আর‌ও সাতদিন ইডি হেফাজতে বালু, জামিন দূর অস্ত! জেলে গেলেও মন্ত্রিত্ব থাকবে জ্যোতিপ্রিয়র? - nagariknewz.com

আর‌ও সাতদিন ইডি হেফাজতে বালু, জামিন দূর অস্ত! জেলে গেলেও মন্ত্রিত্ব থাকবে জ্যোতিপ্রিয়র?


কলকাতা: বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আরও সাতদিনের জন্য ইডি হেফাজতে পাঠালেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক। প্রথমদফায় ১০ দিনের হেফাজত শেষে সোমবার সকালে জ্যোতিপ্রিয়কে কোর্টে তোলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। গত ২৬ অক্টোবর গভীররাতে মন্ত্রীকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। পরদিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে জ্যোতিপ্রিয়কে হাজির করা হলে তাঁকে দশদিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এজলাসেই অসুস্থ হয়ে পড়লে মমতার মন্ত্রিসভার এই প্রভাবশালী মন্ত্রীকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রেশন দুর্নীতি মামলায় বালুর বিরুদ্ধে অভিযোগের যা বহর, তাতে জামিন দূরে থাক এক দফাতেই যে তার ইডি হেফাজত শেষ হ‌ওয়ার নয়, তা বালুর আইনজীবী থেকে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সকলের‌ই জানা। তার উপর গ্রেফতার হ‌ওয়ার পর জ্যোতিপ্রিয়র তিন রাত্রি কেটেছে হাসপাতালে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পর্যাপ্ত সময় পান নি তদন্তে নিয়োজিত আধিকারিকেরা। এদিন আদালতে বালুর হয়ে জামিনের দাবি উত্থাপন‌ই করেন নি তাঁর আইনজীবীরা। ইডির আইনজীবী যথারীতি ধৃতকে আরেকদফা হেফাজতে চাইলে তা মঞ্জুর করতে দু’বার ভাবেন নি ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিচারক। ইডির তরফে সাতদিন‌ই চাওয়া হয়েছিল। একদিন‌ও কমান নি বিচারক।

গ্রেফতার হ‌ওয়ার তিনদিনের মাথায় মন্ত্রীত্ব খুইয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দল থেকেও বিদায় করা হয়েছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাপেই যে তড়িঘড়ি বহুদিনের সাথী পার্থকে মমতা ঝেড়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা গোপন নেই। জ্যোতিপ্রিয়র বিষয়েও শক্ত পদক্ষেপ করতে মুখ্যমন্ত্রীর উপরে অভিষেকের চাপ আছে বলে গুঞ্জন। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ইডির হাতে গ্রেফতার হ‌ওয়ার পর মমতা বিস্তর হায়হুতাশ ও বিজেপিকে শাপশাপান্ত করলেও তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের নীরবতা রাজনৈতিক মহলের নজর এড়ায় নি। বরং রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের একটি ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্যে জল ইতিমধ্যেই অনেকটা ঘোলা হয়েছে। পার্থ বলেছেন, “দুর্নীতির যত অভিযোগ উঠেছে সব একুশের আগে। একুশে তৃতীয় তৃণমূল মন্ত্রিসভা গঠনের পর থেকে কোনও অভিযোগ নেই।” মমতার মন্ত্রিসভায় যাঁরা অভিষেক অনুগত, পার্থ ভৌমিক তাঁদের অন্যতম। রাজনৈতিক মহলের অনুমান, পার্থর গলা দিয়ে কথাটা অভিষেক‌ই বের করিয়েছেন। একুশের আগে করা তৃণমূল মন্ত্রীদের পাপের দায় কি তবে অভিষেক নিতে চাইছেন না?

তৃণমূলের ভেতরে বালুর সঙ্গে মমতার যতটা নৈকট্য ততটাই দূরত্ব অভিষেকের। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বালুর উইকেটটি ফেলতে পারলে রাজ্য মন্ত্রিসভার ভেতরে অভিষেকের কর্তৃত্ব আরও দৃঢ় হ‌ওয়ার সুযোগ আছে। শুক্রবার হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “আমি চক্রান্তের শিকার। বিজেপি আমায় ফাঁসিয়েছে। মমতাদি-অভিষেক সব জানে।” মমতা-অভিষেক কী জানেন, সেটা অবশ্য খোলসা করেন নি জ্যোতিপ্রিয়। এদিকে তাঁর নাম নিয়ে টানাটানি করায় অভিষেক বালুর উপর চটেছেন বলেই খবর। সোমবার আদালতে যাওয়ার পথে জ্যোতিপ্রিয় একবার বলেছেন, “আমি মুক্ত। আমি মুক্ত। ইডি বুঝতে পেরেছে যে, আমি মুক্ত।” আরেকবার বলেছেন, “আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ। আমি নির্দোষ।” দশদিনেই জ্যোতিপ্রিয়র আগের মেজাজ উধাও। তাঁকে খানিকটা বিভ্রান্ত বলেই মনে হয়েছে।

সাতদিনের ইডি হেফাজত শেষ হলেই বালুকে যে জেল হেফাজতে পাঠানো হবে, এই ব্যাপারে আইনজীবী মহলের সংশয় নেই। একবার জেলে ঢুকলে রাজ্যের বনমন্ত্রী কবে বাইরে আসবেন বলা মুশকিল। খুব বেশি দিন পর্যন্ত অভিষেকের চাপ উপেক্ষা করে বালুকে মন্ত্রিসভায় রেখে দেওয়া মমতার জন্য কঠিন হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Feature image- NNDT.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *