সরকারের ফাইলে কারচুপি করছে সিপিএমের কোঅর্ডিনেশন কমিটি- অভিযোগ মমতার
কলকাতা: প্রথমে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে দিল্লিতেই ধর্নায় বসবেন তিনি। কিন্তু পরে মত বদলে কলকাতায় বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেডকরের মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় বসার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারের বেলা দুপুর গড়াতেই যথারীতি ধর্না মঞ্চে হাজির মমতা। দু’দিন রেড রোডের ধর্না মঞ্চেই থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক জীবনে ধর্না-অবস্থান ও অনশন একটা বড় হাতিয়ার। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে লাগাতার ধর্না চালিয়েই বামফ্রন্টকে টলিয়ে দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। বাংলায় ক্ষমতায় আসার বারো বছর পর নিয়োগ দুর্নীতি সহ একাধিক ইস্যুতে তাঁর দল ও সরকার যখন নাজেহাল, তখন ঘুরে দাঁড়াতে ধর্নাকেই হাতিয়ার করলেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগেও একাধিকবার ধর্নায় বসেছিলেন। সারদা মামলায় কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে সিবিআই হানা দিলে প্রতিবাদ জানিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ধর্মতলায় ধর্নায় বসে পড়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এমনকি একুশে বিধানসভা নির্বাচনের সময় কমিশন তাঁর প্রচারে ২৪ ঘন্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ময়দানে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দিনভর মৌন অবস্থানে বসে পড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে ভোটগ্রহণের দিন একটি বুথেও তিন ঘণ্টা ধর্না দিয়ে বসে থাকেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবারের ধর্না বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা, রাজ্যের বকেয়া টাকা আটকে রাখা, গণতন্ত্রের কন্ঠরোধ এবং এজেন্সি লাগিয়ে বিরোধী দলের নেতাদের লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে। কর্মসূচির ডাক তৃণমূল দিলেও মঞ্চে একই সঙ্গে তৃণমূলের সুপ্রিমো ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ধর্না মঞ্চে নিজেই এ’কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না মানেই তৃণমূল শিবিরের বড়-মাঝারি-ছোট, সমস্ত নেতাদের উপস্থিতি। এদিন দুপুরে শহিদ মিনারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরও সভা ছিল। সভা সেরেই রেড রোডের ধর্না মঞ্চে চলে আসেন অভিষেক। মঞ্চে উঠে একটি উঁচু আসনে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাঁকে ঘিরে মঞ্চে পাতা গদিতে গোল হয়ে বসেন রাজ্য মন্ত্রীসভার সদস্য ও তৃণমূলের নেতানেত্রীরা।
মমতার ধর্না মঞ্চে বাবুল সুপ্রিয়কে গান ধরতে দেখা যায়। গান করেন আরও কয়েকজন। মমতার লেখা গান বাজে মঞ্চে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি মানেই অভিনবত্ব। মমতার দু’দিনের ধর্নায় বুধবারের অভিনব আকর্ষণ ছিল বিজেপি ‘ওয়াশিং মেশিন’। দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের অভিযোগ, অন্য দলের দাগি, কলঙ্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্তরা বিজেপি নামক ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে পড়লেই সফেদ, সাধু হয়ে বেরিয়ে আসেন। প্রতীক হিসেবে মঞ্চে আস্ত একটি ওয়াশিং মেশিনই নিয়ে হাজির হন তৃণমূলের নেতারা। ওয়াশিং মেশিন বিজেপি বলে সুর করে স্লোগান ধরেন কেউ কেউ। মেশিনে কালো কাপড় ঢুকিয়ে সাদা কাপড় বের করে আনেন মমতা।
সব দোষ কো-অর্ডিনেশন কমিটিকে দিলেন মমতা
ধর্না মঞ্চ থেকে সন্ধ্যায় বক্তৃতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তৃতায় ডিএ আন্দোলনের অবস্থান মঞ্চে বসে থাকা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, “ডিএ আন্দোলনের মঞ্চে বসে আছে চোর ডাকতরা। সব চোর-ডাকাত। যারা চিরকুটে চাকরি পেয়েছে, সব বসে আছে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কো-অর্ডিনেশন কমিটি করতে পারে না এমন কোনও কাজ নেই।” কো-অর্ডিনেশন কমিটির লোকেরাই মন্ত্রীদের ফাইলে গরমিল করে দিয়ে তাঁর সরকারকে বিপদে ফেলছে বলে অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন,” যত যা কাগজ বেরোচ্ছে, সব করছে সিপিএমের কো-অর্ডিনেশন কমিটির লোকেরা।” সিপিএম সরকার থেকে যাওয়ার আগে সব ফাইল পুড়িয়ে দিয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাম আমলের কোনও ফাইল পাবেন না। ২০০৭,০৮,০৯,১০- কোনও ফাইল পাবেন না। কিচ্ছু রাখে নি। সব পুড়িয়ে দিয়েছে।”
Feature Image Source- Collected.