কলকাতা : এসএসসি নিয়োগ ঘোটালায় ঘেঁটে ঘ রাজ্য সরকার। কীভাবে মুখ বাঁচবে সরকারের, ভেবে উঠতে পারছে না নবান্ন। ইতিমধ্যেই হাইকোর্টের একক বেঞ্চের নির্দেশে চাকরি গেছে মন্ত্রীকন্যার। কন্যার পিতাকে কষিয়ে জেরা করছে সিবিআই। এই নিয়ে পরপর তিনদিন-নিজাম প্যালেসে ডেকে রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকেরা। শনিবার পরেশের জেরাপর্বের মেয়াদ ছিল চারঘন্টা। সকাল দশটা নাগাদ এমএলএ হস্টেল থেকে রওনা দিয়ে নিজাম প্যালেসে ঢোকেন মন্ত্রী। ঘেমেনেয়ে বেরোন দুপুর দুটোর পরে।
তদন্তের গভীরে যেতেই তীব্র দুর্নীতির দুর্গন্ধ
এসএসসি দুর্নীতির তদন্তে যত গভীরে যাচ্ছেন, ততই নাকি অবাক হয়ে যাচ্ছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা। শিক্ষক-গ্রুপ সি-গ্রুপ ডি। প্যানেল শুদ্ধ দুর্নীতি। কোথাও স্বচ্ছতার চিহ্ন মাত্র নেই। শুধু আধিকারিকেরাই ঘাপলায় জড়িত আর বিভাগের মন্ত্রী যিনি ছিলেন, তিনি গঙ্গাজলে ধোয়া তুলসীপাতা- এমনটি মনে করার কোনও কারণ দেখছেন না তদন্তকারীরা। এদিকে শনিবারই স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা কমিটি প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে নতুনকরে এফআইআর দায়ের করল সিবিআই। শান্তিপ্রসাদ ছাড়াও দলে রয়েছেন কমিশনের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, প্রাক্তন সচিব অশোককুমার সাহা, প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৌমিত্র সরকার এবং প্রোগ্রামার সমরজিৎ আচার্য।
হেন অনিয়ম নাই যে শান্তিপ্রসাদরা করে নাই
সবকটার বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২০(বি), ৪১৭, ৪৬৫, ৪৬৮ এবং ৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেছে তদন্তকারী সংস্থা। শান্তিপ্রসাদ সহ অভিযুক্ত সকলের কীর্তিকলাপ অমৃত সমান। অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করা থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল থেকে শূন্যপদ পূরণ এমনকি জাল সুপারিশপত্র দিয়ে ৩৮১ জনের চাকরির ব্যবস্থা করা- এমন কোনও কুকর্ম নেই যা এসএসসির আধিকারিকেরা মিলে করেন নি। ফেল করা প্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে যখন-তখন নিয়োগের ব্যবস্থাকে তো রীতিমতো রেডিমেড বানিয়ে রেখেছিলেন এইসব উচ্চ শিক্ষিত জোচ্চোরের দল।
অভিযুক্তরা গ্রেফতার হবে কবে?
স্কুল সার্ভিস কমিশনের পাঁচ আধিকারিকের বিরুদ্ধে যে সব ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে তার মধ্যে ৪৬৮ ধারা জামিন অযোগ্য। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন- দফায় দফায় এফআইআর তো হল কিন্তু এই গণশত্রুরা জেলে ঢুকবে কবে? আদালত থেকে আদালতে মামলার জটে শেষ পর্যন্ত রেহাই পেয়ে যাবে না তো এরা? জনগণের আরও প্রশ্ন- এত বড় ঘোটালার পেছনে মোট কত টাকার লেনদেন হয়েছে তা খুঁজে বের করা হোক। অনিয়ম করে, ঘুষের বিনিময়ে যারা নিয়োগ পেয়েছিল তাদের চাকরি হয়তো যাবে কিন্তু যারা এই স্ক্যামে জড়িত তাদের সবার শাস্তি হবে তো?
তদন্ত শিকড়ে পৌঁছাবে তো?
অনেকেই বলছেন রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা দফতরের সর্বোচ্চ দায়িত্বপ্রাপ্তকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে এমন দুর্নীতি শুধু শান্তিপ্রসাদ-কল্যাণময়দের মতো আধিকারিকদের পক্ষে করা আদৌ সম্ভব নয়। মানুষ জানতে চান- শেষ পর্যন্ত কতদূর পৌঁছেছে নিয়োগ দুর্নীতির টাকা? কারা কারা লাভবান হয়েছেন এর থেকে? সিবিআই যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তাদের বাইরেও পর্দার পেছনে আরও কোনও বড় মাথা ঘোটালায় জড়িত আছে কিনা, এই সব অনেক প্রশ্ন বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে। আদালতের নির্দেশে চলা সিবিআই তদন্ত নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে কিনা, এখন সেই দিকেই নজর রাজ্যবাসীর।
Feature image is representational.