বর্ষায় ডুয়ার্স অপরূপা, এসে দেখে নয়ন জুড়ান

বর্ষায় ডুয়ার্স অপরূপা, এসে দেখে নয়ন জুড়ান


আমাদের হিমালয়ের পাদদেশে তরাই ডুয়ার্স এই ভরা বর্ষায় নতুন সাজে নতুন রূপে প্রকৃতির মাঝে যেন অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর হয়ে ওঠে। আপনি মুগ্ধ হয়ে যেতে বাধ্য। পূর্ব ডুয়ার্স থেকে পশ্চিম ডুয়ার্স সংকোশ থেকে তিস্তার মাঝে কালজানি, রায়ডাক, তোরসা, জলঢাকা, বাসরা, লিস্, ঘিস্, ডায়ানা, নেওড়া, মাল, ডুডুয়া, ঘাটিয়া, ধারসি, ডিমা, ডিমডিমা, রেতিখোলা, গাঙ্গুটিয়া, শিলতোর্ষা সহ প্রায় দুই ডজন ছোট বড় মাঝারি নদীর মাঝে এক অপরূপ দৃশ্য দেখতে হলে একদিনে ঘুরে ফেলা যায় এই জায়গাগুলি।

ডুয়ার্সের নদীগুলি পাহাড় থেকে নেমে আসা সবুজ চা বাগানের মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘন কর্দমাক্ত জল,দুপাড়ে চা বাগানের সবুজ গালিচা,মাথার উপর কালো মেঘ মাঝে মাঝে ঝিরিঝির বৃষ্টি। তবে এই সময় ডুয়ার্সের জঙ্গল বন্ধ থাকে, সাফারি চলাচল করে না। আক্ষেপের কিছু নেই নিউ-জলপাইগুড়ি থেকে সংকোষ কামাখ্যাগুড়ি প্রায় দেড়শ কিলোমিটার তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে উপভোগ করা যায় ভিন্ন স্বাদের মাধ্যমে।

বর্ষায় বনের গহনে ঢোকা নিষেধ তবে বর্ষাস্নাত ডুয়ার্সের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য বনের ভেতরে ঢোকার দরকারই পড়ে না।

পর্যটকরা এই সময় এলে এখানকার মনমোহিনী সবুজ শ্যামল অপরূপ প্রাকৃতিক ছবি মনের ও আসল ক্যামেরায় ধরে রাখতে পারবেন । অনেকে যারা বলে থাকেন বর্ষায় ডুয়ার্স বন্ধ থাকে তারা আসলে ডুয়ার্সের প্রকৃতির রূপ কখনো দেখেনি। জিপ সাফারি বা হাতি সাফারি এই সময় বন্ধ থাকে বলে এই সময় ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখার কি কিছু নেই? একথা একদম ঠিক নয়। শরৎ হেমন্ত অর্থাৎ শীতের আগমনের সময় এলে ডুয়ার্সের কোথাও এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া দুর্লভ।‌ রাতের জঙ্গলের অন্ধকারে এক ঝাঁক জোনাকির আলো, টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ, মেঘের দল নেমে এসেছে, সন্ধ্যার টিপ টিপ বৃষ্টিতে পকোড়া,মোমো আর হাতে গরম চা কিংবা স্যুপ হঠাৎ কানে ভেসে এলো ময়ূর কিংবা কোন বন্য প্রাণীর ডাক। এ যেন এক পরম উপলব্ধি আর অনুভূতি আর কি চাই?

এরপর আছে রাস্তা পার হতে কিংবা ভিস্টাডোমে যেতে যেতে দেখে ফেলা একপাল বাইসন, শম্বর হরিন, বন্য বরাহ কিম্বা কোন বন্য প্রাণী রাস্তা পারাপার করছে , অথবা নিউ জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি সেবক পেরিয়ে ভিস্টাডোমের ফাইবার গ্লাসের ভেতর থেকে একে একে মহানন্দা জঙ্গল চাপরামারি পেরোতে পেরোতে নানান রংয়ের পাখি হর্ন বিল,বন ময়ূরীরা পেখম তুলে বর্ষার দিনগুলিতে পর্যটকদের স্বাগত জানাবে এই দৃশ্য বিরল না হলেও অত্যন্ত আনন্দদায়ক। সেবক মহানন্দার পাহাড়ি ঝরনা বা ঝোড়ার স্রোতের চলমান ছবি আপনাকে মুগ্ধ করবে। প্রেমে পড়বেন ডুয়ার্সের প্রকৃতির।এভাবেই জলদাপাড়া হয়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলের সৌন্দর্য আপনাকে এনে দেবে এক আলাদা আনন্দের অনুভূতি।

ডুয়ার্স এমনিতেই রূপসী। আর বর্ষাস্নাত ডুয়ার্সের রূপ থেকে চোখ ফেরানোই দায়।

অতএব ডুয়ার্সের অপরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হলে এই ডুয়ার্স ভ্রমনের সেরা সময় হলো বর্ষা। আর দেরি নয়,এই সময় ভীড় কম পরম শান্তিতে ঘুরে যাওয়ার সেরা সময় বর্ষা। সবুজ গালিচায় ঢাকা চা বাগান ও জঙ্গল যারা ভালবাসে প্রকৃতির মাঝে সেই জানে বর্ষায় জঙ্গলের এই ভালোবাস কত না রোমান্টিক। অবশ্য এই অনুভূতি পেতে হলে ছুটে আসতে হবে ডুয়ার্সে। বর্ষায় বন্ধ থাকে ডুয়ার্স তা আবার হয় নাকি? বাকিটা জানতে হলে আপনাকে ছুটে আসতে হবে উত্তরের ফুসফুস বন জঙ্গলের রাজধানী সবুজ গালিচা সমৃদ্ধ ডুয়ার্সে।

Feature and others Images- Arun Kumar.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *