আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তানে চিনের নাগরিকদের কোনও নিরাপত্তাই নেই! মঙ্গলবার সকালে ইসলামাবাদ থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের দাসুতে ফেরার পথে আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় নিহত পাকিস্তানে কর্মরত পাঁচ চিনা ইঞ্জিনিয়ার। দাসুতে বেইজিংয়ের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশ হিসেবে একটি জলাধার ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে যুক্ত ছিলেন তাঁরা। চিনের ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি কনভয় যখন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে নির্মাণস্থলের দিকে ফিরছিল, তখন শাংলা অঞ্চলের বিশাম তহশিল এলাকায় বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে কনভয়ের ভেতরে ঢুকে পড়ে আত্মঘাতী হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনায় চিনা ইঞ্জিনিয়ারদের বহনকারী গাড়ির পাকিস্তানি চালকও নিহত হয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
‘চিন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর’ (সিপেক)-এর অধীনে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ প্রকল্পে পাকিস্তান জুড়ে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে বসে আছে বেইজিং। এই প্রকল্পেরই একটি অংশ দাসুর জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিশাল জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করছে ‘চায়না গেজুবা গ্রুপ কোম্পানি’। চিনা ইঞ্জিনিয়ারদের নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি থাকার পরেও জঙ্গি হামলা বন্ধ নেই। ২০২১-এ দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্মীদের বহনকারী একটি বাসে বোমা বিস্ফোরণ ঘটলে নয় চিনা নাগরিক সহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়। সেই ঘটনায় নিহত চিনা ইঞ্জিনিয়ারদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা টাকা গচ্চা দিতে হয়েছিল পাকিস্তান সরকারকে।
২০২১-এর মে মাসে চিন সরকার নির্মিত করাচির কনফুসিয়াস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মীদের নিয়ে ফেরার পথে একটি মিনিবাসে হিজাব পরিহিত এক বালুচ মহিলা আত্মঘাতী হামলা চালালে তিনজন চিনা শিক্ষক সহ চারজন নিহত হয়েছিলেন। ওই বছর এপ্রিলেই কোয়েট্টার একটি অভিজাত হোটেলে পাকিস্তানে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত আয়োজিত পার্টিতে আত্মঘাতী বোমা হামলায় চারজন নিহত ও বহু আহত হয়েছিলেন।
মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের পর চিনা ইঞ্জিনিয়ার বহনকারী গাড়িটি খাদে গড়িয়ে পড়ে এবং তাতে আগুন ধরে যায়। নিহত পাঁচ চিনা নাগরিকদের মধ্যে একজন নারীও আছেন বলে দাসু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মুখপাত্র ডঃ রহমত আলী জানিয়েছেন। মৃতদের দেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ইসলামাবাদে পাঠানো হয়েছে।
পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি হামলায় নিজের দেশের নাগরিকদের বেঘোরে প্রাণ যাওয়ায় ক্ষুব্ধ চিন। ইসলামাবাদের কাছে অবিলম্বে এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও জড়িত সকলের কঠোর শাস্তি দাবি করেছে বেইজিং। হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে মৃতদের পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি। এক্স হ্যান্ডেলে জারদারি লিখেছেন, “পাকিস্তান বিরোধী শক্তি কখনোই চিন-পাক বন্ধুত্বের ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না।”
Feature image is collected and graphic designed by NNDC.