাজ ইন্দ্র সহ দেবতাগণ দুর্বল হয়ে পড়েন। অসুরেরা দেবতাকুলকে আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করেন। দেবলোকের এই চরম পরিস্থিতিতে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর শরণে যান এবং তার নিকট সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। এই সময় ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের অসুরদের সাথে সন্ধি করে ক্ষীরসমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণের পরামর্শ দেন। ভগবান বিষ্ণুর পরামর্শ মতো দেবতারা অসুরকুলের সাথে সন্ধি করেন এবং অমৃত আহরণ হেতু সমুদ্র মন্থন করতে শুরু করেন। সমুদ্রমন্থন হল হিন্দু পুরাণে উল্লিখিত এমন এক শ্রুতি যার উল্লেখ ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ সহ বিভিন্ন হিন্দু পুরাণের পাশাপাশি মহাভারতেও রয়েছে।

সমুদ্রমন্থন কাহিনীর সূচনা হয় একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। দেবরাজ ইন্দ্র তার হস্তীবাহন ঐরাবতে চড়ে মহর্ষি দুর্বাসার নিকট উপস্থিত হলে, মহর্ষির নির্দেশে বনদেবী একটি অপরূপ সুন্দর মালা তৈরি করে তা দেবরাজ ইন্দ্রকে উৎসর্গ করেন। দেবরাজ ইন্দ্র এই মালা গ্রহণ করলেও অহংকারের বশবর্তী হয়ে সেই মালা ঐরাবতের শুঁড়ে রাখেন। এই সময় বাহন ঐরাবত সেই মালাটি ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ঘটনায় প্রচণ্ড ক্রোধান্বিত হন মহর্ষি দুর্বাসা। দেবতাদের প্রতি উৎসর্গীকৃত প্রসাদ দেবরাজ ইন্দ্র দ্বারা অপমানজনকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় মহর্ষি দুর্বাসা দেবরাজ ইন্দ্র সহ সম্পূর্ণ দেবকুলকে অভিশাপ দেন। তার অভিশাপে দেবতারা তাদের বল, ভাগ্য এবং শক্তি সবকিছুই হারিয়ে ফেলেন।

দেবতাদের শক্তি হ্রাসের খবরে উৎফুল্ল অসুরকুল দেবতাদের যুদ্ধের আহ্বান জানান এবং দেবতাদের সেই যুদ্ধে পরাজিত করে সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নেন। পরাজিত দেবতাগণ এই কঠিন সংকটে ভগবান বিষ্ণুর সাহায্য প্রার্থনা করেন। এইসময় ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের অসুরকুলের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্র মন্থনে রাজি করাতে প্রস্তাব দেন। সমুদ্র মন্থনের মাধ্যমে অমৃতের খোঁজ মিলবে এবং সেই অমৃত দেবতা ও অসুরেরা ভাগাভাগি করে নিয়ে অমরত্ব লাভ করবেন বলে অসুরদের জানাতে বলেন ভগবান বিষ্ণু। পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণু দেবতাদের এই আশ্বাসও দেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কল্যাণে এই অমৃতের যাবতীয় অংশ যাতে দেবতারাই আস্বাদন করতে পারেন, তা তিনি দেখবেন।

সেইমতো, দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে সমুদ্রমন্থনের সিদ্ধান্ত হয়। ক্ষীর সাগরে সমুদ্রমন্থনের কাজ শুরু হয়। যা দীর্ঘ সময় ধরে চলে, মন্থন দণ্ড হিসেবে মন্দার পর্বত এবং মন্থন রজ্জু হিসেবে মহাদেবের স্কন্ধসঙ্গী নাগরাজ বাসুকি ব্যবহৃত হয়। অসুরদের ইচ্ছে অনুসারে তারা বাসুকি নাগের মাথার অংশ ধরেন এবং দেবতারা লেজের অংশ ধরে সমুদ্র মন্থনের কাজ শুরু করেন। সমুদ্র মন্থনকালে যাতে মন্দার পর্বত সমুদ্রে নিমজ্জিত না হয়ে যায়, সেই লক্ষ্যে ভগবান বিষ্ণু কূর্ম অবতার রূপ ধারণ করেন এবং মন্দার পর্বতকে জলে নিমজ্জিত হওয়া আটকাতে নিজের বিশাল খোলক দিয়ে মন্দার পর্বতকে নিচ থেকে ধরে রাখেন। বাসুকি নাগের মুখ অসুরদের দিকে থাকায় অসুরেরা নাগের মুখ থেকে বের হওয়া বিষে সিক্ত হতে থাকেন। দেবতা এবং অসুরেরা মন্থন রজ্জু বাসুকি নাগকে নিজেদের দিকে টানতে থাকলে মন্দার পর্বত একবার বামে এবং একবার ডানে ঘুরতে থাকলে সমুদ্র মন্থিত হতে শুরু করে। সমুদ্র মন্থনকালে একাধিক সামগ্রী উত্থিত হতে শুরু করে। যার মধ্যে সর্বাগ্রে উত্থিত হয় মারণ বিষ “হলাহল”। যা গোটা সৃষ্টিকে বিনাশ করার ক্ষমতা রাখে। দেবতারা তখন ভগবান শিবের দারস্থ হন। ভগবান শিব ত্রিভুবন রক্ষার্থে সেই হলাহল পান করে নিজ কন্ঠে ধারণ করেন এবং “নীলকন্ঠ” নামে অভিহিত হন।

সমুদ্র মন্থনে বিভিন্ন প্রকার ভেষজ ও ১৪ প্রকার রত্ন উত্থিত হয়, যা দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। রত্ন, ভেষজ ছাড়াও তিন প্রকার দেবী যথা লক্ষ্মী, অপ্সরা এবং বারুণী উত্থিত হয়। তিনপ্রকার দৈব প্রজাতির পশু যথা – কামধেনু, ঐরাবত এবং উচ্চৈঃশ্রবা উত্থিত হয়। তিনটি মহামূল্যবান রত্ন কৌস্তুভ মণি, পারিজাত, শার্ঙ্গ উত্থিত হয়। এছাড়াও চন্দ্র, ধন্বন্তরি, শঙ্খ, লক্ষ্মীর ভগিনী অলক্ষ্মী, ছত্র, কর্ণকুণ্ডল, কল্পতরু প্রভৃতি উত্থিত হয়। সবশেষে ক্ষীর সমুদ্র মন্থন থেকে উত্থিত হয় “অমৃত কলস”। দৈববৈদ্য ধন্বন্তরি অমরত্বের পীযূষ স্বরূপ একটি অমৃত পাত্র নিয়ে উত্থিত হন। এই অমৃত পাত্রের দখল নিতে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রচণ্ড যুদ্ধ শুরু হয়। অসুরদের কবল থেকে পাত্রটিকে রক্ষা করার জন্য পক্ষীরাজ গরুড় তৎক্ষনাৎ পাত্রটিকে নিয়ে উড়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অন্যত্র চলে যায়। এইসময়ে দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু তার মোহময়ী মোহিনী রূপ ধারণ করেন এবং তার আকর্ষণে অসুরদের অমৃতের প্রতি মনোযোগ নষ্ট করে দেন। একইসাথে ছলনার আশ্রয়ে অমৃত পাত্রটি নিজ হস্তগত করেন এবং দেবতাদের মধ্যে অমৃত বিতরণ শুরু করেন। অসুর দলের একজন স্বরভানু নামের এক অসুর দেবতাদের মধ্যে ছদ্মবেশে লুকিয়ে ছিলেন। সেও অমৃতের স্বাদ উপভোগ করেন। যদিও সূর্যদেব এবং চন্দ্রদেব অসুরটির ছদ্মবেশ ধরে ফেললে বিষ্ণুর মোহিনী অবতারকে সমস্ত ঘটনা জানালে সুদর্শন চক্র দ্বারা স্বরভানুর মাথা ও ধর আলাদা করে দেন। আলাদা হওয়া মাথাটি পরবর্তীকালে রাহু এবং ধরটি কেতু নাম ধারণ করে। এইভাবে অসুরদের উপর দেবতাদের পুনর্বিজয়ের মাধ্যমে এই কাহিনির পরিসমাপ্তি ঘটে।

এই ঘটনার সাথে যুক্ত কুম্ভ মেলার ইতিহাস। এমনটাই মনে করেন ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা। অমৃতের পাত্র নিয়ে যখন দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে সেই সময় অমৃতের পাত্র হতে চার ফোঁটা অমৃত এই ধরিত্রীর বুকে চারটি প্রান্তে এসে পতিত হয় এবং সেই স্থানকে পবিত্র করে তোলে। এই চারটি স্থান হলো গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদীর মিলনস্থল ‘প্রয়াগরাজ’, গঙ্গানদীর উপর ‘হরিদ্বার’, গোদাবরী নদীর উপর ‘নাসিক’ এবং শিপ্রা নদীর উপর ‘উজ্জয়িনী’। এই চারটিস্থান অমৃত লাভে পবিত্র হলে এই এলাকায় পুণ্যস্নান করলে পাপমুক্তি ও মোক্ষলাভ ঘটে এমনটাই বিশ্বাস ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের। তাই যুগ যুগ ধরে ৩,৬,১২ ও ১৪৪ বছর অন্তর একবার করে এইসব এলাকায় আয়োজিত হচ্ছে কুম্ভ মেলা। দেবতা এবং অসুরদের মধ্যে অমৃত কুম্ভ নিয়ে লড়াই হয়েছিল ১২ দিন। দেবতাদের ১২ দিন মানুষের ১২ বছরের সমান। তাই ১২ টি কুম্ভ রয়েছে। এরমধ্যে চারটি কুম্ভ পৃথিবীতে এবং বাকি আটটি কুম্ভ দেবলোকে রয়েছে। যা কেবল দেবতা বা দেবত্বের অধিকারীরাই অর্জন করতে পারেন। সেখানে মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। যে সময় চন্দ্রাদি দেবতারা কলস রক্ষা করেছিলেন, সেইসময় বর্তমান রাশি রক্ষাকারী চন্দ্র সূর্যাদি গ্রহ যখন আসে, সেই সময় “কুম্ভ যোগ” হয়। অর্থাৎ যে বছর যে রাশিতে সূর্য চন্দ্র ও বৃহস্পতির সংযোগ হয়, সেই বছর সেই রাশির যোগে যেসব জায়গায় অমৃত বিন্দু পতিত হয়েছিল, সেখানে কুম্ভ মেলা হয়।

পায়ে পায়ে মহাকুম্ভের দিকে মানুষের স্রোত। ভারতের সব পথ যেন এখন শেষ হচ্ছে প্রয়াগতীর্থে ত্রিবেণী সঙ্গমে মহাকুম্ভের ময়দানে। ছবি: লেখক

এই কুম্ভমেলা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ এবং হিন্দু তীর্থযাত্রা। প্রতি তিন বছর অন্তর যে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় তা হলো কুম্ভ মেলা। ছয় বছর অন্তর যে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় তা হলো অর্ধ কুম্ভ মেলা। বারো বছর পর যে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় তা হলো পূর্ণ কুম্ভমেলা। ১৪৪ বছর পর যে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয় তা হলো মহাকুম্ভ মেলা। অতীত পাপের প্রায়শ্চিত্ত ও শুদ্ধিকরণের লক্ষ্যে কোটি কোটি হিন্দু সনাতনী এই মেলায় সামিল হয়। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো কুম্ভমেলাকে “ইনট্যানজেবল কালচারাল হেরিটেজ”-এর মর্যাদা দিয়েছে।

ভারতের প্রধান নদী গঙ্গা উত্তরাখণ্ড রাজ্যের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। মধ্য হিমালয়ের বান্দারপুচ পর্বতশৃঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম পাদদেশে অবস্থিত যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করে যমুনা নদী। এই দুই নদী ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজ (পূর্বের এলাহাবাদ)-এ মিলিত হয়ে যায়। বলা ভাল, ভৌগোলিক পরিভাষায় যমুনা হল গঙ্গানদীর একটি উপনদী। কিন্তু পৌরাণিক মতে আরও একটি নদীর নাম যুক্ত হয়ে যায় এই নদীদ্বয়ের সাথে। তা হলো সরস্বতী। ঋগ্বেদে, পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য এবং বেদ পরবর্তী সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য নদী হলো সরস্বতী। ঋগ্বেদের প্রাচীনতম অংশগুলিতে উত্তর-পশ্চিম ভারতের বৃহৎ ও পবিত্র নদী বলে এই নদীর কথা বলা হয়েছে। এই নদীর অস্তিত্ব ছিল কি ছিল না, এই নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। একদল মানুষের দাবি এই নদী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়ে গেছে। আবার অনেকাংশের মতে এই নদী স্বয়ং ভগবান ব্রহ্মার অভিশাপে পাতালে প্রবেশ করে অন্তঃসলিলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব যাই হোক, বিশ্বাস বলছে অন্য কথা। প্রচলিত হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, সরস্বতী নদী পাতাল পথে প্রবাহিত হয়ে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে গঙ্গা যমুনা নদীর মিলনস্থলেই নিজেকে মিলিত করেছে। ফলে এই স্থানের নাম গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতীর মিলিত প্রবাহে হয়েছে “ত্রিবেণী সঙ্গম”। এই সঙ্গম ঘাটেই পবিত্র তীর্থভূমি প্রয়াগরাজে আয়োজিত হয় কুম্ভ মেলা।

মহাকুম্ভে মানুষের ভিড়ের খন্ড চিত্র মাত্র। কত রঙ, কত মন, কত মত ও পথ এসে মিশেছে সঙ্গমে ! ছবি: লেখক

প্রতি ১২ বছর অন্তর পূর্ণকুম্ভের আয়োজন হয় এই প্রয়াগরাজে। ৬ বছর অন্তর অর্ধকুম্ভের আয়োজনও হয় এই স্থানে। ২০১৩ সালে এই প্রয়াগরাজেই (পূর্বে এলাহাবাদ) হয়েছিল পূর্ণকুম্ভ মেলা। ২০১৯ সালে হয়েছিল অর্ধকুম্ভ মেলা। ২০২৫ সালে চলছে মহাকুম্ভ মেলা। যা ১২ টি পূর্ণকুম্ভ মেলার শেষে ১৪৪ বছর পর আয়োজিত হয়েছে। এই ত্রিবেণী সঙ্গমস্থলে স্নান করলে মোক্ষ লাভ হয়। পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়। এমনটাই বিশ্বাস ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের।

পুরাণে বা বেদে কুম্ভমেলা নামে কোনও মেলার কথা উল্লেখ না থাকলেও প্রয়াগ ও স্নান তীর্থযাত্রার প্রথম উল্লেখ ঋগ্বেদ পরিশিষ্টে পাওয়া যায়। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মের পালি শাস্ত্রেও তার উল্লেখ রয়েছে। স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ বলেছেন “প্রয়াগ স্নান ক্রুর এবং মন্দ কর্মসমূহ ধুয়ে ফেলতে পারে না, বরং গুনী ব্যাক্তির কর্ম ও হৃদয় শুদ্ধ হওয়া উচিত।” মহাভারতে অতীতের ভুল এবং অপরাধের জন্য প্রায়শ্চিত্তের উপায় হিসেবে প্রয়াগ তীর্থস্নানের উল্লেখ আছে। মহাভারতের মহাযুদ্ধের পূর্বে তীর্থযাত্রা পর্বে বলা হয়েছে “যে দৃঢ় ব্রতপালন করে, মাঘের সময় প্রয়াগে স্নান করে, হে ভারতর্ষভ, সে নিষ্কলঙ্ক হয়ে স্বর্গে পৌঁছে যায়।” প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন গ্রন্থে নদীর তীরবর্তী উৎসব, মেলা এবং মাঘ মেলার অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। এমনকি ৬ বছর ও ১২ বছর অন্তর বৃহৎ লোকসমাগম সেই সকল মাঘ মেলায় হতো বলেও উল্লেখ করা হয়। এই মেলাগুলির স্থান এবং বর্তমান কুম্ভ মেলার স্থান একই বলে মনে করা হলেও কুম্ভ মেলার সঠিক বয়স বা ইতিহাস নিরূপণ করা যায়নি।

সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধ চিনা পরিব্রাজক হিউয়েং সাং রাজা হর্ষবর্ধনের সময়কালে ভারতভ্রমণে আসেন এবং তার বিবরণীতে রাজা হর্ষবর্ধন এবং প্রয়াগের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে তিনি শত শত দেব মন্দির এবং দুটি বৌদ্ধ মঠের সন্ধান পান। এই শহরটিকে তিনি একটি হিন্দু শহর বলে উল্লেখ করেন। তিনি নদীর সংযোগস্থলে হিন্দু স্নান কর্মের কথাও উল্লেখ করেন। পণ্ডিতদের মতে, এটি কুম্ভমেলার প্রাচীনতম টিকে থাকা ঐতিহাসিক বিবরণ, যা বর্তমান প্রয়াগে ৬৪৪ খ্রীস্টাব্দে হয়েছিল।

অনেক ইতিহাসবিদ কুম্ভমেলার স্রষ্টা হিসেবে মহান হিন্দু ধর্ম সংস্কারক আদি শঙ্করাচার্যের কথা উল্লেখ করেন। অষ্টম শতাব্দীতে আদি শঙ্করাচার্য কুম্ভমেলার সূচনা করেছিলেন। হিন্দু সনাতনীদের বিভিন্ন ধারা ও ভাবধারার মধ্যে সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে এবং সনাতনী সংস্কৃতির একীকরণের স্বার্থে আদি শঙ্করাচার্যের হাত ধরেই কুম্ভমেলার প্রসার লাভ ঘটে। যদিও ১৯ শতকের পূর্বে এই কুম্ভমেলার “কুম্ভমেলা” হিসেবে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। ব্রিটিশদের হাত ধরে প্রথম কুম্ভ মেলা পর্ব আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৭০ সালে সংঘটিত হয়ে ছিল। তবে হিন্দু তপস্বী, যোদ্ধা, সন্ন্যাসীদের সম্পর্কিত পাণ্ডুলিপি এবং সুলতানী যুগে ও মোঘল যুগে লড়াই করা হিন্দু আখড়াগুলির ধর্মীয় উৎসব ও তীর্থযাত্রাগুলির সাথে এই ধরনের বৃহৎ হিন্দুস্নান উৎসবের উল্লেখ রয়েছে।

হরিদ্বার কুম্ভমেলার একটি প্রাথমিক বিবরণ ক্যাপ্টেন টমাস হার্ডউইক ১৭৯৬ সালে প্রকাশ করেছিলেন। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর শাসন আমলে চারটি কুম্ভ মেলার হদিস পাওয়া যায়। যেখানে কোম্পানি হিন্দু তীর্থযাত্রীদের উপর লাভজনক কর ও বানিজ্য রাজস্ব নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। এমনকি হিন্দু পুরোহিতেরা ব্রিটিশের কাছে এই উৎসবকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার অনুরোধ করেছিলেন। তুলসীদাসের “রামচরিতমানস”-এ প্রয়াগে বার্ষিক মেলার উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম ঐতিহাসিকের লেখা ” আইন-ই-আকবরী-তেও এর উল্লেখ রয়েছে। আকবর যুগের ফার্সি গ্রন্থে প্রয়াগকে হিন্দুদের “তীর্থস্থানের রাজা” বলে উল্লেখ করেছে। “তবাকত-ই-আকবরী”-তে প্রয়াগ সঙ্গমে বার্ষিক স্নানের উল্লেখ আছে৷

এই ধরনের বহু ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত প্রয়াগ বা মাঘ মেলাকে কেন্দ্র করে থাকলেও, বাস্তবিক কুম্ভ মেলার ব্যাখ্যা উনিশ শতকের আগে পাওয়া যায় না। ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর আমল থেকেই কুম্ভস্নানের ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া গেলেও একথা সত্য যে, প্রাচীন ভারতে বৈদিক সভ্যতার আমল থেকেই ত্রিবেণী সঙ্গম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্ম তীর্থক্ষেত্র। মোক্ষ লাভ এবং পুণ্য অর্জন হেতু যুগ যুগ ধরে মানুষ এখানে পুণ্যস্নানে অংশ নিয়েছেন এবং এই স্থানের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় মাহাত্ম্যকে দৃঢ় করেছেন। যা ভারতীয় দর্শন ও সনাতনী আধ্যাত্মিকতাকে আলো দেখিয়েছে।

‘মহাকুম্ভ ২০২৫’, যা ১৪৪ বছর পর আয়োজিত হচ্ছে বলে প্রথম থেকেই দাবি করা হচ্ছিল হিন্দু ধর্মের সাথে যুক্ত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে। একই দাবি ভারত সরকার এবং উত্তর প্রদেশ সরকারের। ” মহাকুম্ভ ২০২৫” কে কেন্দ্র করে কুম্ভনগরী প্রয়াগরাজকে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয় বছর দুয়েক আগে থেকেই। কুম্ভ নগরী প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলার আয়োজনের খরচ হিসেবে ৭৫০০ কোটি টাকার আর্থিক ব্যয় ধরা হয়েছে। ২০২৫ সালের ১৩ই জানুয়ারি থেকে ২৬ শে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এই মেলা চলবে। মোট ৬ টি শাহীস্নানের দিন নির্ধারিত হয়েছে এই মেলায়। ১৩ই জানুয়ারি পৌষ পূর্ণিমার স্নান, ১৪ই জানুয়ারি মকরসংক্রান্তির স্নান, ২৯ শে জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যার স্নান, ৩ রা ফেব্রুয়ারী বসন্ত পঞ্চমীর স্নান, ১২ই ফেব্রুয়ারী মাঘী পূর্ণিমার স্নান, ২৬ শে ফেব্রুয়ারী মহাশিবরাত্রির স্নান।

উত্তরপ্রদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাঘী পূর্ণিমা অবধি এই মেলায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ৫০ কোটি মানুষ। অর্থাৎ গড়ে প্রায় প্রতিদিন দেড় কোটির বেশি মানুষ কুম্ভস্নান করেছেন। বিশেষ স্নানের দিনে এই সংখ্যা সাড়ে তিন কোটি থেকে পাঁচ কোটি। মৌনী অমাবস্যার দিনে এই সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ছাড়িয়েছিল বলে অনুমান। বিপুল এই জনসমাগমের আভাস আগে থেকেই ছিল। কুম্ভকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশময় প্রচারের ঝড় উঠেছিল তাতে কুম্ভের জনসমাগম যে বিশ্বের যেকোনো জনসমাগমের রেকর্ড অতিক্রম করবে তা বোঝার বাকি ছিল না। সেইমতো সরকারিস্তরে চূড়ান্ত প্রস্তুতিও ছিল। প্রায় ৪০০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত কুম্ভ মেলা। এই গোটা এলাকাতেই অস্থায়ী ভিত্তিতে কুম্ভ নগরী নির্মান করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। যা ২০১৯ সালে তীর্থরাজ প্রয়াগে আয়োজিত অর্ধকুম্ভ মেলা থেকে তিনগুণ বেশি৷

কুম্ভমেলার প্রস্তুতি হিসেবে প্রয়াগরাজকে যাবতীয় আধুনিক ব্যবস্থা সম্বলিত স্মার্ট সিটিতে পরিণত করা হয়েছে। মোট ১২ কিলোমিটার ঘাট নির্মান করা হয়েছে, যাতে অসংখ্য পুণ্যার্থী নির্বিঘ্নে স্নান করতে পারেন। ৪০০০ হেক্টরে বিস্তৃত মোট মেলাকে ২৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। মোট ৩০ টি অস্থায়ী ‘পিপ পুল’ নির্মান করা হয়েছে। পুণ্যার্থী,সাধুজন ও অন্যান্য নাগরিকদের থাকার সুবিধার জন্য প্রায় ১.৫ লক্ষ অস্থায়ী শিবির স্থাপন করা হয়েছে। মেলা চত্বরের বাইরে ১৮৫০ হেক্টর এলাকা জুড়ে পার্কিং এরিয়া স্থাপন করা হয়েছে। গোটা এলাকায় ছোটো বড় মিলিয়ে ৪৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক পথে যোগাযোগের জন্য উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের থেকে বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পার্কিং লট থেকে মেলা গ্রাউন্ড পর্যন্ত যাবার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বাস পরিসেবা চালু করেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার।

ভারতীয় রেলের পক্ষ থেকে অসংখ্য কুম্ভ স্পেশাল মেল, এক্সপ্রেস, প্যাসেঞ্জার, লোকাল, মেমু ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুম্ভমেলায় আসা কোটি কোটি পুণ্যার্থীর কথা মাথায় রেখে গোটা কুম্ভনগরীতে অস্থায়ী ভিত্তিতে প্রায় ১.৫ লক্ষ পাব্লিক টয়লেট এবং শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এই শৌচালয়গুলির স্বচ্ছতার স্বার্থে প্রায় ১০০০০ সাফাই কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি ১০ টি শৌচাগার পিছু একজন করে সাফাই কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে এবং এইরকম ১০ জন সাফাইকর্মী পিছু ১ জনকে সুপারভাইজারও নিয়োগ করা হয়েছে। বিরাট এই মেলা চলাকালীন গঙ্গা দূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার ৫০০ জন প্রশিক্ষিত গঙ্গা প্রহরীকে নিয়োগ করেছে। যারা রাত দিন গঙ্গানদীর স্বচ্ছতা ও সাফাই অভিযানে লেগে আছে। অ্যাম্বুলেন্স, স্বাস্থ্য পরিসেবা শিবির, মোবাইল হেলথ ইউনিটের ব্যবস্থা রয়েছে মেলাজুড়ে।

মহাকুম্ভের ময়দানে মাউন্টেড পুলিশ। মহাকুম্ভ সামাল দিতে যোগী প্রশাসনের ব্যবস্থায় ঘাটতি ছিল না কিন্তু মানুষের সুনামির কাছে তাও যথেষ্ট নয়। ছবি: লেখক

গোটা মেলার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ৪০০০০ পুলিশ মোতায়েন করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এর বাইরেও উত্তরপ্রদেশ প্রভিন্সিয়াল আর্ম কনস্টাবুলারি, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর জওয়ানও মোতায়েন রাখা হয়েছে। গোটা মেলা চত্বরে প্রায় ২৩০০ সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে নজরদারির জন্য। এছাড়াও নদীর ১০০ মিটার উপর থেকে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশ অগ্নিনির্বাপণ দপ্তরের পক্ষ থেকে ৩৫১ টি ফায়ার ফাইটিং ভেইকেল, ২০০০ এর অধীক কর্মী এবং প্রায় ৫০ টি ফায়ার স্টেশন, ২০ টি ফায়ার পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। বড় অগ্নিকাণ্ড এড়াতে চারটি বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াটার টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যেগুলি বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় সক্ষম। একইভাবে এতবড় মেলায় এসে যারা পরিবারচূত হবেন, তাদের খুঁজে পেতে সহায়তার কথা মাথায় রেখে মেলায় রয়েছে “লস্ট এণ্ড ফাউন্ড সেন্টার”। এছাড়াও কুম্ভ মেলার বিশেষ অ্যাপ, AI টুলস্ সহ আধুনিক যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে এই মেলায়।

এই মেলা বিশ্বের যেকোনো সমাগমকে হার মানিয়েছে তার ধার ভার ও জনবিস্ফোরণে। মেলায় লোক সংখ্যার উপস্থিতি কতটা মারাত্মক তা মেলার যেকোনো ছবি দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। মেলাকে কেন্দ্র করে যেসকল পার্কিং লট-গুলি তৈরি হয়েছে, সেগুলিই এক একটি মিনি ভারতবর্ষে পরিনত হয়েছে। ভারতের প্রায় প্রতিটি রাজ্যের নম্বর প্লেটের গাড়ি সেখানে নজরে পড়তে বাধ্য। মেলায় পৌঁছাতে মানুষ এতটাই ব্যাকুল যে, ট্রেন, বাস বা কোনো গণপরিবহনেই তিলধারণের অবধি জায়গা নেই। জাতীয় সড়কগুলিতে নজর রাখলে শুধুমাত্র কুম্ভগামী গাড়ি ছাড়া অন্যকিছু চোখে পড়ছে না। হাজার হাজার ছোটো গাড়ি, বড় গাড়ি, এমনকি পণ্যবাহী গাড়ি, বাইক এবং সাইকেল যে যা পেরেছে তাই নিয়েই সামিল হয়েছে তীর্থরাজ প্রয়াগে। সকলে যে পাপ শোধন করতে বা হুজুগে পড়েই মেলায় এসেছেন তা একেবারেই নয়। এসেছেন এতবড় একটি আয়োজনে, এত বড় একটি জনসমাগমের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে।

মেলাকে কেন্দ্র করে দুর্ঘটনা ঘটে চলেছে একের পর এক। মৌনী অমাবস্যার রাতের ভয়াবহ “ভাগদর” (স্থানীয় ভাষা) বা পদপৃষ্টে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও বিরাট এই সমাগমে বহু মানুষের স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ অসুস্থও হয়ে পড়েছেন। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়েছে। বহু মানুষ নিখোঁজও রয়েছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও কুম্ভে আসার উন্মাদনা এক বিন্দু কমে তো নি, উলটে বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে।

অমৃতকুম্ভে একটি ডুবের জন্য মানুষের কী আকুতি! মৃত্যুভয়‌কে তুচ্ছ করেই মহাকুম্ভে ছুটছে মানুষ। মৃত্যুভয়কে জয় করার নামই কি অমৃত লাভ? সংগৃহীত ছবি

এই মেলা শুধুমাত্র আর সাধুসন্ত, আখড়া, নাগা সন্ন্যাসী বা ধর্মপ্রাণ বা অত্যন্ত ধার্মিক হিন্দু সমাজের মেলা নেই। তীর্থরাজ প্রয়াগে আয়োজিত মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫-ই হলো আসলে বাস্তবের ভারতবর্ষ। নানা ভাষা- নানা পরধান, নানা আচার, বিচার, ধর্ম, বর্ণ, উচ্চ, নীচ, আঞ্চলিকতা, বিভিন্নতা, উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সব কিছুর বাইরে গিয়ে এই মেলা হলো বাস্তবের ভারতবর্ষ। এই মেলাকে অস্বীকার করার অর্থই হলো ভারতকে অস্বীকার করা। এই মেলাকে কটাক্ষ করার অর্থই হলো ভারতীয় দর্শন ও ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আবেগকে অসম্মান করা।

বলা ভাল, এই মেলা কেবলমাত্র ভারতেই সীমাবদ্ধ নেই। এই মেলা নেপাল, ভুটান থেকে শুরু করে একাধিক প্রতিবেশী রাষ্ট্র, পশ্চিমা রাষ্ট্রকেও একসূত্রে গ্রথিত করেছে। তাই এই মেলায় জনসমাগম ভারত ও চীনের জনসংখ্যা ছাড়া বিশ্বের সকল দেশের মোট জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছে।

চলবে…

 

লেখক পরিচিতি: সাংবাদিক ও উপস্থাপক হিসেবে শুরু। এখন সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক নেতা। প্রকাশ ফাউন্ডেশনের রাজ্যসভাপতি। মহাকুম্ভ থেকে ফিরে নিজের উপলব্ধির কথা জানাচ্ছেন। যা একান্তই লেখকের ব্যক্তিগত।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *