ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইস্তফা দিয়েছেন। বরিসের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে বসার দাবিদার অনেকেই। তাঁদের তিনজন আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনজনের মধ্যে যে কেউ ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে জায়গা পেলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস।
ডেস্ক রিপোর্ট : ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করার পর থেকেই জল্পনা- ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে এরপর কে? বরিস ইস্তফা দিলেও তাঁর উত্তরসূরী এখনও বাছাই করে উঠতে পারে নি রক্ষণশীল দল। রক্ষণশীল শিবিরে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে যাঁরা প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার। শেষ পর্যন্ত কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে বলা মুশকিল তবে যাঁকে নিয়ে বিলেতের রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা তিনি একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ৪২ বছরের ঋষি সুনক। বরিস জনসনের ক্যাবিনেটে গুরুত্বপূর্ণ অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন ঋষি। বরিসের পদত্যাগের পর পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়ে রক্ষণশীল দলের ভেতরে আলোচনা উঠতেই প্রধানমন্ত্রীত্বের দৌড়ে নিজের নাম ঘোষণা করে দেন ঋষি।
মহারানী ভিক্টোরিয়ার দেশে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ভারতের রাজনৈতিক মহলেও ঋষি সুনককে নিয়ে জব্বর আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮০ সালের ১২ মে ইংল্যান্ডের বন্দর নগরী সাউদাম্পটনে ঋষির জন্ম। বাবা যশবীর সুনক। মায়ের নাম উষা। যশবীর এবং উষা, দু’জনের বাবা-মা’ই ছিলেন অবিভক্ত পাঞ্জাবের বাসিন্দা। জীবিকান্বেষণে তাঁরা পূর্ব আফ্রিকায় পাড়ি জমান। যশবীরের জন্ম কেনিয়ায়। উষা জন্মগ্রহণ করেন তানজানিয়ায়। ষাটের দশকে যশবীর এবং উষা- উভয়ের বাবা-মা’ই পূর্ব আফ্রিকা ত্যাগ করে পাকাপাকিভাবে যুক্তরাজ্যে চলে আসেন। যশবীর সুনক পেশায় একজন চিকিৎসক। উষা ফার্মাসিস্ট। ঋষি সুনকের আরও একটা পরিচয়- তিনি ইনফোসিসের কর্ণধার নারায়ণ কৃষ্ণমূর্তির মেয়ে জামাই।
ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিসরে অভিবাসীদের প্রভাব উত্তরোত্তর বাড়ছে। এই অভিবাসীদের বড় অংশই ভারতীয় বংশোদ্ভূত এবং ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত। ঋষি সুনকের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নাম ভাসছে সুয়েলা ব্রেভারম্যান নামে এক নারীর। যুক্তরাজ্য সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ৪২ বছর সুয়েলাও ভারতীয় বংশোদ্ভুত। বাবা ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজ গোয়ানিজ। মা উমা ফার্নান্ডেজ পেশায় নার্স। উমার পূর্ব পুরুষেরা ভারত থেকে রোয়ান্ডায় চলে যান। ক্রিস্টির পূর্বপুরুষেরা পাড়ি জমিয়েছিলেন কেনিয়ায়। ষাটের দশকে ক্রিস্টি এবং উমা বাবা-মায়ের হাত ধরে কেনিয়া ও রোয়ান্ডা ছেড়ে ইংল্যান্ডে চলে আসে। ঋষি সুনকের আগেই প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের দাবি পেশ করেন সুয়েলা।
ঋষি সুনক এবং সুয়েলা ব্রেভারম্যানের মতো প্রধানমন্ত্রীর পদে নিজের দাবি এখনও সোচ্চারে প্রকাশ করেন নি প্রীতি সুশীল প্যাটেল। খানিকটা আড়ালে থাকলেও এই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নারী রাজনীতিককে নিয়েও গুঞ্জন বড় কম নয়। বরিস জনসনের ক্যাবিনেটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো প্রীতির জন্ম ১৯৭২-এর ২৯ মার্চ লন্ডন শহরে। বাবা সুশীল প্যাটেল, মা অঞ্জনা। সুশীলের পূর্বপুরুষেরা গুজরাটে বাস করতেন। ব্যবসার তাগিদে তাঁরা চলে যান আফ্রিকার উগান্ডায়। ষাটের দশকে প্রীতির বাবা-মা উগান্ডা ছেড়ে ব্রিটেনে বসবাস করতে শুরু করেন। নিজের হিন্দু পরিচয় নিয়ে সর্বদাই গর্বিত প্রীতি ভারতের পাশে দাঁড়াতে কখনও কুন্ঠাবোধ করেন না।
বরিস জনসনের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে বসা কারও জন্যই খুব সহজ ব্যাপার নয়। তবে এই তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূতের মধ্যে ঋষি সুনকের পাল্লা অনেকটাই ভারী। বুকিরাও ঋষির হয়ে বেশ ভাল দরই হাঁকাচ্ছেন। প্রীতি প্যাটেলের মতোই নিজের শেকড় সম্পর্কে সচেতন ও গর্বিত ঋষি। হাউস অব কমন্সে শপথ নিয়েছিলেন “শ্রীমদ্ভগবদগীতা” হাতে। ঋষি এবং তাঁর স্ত্রী অক্ষতার মিলিত সম্পত্তির মোট পরিমাণ ৭৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। ব্রিটেনের ধনী দম্পতিদের তালিকার প্রথম স্থানটিই তাঁদের দখলে। রক্ষণশীল দলের তরুণতুর্কীদের মধ্যে ঋষি সুনক অন্যতম। ঋষির যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা এবং দক্ষতা রয়েছে তা স্বীকার করেন দলের অনেকেই। যদিও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ঋষি সুনক নিজের নাম ঘোষণা করার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের সামাজিক মাধ্যমে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন তিনি। একই অবস্থা সুয়েলা ব্রেভারম্যানেরও।
শেষ পর্যন্ত ঋষি বা সুয়েলার মধ্যে কেউ অথবা প্রীতি প্যাটেল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলে তৈরি হবে ইতিহাস। এবার যদি কোনও ভারতীয় বংশোদ্ভূতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ ফস্কেও যায়, কিছু আসে-যায় না। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে অভিবাসীদের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের দাপট যেভাবে বাড়ছে তাতে আগামী দশ বছরের মধ্যে অভিবাসী ঘরের কোনও নেতার ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হওয়াটা একপ্রকার নিশ্চিত বলা চলে।
Photo Credit- Twitter and Facebook.