পঞ্চায়েত ভোটে অনিয়ম করে আদালতে শাস্তির মুখে বিডিও-এসডিওরা, আমলা মহলে আতঙ্ক, পাশে যদিও নবান্ন - nagariknewz.com

পঞ্চায়েত ভোটে অনিয়ম করে আদালতে শাস্তির মুখে বিডিও-এসডিওরা, আমলা মহলে আতঙ্ক, পাশে যদিও নবান্ন


ডেস্ক রিপোর্ট: দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্থায়ী অংশ হচ্ছে আমলাতন্ত্র। কুশলী আমলারা আড়ালে থেকে সাংবিধানিক শাসন ও তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেন। আমাদের দেশে সরকার দলীয় হলেও প্রশাসন নিরপেক্ষ। পশ্চিমবঙ্গে সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা এতটাই ক্ষুণ্ন হয়েছে যে তা আর বিরোধীদের অভিযোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, তাতে আদালতের‌ও সিলমোহর পড়েছে। ইতিমধ্যেই একজন বিডিও ও একজন এসডিওকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের নজরদারিতে আর‌ও এক বিডিওর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সকলের বিরুদ্ধেই এক‌ই অভিযোগ, এরা পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। আরও কয়েকজন বিডিও-এসডিও পর্যায়ের আধিকারিক আদালতে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা।

সংবিধান রক্ষার দায় কি একা আদালতের?

পঞ্চায়েত ভোটে নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে বিডিও-এসডিওরা আদালতে জবাবদিহির মুখে পড়তেই তাঁদের রক্ষায় নবান্নে জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।‌ নবান্ন রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, নবান্ন রাজ্য সরকার না তৃণমূলের সদর দফতর তা বোঝা মুশকিল। মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বসে হামেশাই দলের হয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন বলে বিরোধীদের এই অভিযোগ অসার বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। পঞ্চায়েত ভোটে বিডিও-এসডিওদের ভূমিকা আদালতের আতসকাচের তলায় আসতেই নাকি আমলাতন্ত্রের নিচুতলা থেকে নবান্নে ‘এস‌ওএস’ পাঠানো শুরু হয়েছে। সংবিধান বহির্ভূত কাজ করে সরকারের কোনও আধিকারিক আদালতে শাস্তি পেলে এমনিতে প্রশাসনের সদর দফতরের সেই আধিকারিকের পাশে দাঁড়ানোর কথাই নয়। কারণ, সংবিধান রক্ষার দায় শুধু একা আদালতের নয় প্রশাসনের‌ও।

বিডিও-দের মামলার খরচ কেন দেবে সরকার?

তাহলে রাজ্যের সরকার ও প্রশাসন কেন সেই আধিকারিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, যাঁদের বিরুদ্ধে ভোটে পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে? সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, দিন কয়েক আগেই রাজ্যের সমস্ত জেলাশাসক, মহকুমা শাসক ও বিডিও-দের নিয়ে জরুরি বৈঠক সেরেছেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বৈঠকে আতঙ্কিত বিডিও-এসডিওদের রাজ্যের মুখ্যসচিব আশ্বস্ত করেছেন বলে খবর। পঞ্চায়েত নির্বাচন পরিচালনায় সবথেকে গুরু দায়িত্ব থাকে বিডিওদের। সেই বিডিওদের বিরুদ্ধেই অনিয়মের ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ বিরোধীদের। অভিযুক্ত বিডিওদের অবশ্যই আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে। কিন্তু সরকারের টাকায় তাঁরা দুঁদে উকিল পাবেন কেন? অথচ মুখ্যসচিব অভিযুক্ত বিডিওদের তেমনই আশ্বাস দিয়েছেন বলে ভেতরের খবর।

তাহলে শুভেন্দুর অভিযোগ‌ই কি ঠিক?

পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে খোদ মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীর বিরুদ্ধেই গুরুতর অভিযোগ এনেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দুর অভিযোগ, ভোটে তৃণমূলের হয়ে কাজ করতে বিডিও-এসডিওদের নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যসচিব স্বয়ং! শাসকদলের হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে অনিয়ম করার অভিযোগে যে আমলারা মামলা খাচ্ছেন, তাঁদের উদ্ধারে অতি সক্রিয়তা দেখিয়ে হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী শুভেন্দুর অভিযোগের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়িয়ে দিলেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

আমলাদের বড়কর্তাকে নিয়ে না টানাটানি শুরু হয়

কলকাতা হাইকোর্টে এখনও পঞ্চায়েত মামলা সংক্রান্ত পাঁচ ডজনের বেশি মামলা ঝুলছে। অনেক মামলাতেই অভিযোগের তির নির্বাচনের কাজে যুক্ত আধিকারিক ও পুলিশের বিরুদ্ধে। উলুবেড়িয়া-১ ও মিনাখাঁর বিডিও-র মতো পরিণতি আরও অনেক বিডিও-র জন্য অপেক্ষা করছে বলে আদালতের শুনানির গতিপ্রকৃতি দেখে অনেকের ধারণা। গণনায় কারচুপির অভিযোগে ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগরের বিডিও-কে হাইকোর্টে হাজিরা দিতে হয়েছে। ঝালদার বিডিও এবং জয়েন্ট বিডিও সাহেব‌ও রেহাই পাবেন না বলেই মনে হচ্ছে। গণহারে বিডিওরা উচ্চ আদালতে শাস্তির মুখে পড়লে জল কোন দিকে গড়াবে, তা নবান্ন ঠাহর করতে পারছে না বলে ইঙ্গিত মিলেছে। আদালতে যদি প্রশ্ন ওঠে, কার নির্দেশে প্রশাসনের আধিকারিকেরা দায়িত্ব ভুলে কোনও একটি দলের হয়ে ভোটে কাজ করেছেন, তাহলে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাকে নিয়েও টানাটানি শুরু হতে পারে বলে নবান্নের আমলা মহলের আশঙ্কা।

অভিযুক্ত বিডিওদের পাশে থাকতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়ে থাকতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। গ্রাফিক্স- এন‌এনডিসি

এদিকে ভোটে দলের হয়ে কাজ করে যে আধিকারিকেরা ফাঁপরে পড়েছেন, আইনি লড়াইয়ে তাঁদের সব রকমের সাহায্য করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকেও নির্দেশ গেছে বলে খবর। মুখ্যসচিব থেকে বিডিও- বিপদের দিনে সকলের মনোবল চাঙ্গা রাখার দায়িত্ব তো মমতাকেই নিতে হবে।

Feature image is representational.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *