মহুয়া ধূমপানরত কালীর পোস্টারের হয়ে ওকালতি করে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বলে চারদিকে অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এই ইস্যুতে মাঠে নামতেই অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে মহুয়া মৈত্রের উপর কীভাবে সদয় থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
ডেস্ক রিপোর্ট : কালী বিতর্কে নাক গলিয়ে বেজায় ফ্যাসাদে তৃণমূলের হাই প্রোফাইল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। লীনা মানিমেকালাইয়ের তথ্যচিত্রের পোস্টারে ধূমপানরত মা কালীর ছবি ঘিরে দেশ জুড়ে তোলপাড়। মহুয়া পোস্টারের পক্ষে সাফাই দিতেই চেপে ধরে বিজেপি। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের কয়েক ডজন থানায় মহুয়ার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন বিজেপির নেতারা। এদিকে মহুয়া মা কালী নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতেই চোখ উল্টে দিয়েছে তাঁর দল। তৃণমূল স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে- “কালী নিয়ে করা মহুয়ার মন্তব্য দল কোনও ভাবেই অনুমোদন করে না। বক্তব্যের যাবতীয় দায় মহুয়ার একার।” দল থেকে প্যালা খেতেই দলের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল আনফলো করেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেল ফলো করেই চলেছেন মহুয়া মৈত্র।
মমতা ছাড়া আর কাউকে মানেন না মহুয়া
মহুয়ার এহেন কান্ডকারখানায় স্বাভাবিক কারণেই কৌতুহলের সঞ্চার হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। দলের প্রতি বিরাগ আসার পরেও দলনেত্রীর প্রতি অনুরাগ বজায় রাখা কীভাবে সম্ভব? অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তবে কি মহুয়া তৃণমূলে মমতা ছাড়া আর কাউকে মান্যতা দেন না? বৃহস্পতিবার এই নিয়ে নিজেই মুখ খুললেন মহুয়া মৈত্র। এনডিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মহুয়া যা বলেছেন তার মর্মার্থও দাঁড়ায় এটাই যে তৃণমূলে থাকতে গেলে মমতাকে তোয়াজ করলেই যথেষ্ট। মহুয়া বলেছেন, “দলের ট্যুইটার হ্যান্ডেল আনফলো করলেও তিনি দলনেত্রীর ট্যুইটার ফলো করে যাচ্ছেন।” মা কালী নিয়ে তাঁর মন্তব্য দল ঝেড়ে ফেলতেই দলের সঙ্গে তাঁর যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে সাক্ষাৎকারে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ। তবে বিষয়টি তাঁর ও দলের ব্যাপার বলে মনে করেন মহুয়া। মহুয়া মৈত্র বলেছেন,” আমি দলের একনিষ্ঠ সৈনিক। আরও নির্দিষ্টভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।”
কিন্তু মহুয়ার মন্তব্যে চটেছেন মমতাই
এখন প্রশ্ন হল, কালী বিতর্কে দল পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোর পরেও কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহুয়া মৈত্রের পাশে আছেন? মহুয়া এনডিটিভি-কে বলেছেন,” সমস্যা যা হয়েছে সঠিক জায়গাতেই তার সমাধান হবে।” সঠিক জায়গা বলতে তিনি দলের সুপ্রিমোকেই বুঝিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু সুপ্রিমোও কি মহুয়ার পাশে আছেন? এই কথা কে না জানেন যে, মমতার সম্মতি ছাড়া তৃণমূলে একটি চেয়ারেরও স্থানবদল হয় না। মমতার নির্দেশ ছাড়াই সর্ব ভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল ট্যুইটার হ্যান্ডেলে মহুয়ার মা কালী সংক্রান্ত মন্তব্যের বিরোধিতা করা হয়েছে, এই কথা কেউ বিশ্বাস করেন না। এমনকি মহুয়া নিজেও না। বরং ভেতরের খবর, মহুয়ার আলটপকা মন্তব্যে বেজায় চটেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
মহুয়ার সঙ্গে মমতার দূরত্ব আরও বাড়ল
নাক উঁচু মহুয়ার সঙ্গে দলে কারোরই তেমন বনিবনা নেই। দলনেত্রীও যে মহুয়াকে এখন আর তেমন খাতির করেন না তার প্রমাণও পেয়েছে রাজনৈতিক মহল। কয়েক মাস আগে কৃষ্ণনগরে ভরা সভায় মহুয়াকে ভর্ৎসনা করতে আটকায় নি মমতার। তার পর থেকেই মহুয়াও মমতা থেকে খানিকটা দূরে দূরেই অবস্থান করছেন। বাঙালিহিন্দু স্বভাব শাক্ত, মাকালী অন্ত প্রাণ। মহুয়া ধূমপানরত কালীর পোস্টারের হয়ে ওকালতি করে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করেছেন বলে চারদিকে অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি এই ইস্যুতে মাঠে নামতেই অস্বস্তিতে তৃণমূল। এই পরিস্থিতিতে মহুয়া মৈত্রের উপর কীভাবে সদয় থাকেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
মহুয়াকে আস্কারা দিয়ে নিজের ক্ষতি করবেন কেন মমতা
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। এরপর লোকসভা নির্বাচন। আদিবাসী ভোট হারানোর ভয়ে পারলে মমতা এনডিএ’র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থন জানিয়ে বসেন। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিরাট বিজয় আসলেও রাজ্যের সংখ্যাগুরু ভোটের সিংহভাগ বিজেপির দখলে গেছে। মহুয়া মৈত্রকে আস্কারা দিতে গিয়ে তো আর নিজের সর্বনাশ করতে পারেন না তৃণমূল সুপ্রিমো। তাই মহুয়া শুধু দলেরই নয় দলনেত্রীরও বিরাগভাজন হয়েছেন। ব্যথাটা টের পাচ্ছেন কিন্তু কবুল করতে পারছেন না কৃষ্ণনগরের বাগ্মী সাংসদ।
Photo Credit- Official FB page of Mahua Moitra. Feature image is representational.