ডেস্ক রিপোর্ট: বুধবার রাতে মিনাখাঁর বামনপুকুর এলাকা থেকে শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যদিও বৃহস্পতিবার সকালে যে বাদশাহি মেজাজে শাহজাহানকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে উঠতে দেখা গিয়েছে, তাতে রাজ্যের মানুষ বলাবলি শুরু করেছেন, ইনি ধৃত আসামি না পুলিশের এসপি! এদিন সন্দেশখালি রওনা হওয়ার আগেই শাহজাহানকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যদিও শেখ শাহজাহানকে যে পুলিশ গ্রেফতার করতে চলেছে, এই সংবাদ বুধবার দুপুরেই রাজ্যের জনগণকে দিয়ে দিয়েছিলেন শুভেন্দু। শাহজাহানের গ্রেফতারকে গ্রেফতার বলতে রাজি নন বিরোধী দলনেতাও। তিনি বলেন, ‘‘এটা গ্রেফতার নয়, মিউচ্যুয়াল অ্যাডজাস্টমেন্ট। রাজকীয় ভাবে থাকবেন শাহজাহান। মোবাইল ফোনে এলাকা কন্ট্রোল করবেন।’’
শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ার পর সাধারণ মানুষ সাদা চোখে যা দেখতে পেয়েছেন, তা তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বুধবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শাহজাহানের গ্রেফতার নিয়ে শুভেন্দু যা যা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, তার বিশেষ অন্যথা হয় নি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শাহজাহানের গ্রেফতার নিয়ে বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘পুলিশের যে দল পরশু দিন (মঙ্গলবার) রাত ১২টার সময়ে শাহজাহানকে তুলেছে, সেই দলে আমার লোক ছিল। সকালেই তারা আমায় খবর দেয় যে, ফলতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডিআইজি বারাসত রেঞ্জ ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের গাড়িতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘শাহজাহানকে আবার এখানে বসিরহাটের মিনাখাঁতে আনে। তার আগে আকুঞ্জিবাগানে ওঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দেখা করায়। এবং বাড়ির লোকেদের উনি বলেছেন, আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। তোমরা এখন শান্ত থাকো। আইনের উপরে ভরসা রাখো। আমি ফিরে এসে সব ঠিকঠাক করব।’’
পুলিশের ভেতরে বিরোধী দলনেতার সোর্স
অবাক করার মতোই বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিন শাহজাহানকে দশ দিনের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হলেও তার বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের মামলা দেওয়া হয় নি। শুধু ইডির আধিকারিকদের উপরে হামলার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। অথচ সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় এখন গোটা বাংলা উত্তাল। শাহজাহান শেখের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের আসল অভিযোগ রেশন দুর্নীতি নিয়ে। এই মামলার তদন্তেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন ইডির আধিকারিকেরা। বুধবার রাতে শাহজাহানের গ্রেফতারের পর থেকে বৃহস্পতিবার তাকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা- পুরো ঘটনাক্রম দেখে সাধারণ মানুষের মনে ক্রমেই এই ধারণা দৃঢ় হচ্ছে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদাধিকারীর কাছ থেকে আশ্বস্ত হওয়ার পরেই পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছেন শেখ শাহজাহান।
এখন যেন তেন প্রকারে ইডি-সিবিআইয়ের হাত থেকে বাঁচতে চাইবেন শাহজাহান। এই মুহূর্তে রাজ্য পুলিশের হেফাজতে গেলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির হাত থেকে তিনি রক্ষা পেতে পারেন, এই হিসেব থেকেই লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে আগেই শাহজাহান পুলিশের কাছে নিজেকে সোপর্দ করলেন বলে অনেকের ধারণা। বিরোধীরা মনে করেন, নবান্নও চায় না শেখ শাহজাহানকে ইডি-সিবিআই হাতে পাক। দুই কেন্দ্রীয় এজেন্সি যাতে সহজে শেখ শাহজাহানকে হেফাজতে নিতে না পারে, এখন রাজ্য পুলিশ নবান্নের ইশারায় সেই চেষ্টাই করবে বলে মনে করেন শুভেন্দু অধিকারী।
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, “অবিলম্বে শাহজাহানকে ইডি-সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে।” এই সেদিনও বিধানসভায় দাঁড়িয়ে যে শাহজাহান শেখকে ‘ডিফেন্ড’ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী সেই শাহজাহান গ্রেফতার হতেই তাকে ছ’বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড করে দিয়েছে তৃণমূল। সন্দেশখালিতে নারী নির্যাতনের ঘটনায় দুই চব্বিশ পরগনায় জনগণ ক্ষোভে ফুঁসছে। লোকসভা ভোটের মুখে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতেই শাহজাহানকে তৃণমূল সাসপেন্ড করল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তৃণমূলের এই পদক্ষেপকে ‘আই ওয়াশ’ ছাড়া আর কিছু বলতে রাজি নয় বিজেপি সহ বিরোধীরা।