RARKPK: পাঞ্জাবি রকির সঙ্গে বাঙালি রানির ১৬০ কোটির প্রেমের গল্প! 'করণ'যে ভাবে উতরোলেন - nagariknewz.com

RARKPK: পাঞ্জাবি রকির সঙ্গে বাঙালি রানির ১৬০ কোটির প্রেমের গল্প! ‘করণ’যে ভাবে উতরোলেন


দুই ভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের চিন্তাভাবনা, রুচিবোধ কীভাবে সমঝোতায় এসে সম্পর্কের সমীকরণ নির্মাণ করবে সেটা নিয়েই গল্প। রিভিউ করলেন ঋতুপর্ণা কোলে-

রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’ দেখলাম। করণ জোহারের সিনেমার নাম এত্ত বড় হয় যে মুণ্ডমাল হিসাবে ডাকাই ভাল। তা ১৬০ কোটিতে ‘RARKPK’ বানিয়ে দর্শকদের কী দিলেন করণ?

রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি: দুই ভিন্ন সংস্কৃতির পরিবারের মধ্যে বৈবাহিক সূত্রে বন্ধনের গল্প। ছবি- সংগৃহীত

ট্রেইলার দেখে সিনেমার গল্প প্রায় সকলের জানা। শিক্ষিত মার্জিত বাঙালি বাড়ির মেয়ে রানির সঙ্গে প্রেম হয় ‘লাউড’ টাইপের পাঞ্জাবি ছেলে রকির। প্রেম তো ঠিক আছে সমস্যা বিয়ে নিয়ে। কারণ দুজনেই মনে করে বিয়ে মানে দুই পরিবারের বন্ধন। কিন্তু দুটো পরিবার এতটাই আলাদা যে দুজনেই বুঝে উঠতে পারে না একে অন্যের পরিবারের সঙ্গে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলবে। তাই দুজনে স্থির করে তিনমাসের জন্য একে অন্যের পরিবারে গিয়ে থাকবে। দুই পরিবারের চিন্তাভাবনা, রুচিবোধ কীভাবে সমঝোতায় এসে সম্পর্কের সমীকরণ নির্মাণ করবে সেটাই মূল গল্প। কিন্তু সেটাই কেবল দেখার বিষয় নয়। দেখার, অনুভব করার বিষয় অন্যকিছু। বলিউড সেগুলোর জন্যই বেঁচে থাকুক।

যে ৪টি কারণে মুভিটি আপনি দেখবেন-

নাম্বার ১, গোটা সিনেমাটায় নজর কাড়বে টোটা…. টোটা…. এবং টোটা। রণবীর নায়ক, তার অভিনয়ের গতিপ্রকৃতি তুলনাহীন। কিন্তু টোটা রায়চৌধুরীকে আপনি বাঙালি হয়ে নতুন করে আবিষ্কার করবেন। লজ্জা পাবেন এটা ভেবে এমন একজন মানুষকে আমাদের পরিচালকরা ব্যবহার করতে পারেন নি। অভিনয়ের পাশাপাশি টোটা যে এত অসম্ভব ভালো নাচতে জানে এই সিনেমাটা না দেখলে অজানাই থেকে যেতে। রণবীর সিং-এর মতো এত জনপ্রিয় নায়কের সঙ্গে সমান তালে নেচে দর্শকের সমস্ত নজর কেড়ে নিতে পারে তা কে জানতো?

নাম্বার ২, অনেকেই মনে করবেন সিনেমাটা নারীবাদী। কিন্তু নারীবাদের সমস্যাগুলোও স্পষ্ট তুলে ধরা হয়েছে। যেটা দর্শককে নতুন করে ভাবাবে। যেমন, সিনেমার প্রথম দিকে রকি যখন রানির সঙ্গে দেখা করতে যায় তখন যে জামা পরে যায় তাতে তার বডিপ্যাক স্পষ্ট দেখা যায়। রানি প্রশ্ন করে ফেললে, রকি উত্তর দেয় একই প্রশ্ন একটা মেয়ের পোশাক নিয়ে করলে সোকলড নারীবাদী রানি কী করতো? রানি উত্তরহীন থেকে যায়। সত্যিই আমরা মেয়েদের পোশাকের স্বাধীনতা নিয়ে গলা ফাটাই। ছেলেদের কানে দুল, স্পাইক চুল, রংচঙয়ে জামা দেখলে নাক সিটকাই। তখন ভুলে যাই পোশাকের স্বাধীনতার কথা। আমরা অনেক সময় নারীবাদ বলতে পুরুষের অনুকরণ বুঝি। তাই দিয়েই নাকি সমানাধিকার হয়। অনুকরণ খারাপ জিনিস নয়। যেটা ভালো সেটা অনুকরণ করাই উচিত। তেমন মেয়েদের ভালো কিছুও পুরুষ অনুকরণ করতে পারে। দেবদাস সিনেমায় মাধুরী – ঐশ্বর্য ডোলারে গানের নাচে আসমুদ্রহিমাচল কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। সেই একই গানে আর একবার কাঁপিয়ে দিলেন রণবীর-টোটা। “নাচে ইয়ে ঘুংড়ু, মেহেন্দি মে পায়েল” এসব কথা গানে আছে তো আছে তাতে জাস্ট বয়েই গেল। দাহাড় সিরিজে সোনাক্ষীর বুলেট চালানোর সিনের মতো এই নাচ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

নাম্বার ৩, কেবল নারীবাদ নয় যেকোনো আদর্শবাদের গালে থাপ্পড় সিনেমাটা। পুরুষতন্ত্রের ধারক বাহক রকির পরিবার ধীরে ধীরে বুঝতে পারে সমাজে পরিবারে মেয়েদের গুরুত্ব। তারা কেবল রান্নাঘরের বাঁদি নয়। অন্যদিকে সোকলড শিক্ষিত মার্জিত সাম্যবাদের আদর্শের উচ্চতম নির্দশন রানির পরিবার রকিকে তাদের বন্ধুবান্ধবদের মাঝে চায় না। পরিচয় দিতে দ্বিধা করে। বাঙালি ভদ্দরলোকের নাক সিঁটকানো স্বভাব করণ জোহরের নজর এড়িয়ে যায়নি। বাঙালির এই স্বভাবতই তার নিজে পায়ে কুড়ুল মারছে। রানির পরিবার সেই ভুল বুঝেছে। বাকি ভদ্দরলোকের পরিবার বুঝলেই মঙ্গল।

নাম্বার ৪, সম্পর্কের সমীকরণ। ধর্মেন্দ্র আর শাবানা আজমিকে এতদিন পর পর্দায় দেখতে পাওয়ার থেকেও বড়ো হয়ে দাঁড়ায় একটা সম্পর্ক। ভারতীয় সমাজ জীবনের একটা বড়ো সমস্যা হলো দুটো মানুষকে বেঁধে দেওয়া হয় আর বলা হয় “যাও সংসার করো” মনের মিল হোক বা না হোক শরীরের মিল হলেই হলো। সূক্ষ্ম চিন্তাভাবনার ধর্মেন্দ্রর (নাম নেই সিনেমায়) জীবন, যামিনীর জীবন বিধ্বস্ত হয়ে যায় দুটো ভুল মানুষের সঙ্গে বাঁধা পড়ে। হঠাৎ দেখা হয় এই দুই মানুষের। জীবনে আসে খনিকের দখিনা বাতাস আর সেটাই হয়ে যায় সারাজীবনের পাথেয়।

করণের নম্বর কাটার ৩টি কারণ-

অনেক প্রশংসা হল। এবার একটু নিন্দের পালা। নাম্বার ১, জয়া বচ্চন তথা ধনলক্ষ্মীর চরিত্রটা পূর্ণতা পায়নি। তার অবান্তর আচরণের পেছনের কারণ কেবল লোভ নাকি অন্যকিছু সেটা আরও পরিষ্কার হওয়া উচিত ছিলো। রকির মা ও বোন পুরুষতন্ত্রের বোঝা বইতে বইতে একেবারে শেষে যেভাবে জ্বলে উঠলো তা অত্যন্ত অতি নাটকীয়। অন্যদিকে রানির মা অঞ্জলি (চূর্ণি গাঙ্গুলি) একজন অধ্যাপক। তিনি জানেন না কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়। তিনি ইংরেজির অধ্যাপক তাই ইংরেজিতেই বেশি কথা বলেন সামনের মানুষ বুঝলো কি বুঝলো না সে নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। এটা কখনোই অধ্যাপক হবার শর্তকে পূরণ করে না।

নাম্বার ২, বাঙালি উদারমনা পরিবার নিয়ে আর একটু রিসার্চ করার দরকার ছিলো করণ জোহরের। ভারতের অন্য রাজ্যের মতো বাঙালিকে গুলিয়ে ফেলেছেন করণ জোহার। বিশ্বমানব বাঙালি সবার প্রথম সংস্কৃতি বিচ্যুত হয়। রানির বাড়িতে ঠাকুর বলতে রবি ঠাকুর, রাজনীতির আলোচনায় বাড়ি মুখর, সাম্যবাদের ধ্বজা পতপত করে উড়ছে, রানির মা ইংরেজিতে ছাড়া কথাই বলছে না, বাবা কত্থক নৃত্যে পারদর্শী, ঠাকুমা লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করছে (এই সমস্ত আচরণ একটাও খারাপ আমি একেবারেই বলছি না) এমন পরিবার আর যাইহোক দুর্গাপুজোয় কোমর নাচাবে না। এমন বিশ্বমানব বাঙালি পরিবারের কাছে ধর্ম একটি অতি খারাপ বিষয়। এটা করণ জোহর জানেন না।

নাম্বার ৩, বলিউড সবসময়ই চেষ্টা করে সমাজকে একটা পাঠ দিতে। সেই ধারা RARKPK-তে যথেষ্ট বয়ে চলেছে। গানগুলো মনে দাগ না কাটলেও পুরনো দিনের গানের ব্যবহার বেশ ভালো লেগেছে। রকির জামা আর গাড়ির রঙ চরিত্রের মতোই চমকদার এবং পরিবর্তনশীল।

RARKPKকে আমি দেবো ৭/১০

Feature image (graphic) is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *