কলকাতা: যে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে এলাকার মেয়ে-বউদের নির্যাতন করার অভিযোগ, বিধানসভায় কোনও রাখঢাক না করে ফেরার সেই তৃণমূল নেতার পাশেই দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী! বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শাহজাহানের পেছনে ইডি লেগেছে।” শেখ শাহজাহান নির্দোষ বরং সন্দেশখালিতে গোলমালের পেছনে ইডির চক্রান্ত আছে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এমনটাই অভিযোগ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। সন্দেশখালির চলমান অশান্তির সঙ্গে আরএসএস-এর নাম জুড়ে দিয়ে মমতা বলেন, “সন্দেশখালিতে শাহজাহানকে ‘টার্গেট’ করে ইডি ঢুকল। সেই নিয়ে গোলমাল করে সংখ্যালঘু এবং আদিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা লাগানো হচ্ছে। ওখানে আরএসএসের বাসা রয়েছে।’’
রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে নিয়োজিত ইডির আধিকারিকেরা তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের সন্দেশখালির বাড়িতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন গত ৫ জানুয়ারি। এরপর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন শাহজাহান। তখনও শাহজাহানের পাশে ছিল তৃণমূল। এদিকে দিন কয়েক হল সন্দেশখালি উত্তাল এলাকার মহিলাদের বিক্ষোভের জেরে। স্থানীয় মহিলাদের অভিযোগ মারাত্মক। শাহজাহানের লোকেরা রাতে এলাকার বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে মেয়ে-বউদের তুলে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন করে- এমনই অভিযোগ সন্দেশখালির এসসি-এসটি সম্প্রদায়ের মহিলাদের। দীর্ঘদিন ধরেই শাহজাহান, শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতারা সন্ধ্যের পর থেকে বাড়ি বাড়ি ঢুকে মেয়ে তুলত বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও কোনও সুবিচার পান নি নিগৃহীতাদের স্বামী ও স্বজনেরা।
সন্দেশখালির মহিলাদের অভিযোগ ঘিরে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল। এমনকি দেশেও বাংলার মুখে কালি পড়েছে। কিন্তু রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী এতদিন চুপচাপ ছিলেন। এই নিয়ে বিধানসভার ভেতরে সরব হওয়ায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ ছয় বিজেপি বিধায়ককে সাসপেন্ড করেছেন স্পিকার। অবশেষে বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালি নিয়ে মুখ খুললেন বটে কিন্তু শাহজাহানকে নয় দোষ দিলেন বিরোধীদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এমনিতেই ওটা (সন্দেশখালি) অশান্তিপ্রবণ এলাকা। সেখানে মুখে মাস্ক পরে গোলমাল করা হচ্ছে। বহিরাগতরাই সন্দেশখালিতে এত গোলমাল পাকাচ্ছে।”
এখনও মমতা কেন শাহজাহানের পাশে?
শাহজাহানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঘিরে রাজ্য সরগরম। বিরোধীরা পথে। বৃহস্পতিবারও দলের তিন বিধায়ক সহ সন্দেশখালি ঢোকার মুখে বাধা পেয়ে ফিরে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারী। হাইকোর্টেও প্রশ্নের সম্মুখীন রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা। কিন্তু তারপরেও কেন মমতা শাহজাহানকে আড়াল করে চলেছেন? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের। কোনও কোনও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করছেন, “উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে ভোট ও সংগঠন ধরে রাখতে শাহজাহানের মতো নেতারাই তৃণমূলের ভরসা। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে ঝুঁকি নিয়েও শেখ শাহজাহানের পাশে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ অন্যরকম। বিরোধী নেতারা কটাক্ষ করে বলছেন, “রেশন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শেখ শাহজাহানের পাশে না দাঁড়ালে শাহজাহান সব ফাঁস করে দেবেন। এই ভয়েই নারী নির্যাতনের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরেও শেখ শাহজাহানের হয়ে সাফাই গাইতে হচ্ছে মমতাকে।”
Feature image/graphic is representational.