ডেস্ক রিপোর্ট: কেরলে পিনারাই বিজয়নের সরকার আবার ব্যতিব্যস্ত ভাইরাসের জ্বালায়। তবে এবার কোভিড নয় ‘নিপা’ ভাইরাস। নিপার সংক্রমণ ঠেকাতে কোঝিকোড় জেলায় ‘কনটেনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন। জারি করা হয়েছে নানা বিধিনিষেধও। কেরলে এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের দেহে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দুই নিপা আক্রান্তের মৃত্যুর কথাও স্বীকার করে নিয়েছে কেরল সরকার। কম করেও ৭০০ জন মানুষ কোনও না কোনও ভাবে এই পাঁচ নিপা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসেছে বলে জানতে পেরেছে স্বাস্থ্য দফতর। আর এই বিষয়টিই তাদের উদ্বেগে ফেলেছে বলে সংবাদ মাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন কেরলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিনা জর্জ।
বুধবার ২৪ বছরের এক স্বাস্থ্যকর্মীর নিপা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তিনি এক নিপা আক্রান্তের সংস্পর্শে এসেছিলেন। নিপা আক্রান্তদের সংশ্রবে আসা ৭০০ জনের মধ্যে ৭৭জনকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এদের ঘরের ভেতরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কোঝিকোড় জেলায় উৎসব-অনুষ্ঠানে বড় জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। শুধুমাত্র অত্যাবশ্যক পণ্যসামগ্রীর দোকান সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জেলার ভাদাকারা তালুকের নয় পঞ্চায়েতের ৫৮টি ওয়ার্ডে ‘কনটেনমেন্ট জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকতে বলা হয়েছে এবং বাইরে থেকেও ওয়ার্ডগুলিতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। কনটেনমেন্ট জোনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় কোনও যানবাহন যাতে না দাঁড়ায়, সেই দিকেও নজর রাখছে পুলিশ।
২০১৮-তে ১৭ জনের নিপায় মৃত্যু কেরলে
কেরলে প্রথমবার নিপা ভাইরাস ছড়িয়েছিল ২০১৮ সালে। সে’বার কোঝিকোড়ে আক্রান্ত ১৮ জনের মধ্যে ১৭জনেরই মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৯ এবং ২০২১-এও বিচ্ছিন্নভাবে নিপা পজিটিভ কেসের খবর এসেছিল। চলতি সংক্রমণে নিপা ভাইরাসের যে ‘স্ট্রেইন’ আক্রান্তদের দেহে মিলেছে, তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ ‘ভ্যারিয়েন্ট’ বলে জানতে পেরেছেন চিকিৎসকেরা। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম হলেও অধিক মৃত্যুহার চিন্তায় রেখেছে বিশেষজ্ঞদের।
‘জুনোটিক’ ভাইরাস হওয়ার কারণে নিপা প্রাণীদেহ থেকে মানুষের দেহে, মানুষের দেহ থেকে প্রাণীদেহে এবং মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হতে পারে। পচে যাওয়া ফল খেয়েও মানুষ নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে নিপা সংক্রমণের জন্য প্রধানত ফলাহারী বাদুড় বা ‘ফ্রুট ব্যাটস’ ও শুয়োরকেই দায়ী করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা।
মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে নিপায়
জ্বর, কাশি, মাথাধরা, পেশিতে ব্যথা, বমি বমি ভাব ও ঝিমুনি এই রোগের উপসর্গ। সংক্রমণ জটিল আকার ধারণ করলে শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি রোগীর মস্তিষ্কও আক্রান্ত (এনকেফেলাইটিস) হতে পারে এবং এই অবস্থায় চলে গেলে ‘ব্রেনডেথ’-এ রোগীর মৃত্যু ঘটে। নিপা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুহার ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করে। বোঝাই যাচ্ছে মৃত্যুহার যথেষ্টই বেশি। এখনও পর্যন্ত নিপা ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধক আবিষ্কার হয় নি। উপসর্গভিত্তিক ব্যবস্থা ও ‘সাপোর্টিভ কেয়ার’ই চিকিৎসকদের ভরসা।
১৯৯৯ সালে নিপা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে মালয়েশিয়ায়, শুয়োরের খামারের চাষীদের মধ্যে। ২০০১ সালে বাংলাদেশেও নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল। একই বছর শিলিগুড়িতেও মানুষ থেকে মানুষে নিপার সংক্রমণ হয়েছিল বলে ‘হু’র রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে। ২০০১-এ প্রথম সংক্রমণের পর থেকেই নিপা বাংলাদেশে বাৎসরিক সংক্রমণের তালিকায় চলে এসেছে। নিপার প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানী মহলের জোর দেওয়া উচিত বলে মনে করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
Feature image is representational.