বাগ কমিটির রিপোর্ট কি হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র? মধু কি শুধু এসএসসি’র চেয়ারম্যান-সচিবরাই খেয়েছেন? হাতবদল হয়ে আরও উপরমহলে যায় নি?
কলকাতা : একজন-দু’জন-তিনজন এমনকি পঁচিশ জনও নয়, গুনে গুনে ৩৮১জনের নিয়োগই ভুয়ো! এর মধ্যে আবার ২২২জন পরীক্ষাতেই বসে নি কিন্তু নিয়োগপত্র পেয়ে গেছে। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের সামনে পেশ করা জাস্টিস রঞ্জিতকুমার বাগ কমিটির রিপোর্ট থেকে এই তথ্য জানা যাচ্ছে। এসএসসি-র গ্রুপ সি নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল ডিভিশন বেঞ্চ। তদন্ত শেষে এদিন রিপোর্ট জমা দিল বাগ কমিটি। তদন্ত রিপোর্ট পড়ে বিচারপতিদের চক্ষু চড়কগাছ কিনা জানা যাচ্ছে না। যদিও অনেকেই বলছেন এ তো হিমশৈলের অগ্রভাগ মাত্র। ঠিকমতো ঘাঁটা দিলে আরও কত ঘাপলা বেরুবে ইয়ত্তা নেই।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি- সব নিয়োগ নিয়েই দুর্নীতির ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ। প্রাথমিকের টেট নিয়েও একই কথা। হাইকোর্টের মামলার পর মামলা। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডির নিয়োগ সংক্রান্ত ঘোটালা অনেক গভীরে- এটা বুঝতে পেরেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চ। পাছে রাঘববোয়াল জালে ফেঁসে যায়, এই ভয়ে তড়িঘড়ি ডিভিশন বেঞ্চে গিয়ে সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ চায় সরকার। সেই আর্জি পেশ করা মাত্রই মঞ্জুর হলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন হেভিওয়েটরা। সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ এখনও বহাল। তবে বাগ কমিটির রিপোর্ট সামনে আসার পর আম জনতার প্রশ্ন- দিনে দুপুরে এমন ডাকাতির পরেও অপরাধীরা কীভাবে নিশ্চিন্তে ঠান্ডাঘরের হাওয়া খায়?
২২২জন পরীক্ষা না দিয়েই এবং ১৫৯জন পরীক্ষয় পাশ না করেই চাকরি বাগিয়ে নিয়েছে। প্রশ্ন হল এই ৩৮১ জনের কাছ থেকে মধু পান করেছেন কারা? এসএসসি-র বড়-মাঝারি-ছোট মিলিয়ে দ্বাদশ কর্তার নামের তালিকা দিয়েছে বাগ কমিটি। এঁদের মধ্যে আছেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, সচিব অশোককুমার সাহা, প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। জনগণের প্রশ্ন- এঁরা ছাড়া কি আর কেউই লুটের বাতাসা পান নি?
এই ৩৮১ জনের এক-একজন কত টাকা নজরানা দিয়ে নিয়োগপত্র পেয়েছে তা অনুমান করতে কারোরই অসুবিধা হচ্ছে না। বাংলায় এখন চুক্তিভিত্তিক ১০ হাজার টাকার চাকরি পেতেও চার লক্ষ টাকা দক্ষিণা দিতে হয়। ঘুষের বিপুল পরিমাণ টাকা শুধু এসএসসি-র চেয়ারম্যান-সচিবদের মধ্যেই ঘোরাফেরা করেছে, হাতবদল হয়ে ভিটামিন এম আরও উপর মহলে পৌঁছায় নি – এটাও মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে???
নিয়োগ ঘোটালায় জড়িতদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর করার সুপারিশ করেছে বাগ কমিটি। আগামী ১৮ মে মামলার রায় ঘোষণা করার কথা ডিভিশন বেঞ্চের। ডিভিশন বেঞ্চ কী রায় দেয় সেই অপেক্ষাতেই সবাই। যদিও বিরোধীরা এর মধ্যেই বলতে শুরু করেছেন- বাগ কমিটির রিপোর্টে নিয়োগ দুর্নীতির যে ছবি ধরা পড়েছে এরপর সিবিআইকে দিয়ে ছানবিন না করানো পর্যন্ত পর্দার পেছনে থাকা আসল রাঘববোয়ালেরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।
Feature Image is representational.