কলকাতা: বিজেপি বিধায়কের মৃত্যুতে এসএসকেএম- এর বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সকালে এসএসকেএম হাসপাতালে ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যু হয়। বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে রবিবার কলকাতায় এসেছিলেন বিষ্ণুপদবাবু। অসুস্থ হয়ে পড়লে সে’দিনই তাঁকে এসএসকেএম-এ ভর্তি করা হয়। বিজেপি বিধায়কের প্রতি অবহেলা করা হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ। একই অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষও।
বহুদিন ধরেই রাজ্যের সবথেকে সেরা সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অব্যবস্থা, চিকিৎসায় গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। শাসকদলের প্রভাবশালী নেতাদের সুপারিশ না থাকলে এখন এসএসকেএম হাসপাতালে সঙ্কটাপন্ন রোগীদেরও ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। কিছুদিন আগেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত এক যুবককে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মুখ খুলে দলনেত্রীর রোষের মুখে পড়েছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক মদন মিত্র। এবার খোদ বিরোধীদলের বিধায়ককে অবহেলা করার অভিযোগ এসএসকেএম-এর বিরুদ্ধে।
প্রয়াত বিধায়কের পুত্র প্রদীপ্ত রায়ের অভিযোগ, রোগীকে কম্বল-চাদরও দেয় নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রদীপ্ত সাংবাদিকদের জানান, “বাবা আইটিইউতে ভর্তি ছিলেন। রাত দেড়টা নাগাদ ফোন আসে, রোগীকে সিটি স্ক্যান করাতে নিতে হবে। গিয়ে দেখি বাবা বেডে ঠান্ডায় ঠকঠক করে কাঁপছেন। তাঁর শরীরে একটা কম্বল বা চাদর জড়িয়ে দেওয়ারও কেউ নেই!” উডবার্ন ব্লকে অসুস্থ বিধায়ককে সিটি স্ক্যান করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রলি ঠেলারও কেউ ছিল না বলে ছেলের অভিযোগ। নিজেরাই ট্রলি ঠেলে সিটি স্ক্যানের জায়গায় নিয়ে যান বলে প্রদীপ্ত জানিয়েছেন।
শঙ্কর ঘোষ সহ দলের আরও কয়েকজন বিধায়কের সঙ্গে বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন বিষ্ণুপদ রায়। সতীর্থ বিধায়কের চিকিৎসায় গাফিলতি হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান শঙ্কর ঘোষের। শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক বলেন, “বিষ্ণুদাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারব, এই ভরসাটুকু ছিল। কিন্তু পারলাম না। কেন পারলাম না , সেটা চিকিৎসরাই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু এখানে রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের চিকিৎসা নিয়েও গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ করেছিলেন। বলেছিলেন এখানে রোগী নিয়ে আসা উচিত নয়। যদিও পরে চাপের মুখে মত পাল্টে ফেলেন। এখন বিষ্ণুদার চিকিৎসা নিয়েও অভিযোগ উঠল।” ধূপগুড়ির বিজেপি বিধায়কের চিকিৎসা নিয়ে পরিবারের তরফে ওঠা সব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন শঙ্কর।
শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় রবিবার রাতে বিষ্ণুপদ রায়কে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তাঁর দেহে একটি ছোট অস্ত্রপচার হয়েছিল বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। অস্ত্রপচারের পর থেকে অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছিল বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। কিন্তু সোমবার গভীর রাতে থেকে হঠাৎ করে বিধায়কের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে সব শেষ। হৃদরোগে বিজেপি বিধায়কের মৃত্যু হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিধায়ক মিতালি রায়কে পরাজিত করে ধূপগুড়ি থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিষ্ণুপদ রায়। ধূপগুড়ি থেকে বিজেপির প্রতীকে নির্বাচিত প্রথম বিধায়ক তিনি। বিধায়ক বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। টুইট করে প্রয়াত বিধায়কের পরিজনদের সমবেদনা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বিজেপির মুরলীধর সেন লেনের দফতরে ও বিধানসভায় দলের প্রয়াত বিধায়কের মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শেষশ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্যরা। বিষ্ণুপদ রায়ের মৃত্যুতে রাজ্য বিজেপিতে শোকের ছায়া। বরাবরই সংঘের আদর্শে বিশ্বাসী বিষ্ণুপদবাবু জলপাইগুড়ি জেলা বিজেপির পুরোনো মুখ।
Feature Image- NNDT.