বন্দিমুক্তি কমিটির লোকেরা কেন চুপ! আদালতে যাওয়ার পথে আবার আক্ষেপ পার্থের - nagariknewz.com

বন্দিমুক্তি কমিটির লোকেরা কেন চুপ! আদালতে যাওয়ার পথে আবার আক্ষেপ পার্থের


কলকাতা: তাঁকে জেল থেকে খালাস করতে বন্দিমুক্তি কমিটি পথে নামুক- এই ইচ্ছা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পার্থর জেলযাত্রার বর্ষপূর্তি হয়েছে রবিবার। সোমবার প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতে ঢোকার মুখে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর আক্ষেপ, “এক বছর ধরে তিনি বিনা বিচারে বন্দি আছেন। অথচ একটি বার মুখ খুলছে না বন্দিমুক্তি কমিটি।” এর আগেও একবার আদালত চত্বরে পার্থ বলেছিলেন, বিনা বিচারে জেল খাটতে খাটতে আমার এই হাল! এখন বন্দিমুক্তি কমিটির লোকেরা কোথায়?”

বন্দিমুক্তি কমিটি পরিচালনা করে মানবাধিকার সংস্থা ‘এপিডিআর’। বিনা বিচারে দীর্ঘদিন ধরে যে রাজনৈতিক কর্মীরা জেলে আটক, তাঁদের মুক্তির জন্য বাম জামানায় বন্দিমুক্তি কমিটি গঠন করেছিল এই মানবাধিকার সংগঠন।‌ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য সোচ্চার থাকা এই সংগঠনের কাছে এখন বারে বারে কাতর আবেদন জানাতে হচ্ছে সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে, যিনি এক বছর আগেও ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যাবিনেটের নাম্বার টু মন্ত্রী।

গত বছর ২১ জুলাইয়ের পরের দিনই পার্থর বেহালার নাকতলার বাড়িতে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। পাশাপাশি পার্থর বান্ধবী অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাটেও অভিযান চালায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি। অর্পিতার দুটি ফ্ল্যাট থেকে শুধু নগদ‌ই উদ্ধার হয়েছিল ৫১ কোটি টাকা! রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর বান্ধবীর বাসায় টাকার পাহাড়ের ছবি দেখে টাস্কি খেয়ে গিয়েছিল বঙ্গের আট থেকে আশি। চাকরি প্রার্থীদের থেকে আদায় করা টাকাই বান্ধবীর বাড়িতে মজুত রাখতেন পার্থ- এমন‌ই অভিযোগ তদন্তকারী সংস্থার। গ্রেফতার হ‌ওয়ার কয়েক দিনের মাথাতেই মন্ত্রিত্ব হারান পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দল‌ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। অভিষেকের চাপে বহু দিনের সহযোগীকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কারে সায় দিতে বাধ্য হন মমতা।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট-এর তদন্ত জারি আছে। এবার সিবিআইকেও তাঁর বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি দিয়েছেন রাজ্যপাল। তদন্তে নেমে ইডি নামে-বেনামে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিপুল সম্পদের হদিস পেয়েছে বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্সি জেলের সলিটারি সেলে সুগার-প্রেসার নিয়ে এই বয়সে একা থাকা সত্যিই কষ্টকর। কিন্তু পার্থের প্রতি সহানুভূতি নেই রাজ্যের মানুষের। রাজনৈতিক কারণে জেলে গেলে নেতাদের দাম বাড়ে। কিন্তু দুর্নীতিবাজ নেতারা জেলের বাইরে থাকলেই পাবলিকের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই এক বছরে বহুবার বিচারকের সামনে কপাল ঠুকেও জামিন পান নি পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলনেত্রী নাম মুখে পর্যন্ত আনেন না। দলের বাকি নেতাদের কাছেও পরিত্যক্ত। অনুগামীরা বিস্মৃত। এমনকি পাড়ার ক্লাবের কর্মকর্তাদের কাছেও পার্থদার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। এখন রাজ্যের এক কালের দোর্দন্ডপ্রতাপ মন্ত্রী মশাইয়ের ভরসা কিনা সুজাত ভদ্র! জেল যন্ত্রণায় জর্জরিত পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সুজাত ভদ্রদের জিজ্ঞাসা করুন। বন্দিমুক্তি আন্দোলনকারীদের জিজ্ঞাসা করুন। এক বছর বিনা বিচারে আছি।‌ আজ তাঁরা মুখ খুলছেন না কেন?”

জনগণের টাকা মারার অভিযোগে জেলবন্দি এমন কারও জন্য এপিডিআর পথে নামবে না বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন। মানবাধিকার কর্মী সুজাত ভদ্রের সাফ কথা, “পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজনৈতিক কারণে বন্দি নন। উনার জন্য আমাদের কিছু করা সম্ভব নয়।” পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিনা বিচারে বন্দি, এই অভিযোগ‌ও মানছেন না সুজাত ভদ্র। নিম্ন আদালতে জামিন না পেলে জামিনের জন্য উচ্চ আদালতে আপিল করতে পার্থকে পরামর্শ দিয়েছেন সুজাত।

Feature Image- Collected.


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *