চন্ডীগড় পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আপ। পাঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন কয়েক মাস পরেই। চন্ডীগড়ের সাফল্যে পাঞ্জাবে পাঞ্জা কষতে মনোবল বাড়বে কেজরিওয়ালের-এমনই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
ডেস্ক রিপোর্ট : বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাঞ্জাবে অক্সিজেন পেল আম আদমি পার্টি। চন্ডীগড় পুরসভার ভোটে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ। শুক্রবার কেন্দ্র শাসিত চন্ডীগড়ের পুরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । সোমবার ছিল ভোট গণনা। সকালে ইভিএম খুলতেই আপের জয়ের খবর আসতে শুরু করে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার যুগ্ম রাজধানী চন্ডীগড়ের প্রশাসন কেন্দ্র নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দ্বারা পরিচালিত হয়। চন্ডীগড় পুরসভার ৩৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতেই জয় পেয়েছে আম আদমি পার্টি। এ’বারই প্রথম চন্ডীগড়ের পুরভোটে লড়াই করল আপ। প্রথমবার লড়তে নেমেই এমন নজরকাড়া ফলে স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত আপ শিবির। কয়েক মাস পরেই পাঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন। চন্ডীগড় পুরসভা ভোটে সাফল্য পাঞ্জাবে আপের মনোবল অনেকটাই বাড়িয়ে দিল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। একই মনোভাব অরবিন্দ কেজরিওয়ালেরও। চন্ডীগড় থেকে সুখবর আসতেই ট্যুইট করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কেজরিওয়াল লিখেছেন, ” চন্ডীগড়ের পুরভোটে আমি আদমি পার্টির এই জয় পাঞ্জাবে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। “
পাঞ্জাবে ভোটের আগে চন্ডীগড় পুরসভার ফল বিজেপির জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। চন্ডীগড় পুরসভার বোর্ড ছিল বিজেপির হাতেই। ২০১৬-য় চন্ডীগড় পুরসভার ২৬ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতেই পদ্ম ফুটেছিল । একটি ওয়ার্ড পেয়েছিল জোট শরিক শিরোমণি অকালি দল। এবার নতুন যোগ হয়েছে ৯টি ওয়ার্ড। কিন্তু বিজেপির আসন কমে হয়েছে ১২টি। শিরোমণি অকালি দলের শক্তি অপরিবর্তিতই আছে । আসন বাড়িয়েছে কংগ্রেসও। ষোলোয় কংগ্রেস পেয়েছিল ৪টি ওয়ার্ড। এবার বেড়ে হয়েছে ৮টি । চন্ডীগড় পুরসভার ১০টি ওয়ার্ডের প্রতিনিধি সরাসরি মনোনীত করেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর । কাজেই শেষ পর্যন্ত পুরসভা কার দখলে যাবে তা এখনই স্পষ্ট নয়। তবে ভোটে আপের সাফল্য নিয়ে কারও দ্বিমত নেই।
পাঞ্জাবকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। রণজিৎ সিংহের রাজ্যে তখত দখল করাই কেজরিওয়ালের লক্ষ্য। পাঞ্জাব নিয়ে আপের উচ্চাশা নতুন নয়। দিল্লি দখল করার পরেই পঞ্চ নদের দেশে শক্তি বিস্তারে নজর দেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। সতেরোতেই পাঞ্জাব দখলের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সফল হন নি। এবার আর ফস্কাতে চান না কেজরিওয়াল। ভোটের মুখে পাঞ্জাবের রাজনৈতিক চিত্র বেশ জটিল। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ শাসক কংগ্রেসের অবস্থা বেশ নড়বড়ে। ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং মুখ্যমন্ত্রীত্ব এবং কংগ্রেস – দুটোই ত্যাগ করে পাঞ্জাব লোক কংগ্রেস নামে পৃথক দল গড়েছেন। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে মোদী-শাহের সখ্যতা মন্দ নয়। অমরিন্দর সিংয়ের সদ্যজাত দলের সঙ্গে জোট গড়ে লড়তে বিজেপির কোনও আপত্তি থাকার কথা নয় ।তবে অমরিন্দর একাই লড়তে আগ্রহী বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
পাঞ্জাব নিয়ে উচ্চাশা বিজেপিরও বড় কম ছিল না। পঞ্চ নদের রাজ্যে নির্ণায়ক শক্তি হয়ে ওঠার বাসনা বিজেপির বহু দিনের। কিন্তু কৃষি আইনের জেরে বিজেপি অনেকটাই ব্যাকফুটে । কৃষি আইনের কারণেই পুরোনো জোটসঙ্গী শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গে বিজেপির আর বনিবনা নেই। যা বিজেপির জন্য একটা বড় ক্ষতি বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কৃষি আইন প্রত্যাহারের পেছনে উত্তরপ্রদেশের পাশাপাশি পাঞ্জাবের ভোটের অঙ্কও যে কাজ করছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আইন প্রত্যাহার করেও পদ্ম পাঞ্জাবিদের মন পাবে এমন নিশ্চয়তা নেই। গোষ্ঠী কোন্দলে দুর্বল কংগ্রেস। কৃষি আইনের জেরে অকালি-বিজেপি দোস্তি খতম। কেজরিওয়ালের ঝাঁটা সবাইকে সাফ করে পাঞ্জাবের মসনদে বসতে পারে কিনা তা সময়ই বলবে। তবে চন্ডীগড় পুরসভায় আপের ভাল ফল যে পাঞ্জাবে অন্যদের চাপে রাখবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
Photo Credit- Twitter.