তৃণমূলের গৌতম । বামেদের অশোক। বিজেপির শঙ্কর। শিলিগুড়ির দায়িত্ব কে পাবেন ঠিক করবেন জনগণ। তবে শিলিগুড়িতে লড়াই জমে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বিশেষ প্রতিবেদন : ফেলতে পারলেন না বুদ্ধদার কথা। শেষ পর্যন্ত ভোট যুদ্ধে বামেদের সেনাপতির দায়িত্ব নিয়েই ফেললেন অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়ি কর্পোরেশন নির্বাচনে ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াচ্ছেন প্রাক্তন মেয়র এবং রাজ্যের প্রাক্তন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী। ব্যক্তিগতভাবে আর ভোটের লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকার ইচ্ছে ছিল না পোড় খাওয়া এই বাম নেতার। কিছু দিন আগেই হারিয়েছেন স্ত্রীকে। গতবছর নিজেও কোভিড সামলে উঠেছেন। শরীরেও আগের মতোন তেমন ধকল সয় না। বিধানসভায় হেরে মনটাও খানিকটা দমে গেছে। কিন্তু সিপিএম রাজ্য নেতৃত্বের ইচ্ছে ছিল অশোক ভট্টাচার্যকে সামনে রেখেই শিলিগুড়ির পুরভোটে লড়ুক বাম শক্তি। পার্টির কথায় রাজি হচ্ছিলেন না অশোকবাবু। বেগতিক বুঝে পাম অ্যাভিনিউ’র বাসিন্দা সেই মানুষটির শরণাপন্ন হন আলিমুদ্দিনের কর্তারা যিনি ঘরে শয্যাশায়ী থেকেও সিপিএমের অনেক কিছুই এখনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। রবিবার সকালেই শিলিগুড়িতে অশোক ভট্টাচার্যের কাছে ফোন যায় বুদ্ধদেবের।
পার্টির এই দুঃসময়ে ঘরে বসে না থেকে শিলিগুড়ির পুরযুদ্ধে বামেদের হাল ধরতে অশোককে বলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বাম জামানায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের একজন ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য। প্রাক্তন ক্যাপ্টেনের কথা আর ফেলতে পারেন নি শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র। রাতেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আড়ালে নয় সামনে থেকেই লড়বেন। আগামী ২২ জানুয়ারি শিলিগুড়ি সহ রাজ্যের চার পুর কর্পোরেশনে ভোট। মঙ্গলবারই শিলিগুড়ির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করল বামফ্রন্ট। ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়াচ্ছেন অশোক ভট্টাচার্য। ছয় অশোকবাবুর পুরোনো ওয়ার্ড। পনেরোর পুরভোটে ছয় নম্বর ওয়ার্ড থেকেই জিতে মেয়র হয়েছিলেন তিনি।
শিলিগুড়ি শহর তো বটেই শিলিগুড়ি মহকুমা তথা দার্জিলিং জেলার বাম রাজনীতিতে এক সময় অশোকই ছিলেন শেষ কথা। বাম আমলে দীর্ঘদিন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলানো অশোক ভট্টাচার্য পুর প্রশাসনের নাড়িনক্ষত্র জানেন। শিলিগুড়ির উন্নয়নে অশোক ভট্টাচার্যের অবদানের কথা তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও স্বীকার করেন। শিলিগুড়ি থেকে দাঁড়িয়ে অশোক যে হারতে পারেন এটাও অনেকের কল্পনার অতীত ছিল । হয়তো অশোকবাবুর নিজেরও। কিন্তু এগারোর প্রবল বাম বিরোধী হাওয়ায় নিজের রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল অশোক ভট্টাচার্যকে। এগারোর পরাজয়ে না দমে গিয়ে আবার ঘর গোছাতে লেগে পড়েন এই বাম নেতা। পনেরোর পুরভোটে নিজস্ব শিলিগুড়ি মডেলের প্রয়োগ ঘটিয়ে শাসক তৃণমূলকে কিস্তিমাত করেন অশোক। পাঁচ বছর শিলিগুড়ির মেয়র ছিলেন। অনেক চেষ্টা করেও শিলিগুড়ি পুরসভার বাম পরিচালিত বোর্ড ভাঙতে পারে নি তৃণমূল।
ষোলোর বিধানসভায় হেসেখেলে জিতলেও একুশে নিজের রাজনৈতিক শিষ্য শঙ্কর ঘোষের কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পরেই দলের নেতৃত্ব থেকে সরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন অশোক। ভোটে আর দাঁড়াবেন না, এটাই ঠিক ছিল। কিন্তু একদা বামদুর্গ শিলিগুড়ি পুনরুদ্ধারে ৭২ বছরের অশোক ভট্টাচার্যের বিকল্প আর কাউকেই খুঁজে পায় নি সিপিএম। শিলিগুড়ির পুরযুদ্ধে শাসক তৃণমূলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব। বিজেপির সেনাপতি সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে আসা অশোকের হাতে গড়া শিলিগুড়ির বর্তমান বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বামেদের তরী তীরে ভেড়ানোর দায়িত্ব কাঁধে নিলেন শিলিগুড়ি সিপিএমের এক ও অদ্বিতীয়ম সেই অশোক ভট্টাচার্যই । জনগণ এবার কার হাতে শিলিগুড়ির দায়িত্ব দেন , এবার এটাই দেখার। ফল কী হবে সময়ই বলবে। তবে শিলিগুড়িতে লড়াই যে জমে গেল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Photo Credit- Facebook Page of Ashok Bhattacharya.