ডেস্ক রিপোর্ট: সন্দেশখালিতে নাকি ধর্ষণের ঘটনাই ঘটে নি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশে মহিলাদের দিয়ে জোর করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কোনও একটি পোর্টালের করা স্টিং অপারেশনের ভিডিও সামনে এনে দাবি তৃণমূলের। ভিডিওতে সন্দেশখালি-২ ব্লকের বিজেপির মন্ডল সভাপতি গঙ্গাধর কয়ালকে এ’সব কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। সন্দেশখালির ঘটনা আদালতে বিচারাধীন এবং হাইকোর্টের নির্দেশে এ নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। কিন্তু তৃতীয় দফা ভোটের আগে স্টিং ভিডিওকে হাতিয়ার করে সন্দেশখালির মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে বাজার গরম করতে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল। যদিও শুভেন্দু অধিকারী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, স্টিং ভিডিও অভিষেক ও আইপ্যাকের যৌথ ষড়যন্ত্রের ফল। শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা জানান, “এটা কয়লা ভাইপো, আইপ্যাকের প্রতীক জৈন এবং তমাল বলে একজনের দ্বারা নির্মিত। তমাল এখন পোর্টাল চালায়, আগে একটা ইলেকট্রিক চ্যানেলে ছিল। এরা মিলে এটা করেছে।”
গঙ্গাধর কয়াল ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, স্টিং ভিডিওর কন্ঠস্বর তাঁর নয়। তাঁর মুখে আলাদা করে কথা বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ গঙ্গাধরের। শুভেন্দু অধিকারীও বলেন, “গঙ্গাধর কয়াল সিবিআইয়ের ডিরেক্টারের কাছে ইতিমধ্যেই লিখিত কমপ্লেন মেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। সিবিআই অফিসেও যাচ্ছেন। স্টিং ভিডিও নিয়ে ভাইপোর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিতে তিনি সন্দেশখালি থেকে রওনা দিয়ে কলকাতায় পৌঁছেও গেছেন।” বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, “পুরোপুরি অসৎ উদ্দেশ্যে এই ভিডিও ছাড়া হয়েছে। এই সমস্ত সাজানো ভিডিও পাবলিক খাবে না। পুরো বিষয়টা নিয়ে আমরা অনেক দূর পর্যন্ত যাবো।”
সন্দেশখালির ঘটনা মিথ্যে ও সাজানো প্রমাণ করতে তৃণমূল ভিডিও ছেড়ে সেখানকার নির্যাতিত মহিলাদের অপমান করল বলে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, “সন্দেশখালির লড়াইয়ের মুখ হচ্ছেন নিপীড়িত মহিলারা। একজন নিপীড়িত মহিলার ঘটনা নয়। ৩৭৯টার মতো কমপ্লেন হয়েছিল। কিছু পুলিশের কাছে। কিছু প্রিয়াঙ্কা টিবড়েওয়ালের নেতৃত্বে হাইকোর্টের যে মহিলা আইনজীবী দল ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে।” বিরোধী দলনেতা সাংবাদিকদের জানান, “এখন তৃণমূল ফেক ভিডিও ছড়িয়ে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যে প্রমাণ করতে চাইছে। অথচ রাজ্য পুলিশের কাছেও নারী নির্যাতনের বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। সরকার দাবি করেছে, ২৩৯টা জমি তারা ফেরত করিয়েছে। পুলিশ নিজে তিনটে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির এফআইআর ট্রিট করেছে। তাহলে সব কি মিথ্যা?”
লোকসভা ভোটে হারার ভয়ে তৃণমূল সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে অভিযোগ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু অধিকারী কটাক্ষ করে বলেন, “আমার খুব ভাল লাগছে এটা দেখে যে, এই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা পিসি আর ভাইপো- দু’জনের পায়েই দুটো বড় কাঁটা ঢুকিয়ে দিয়েছে। দু’জনেই তা ধিন ধিন করে নাচছে।” শুভেন্দুর হুঙ্কার, “আরও নাচাবো। পিসিকে প্রাক্তন করব। আর ওই আলালের ঘরের দুলাল; কয়লা খায়, বালি খায়, গরু পাচার করে, মদের বোতল থেকে টাকা তোলে, চাকরি বিক্রি করেছে, ওকে জেলে পুরব। বলে বলে জেলে পুরব।”
সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহানের বাহিনীর হাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নারীদের উপর নির্যাতনের অভিযোগে গোটা রাজ্য উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। তৃতীয় দফা ভোটের আগে অত্যন্ত স্পর্শকাতর এই ইস্যুকে মিথ্যে বলে নস্যাৎ করে তৃণমূল কোন রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে, তা স্পষ্ট। স্টিং ভিডিও নিয়ে মমতা ও অভিষেক- দু’জনেই মুখ খুলেছেন। দু’জনেই বলতে চাইছেন, সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা মিথ্যে এবং বিজেপির পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের বিচারাধীন মামলা নিয়ে রাজ্যের শাসকদলের এই অবস্থান, তাদের জন্য বুমেরাং হয়েও উঠতে পারে।
Feature graphic is representational and created by NNDC.