সুপারি কিলার ধরা পড়েছে। কিন্তু পানিহাটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্তের খুনের নেপথ্যে আসলে কারা? সত্য আদৌ সামনে আসবে তো?
ডেস্ক রিপোর্ট :একই দিনে ভর সন্ধ্যায় দুই কাউন্সিলর খুন রাজ্যে! উত্তর চব্বিশ পরগনার পানিহাটি আর পুরুলিয়ার ঝালদায় সদ্য নির্বাচিত দুই কাউন্সিলরের খুনের ঘটনার পর রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন- বাংলায় কি আবার সত্তরের দশক ফিরে এল? দুটি হত্যাকান্ডের পর ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনার নেপথ্যে কারা জানতে চায় মানুষ। বোর্ড গঠন হওয়ার আগেই দুই দলের দুই কাউন্সিলরের খুন হওয়ার পেছনে আলাদা আলাদা কারণ লুকিয়ে থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
পানিহাটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের সদ্যজয়ী তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্ত। রবিবার সন্ধ্যায় নিজের এলাকার একটি নির্মীয়মান পার্কের কাজের তদারকি শেষে দোকান থেকে পোষ্যের জন্য খাবার নিয়ে ঘরে ফেরার পথে খুন হন অনুপম। একজনের স্কুটির পেছনে বসেছিলেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে অনুপম দত্তের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালায় নীল চেক চেক টি-শার্ট পরা একজন। ঘটনা ঘটিয়েই দ্রুত চম্পট দেয় দুষ্কৃতী। এদিকে ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে অনুপমকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
রাত বারোটারর দিকে পানিহাটির তেঁতুলতলা এলাকার একটি হোগলাবনের ভেতরে নড়াচড়ার শব্দে স্থানীয় বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। হোগলাবন ঘিরে ঝোঁপে আগুন লাগিয়ে দেন স্থানীয়রা। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়। ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে একজন পালানোর চেষ্টা করতেই তাকে ধরে মারধর দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয় জনতা। ধৃতের নাম শম্ভুনাথ পন্ডিত বলে জানা গেছে। তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে খড়দহ থানার পুলিশ। এটি থেকেই শম্ভুনাথ কাউন্সিলরকে গুলি চালিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। শম্ভুনাথের বাড়ি নদীয়ার হরিণঘাটায়। সে যে ভাড়াটে খুনি তাতে কারও সন্দেহ নেই।
এদিকে কাউন্সিলর অনুপম দত্তের খুনের পর থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের শেষ নেই। খুনের নেপথ্যে আরও অনেকের হাত থাকার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিললেও ধরা পড়েছে এখনও পর্যন্ত মাত্র একজন। এমনকি ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ সজাগ না থাকলে শম্ভুনাথও ধরা পড়ত কিনা সন্দেহ। শম্ভুনাথকে ধরার পেছনে খড়দহ থানার পুলিশের কোনও কৃতিত্ব নেই বলে জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ভাড়াটে খুনিদের সুপারি দিয়ে পানিহাটি পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর অনুপম দত্তকে যে খুন করা হয়েছে তাতে কারও কোনও সন্দেহ নেই। ধৃতকে জেরা করে পুলিশ তা জেনেও গেছে। কিন্তু তারপর? পর্দার পেছনের ষড়যন্ত্রীরা ধরা পড়বে তো?
ঠিক কী কারণে খুন হতে হল শাসকদলের কাউন্সিলরকে? এলাকার একটি জলাভূমিকে ঘিরে প্রোমোটারচক্রের সঙ্গে কাউন্সিলরের বিবাদ চলছিল বলে খবর। জলাভূমি ভরাট করে কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা করছিল প্রোমোটার। অনুপম দত্ত নাকি তাতে রাজি ছিলেন না। এই নিয়ে বিবাদের জেরেই অনুপমের প্রাণ গেল কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। পুরসভা নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে ১২ দিন আগে। এখনও নতুন বোর্ড গঠিত হয় নি রাজ্যের ১০৮ পুরসভায়। নতুন বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরোধিতায় পুকুর ভরাটের কাজ ব্যাহত হবে- এই আশঙ্কা থেকেই কি অনুপম দত্তকে পৃথিবী থেকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়া হল? পেছনে শাসকদলেরই অন্য কোনও প্রভাবশালীর অঙ্গুলিহেলন নেই তো?
Photo Credit – Facebook & NDTV.