পুরভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে নিজের দলের মুখ্যমন্ত্রীকে রীতিমতো অপদস্থ করলেন ত্রিপুরা বিজেপির হেভিওয়েট নেতা সুদীপ রায় বর্মন!
আগরতলা : পুরভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে নিজের দলের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করলেন ত্রিপুরা বিজেপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা সুদীপ রায় বর্মন। ভোট প্রচারের শেষদিন মঙ্গলবার রাজধানী আগরতলায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সুদীপ রায় বর্মন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের নেতৃত্বকে শিশুসুলভ বলে কটাক্ষ করেন । সুদীপের মন্তব্যে স্বভাবতই উল্লসিত তৃণমূল শিবির । সুদীপ বলেন,” যা চলছে তাতে দল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদনাম হচ্ছে।” নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সুদীপ রায় বর্মন মনে করেন, ” শিশু সুলভ নেতৃত্ব আসল শত্রুকে চিনতে পারছে না ।” সিপিএমের আমলের গুন্ডারাই এখন বিজেপিতে ঢুকে সন্ত্রাস চালাচ্ছে আর এদের কারণেই মানুষের কাছে বিজেপির বদনাম হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সুদীপ ।
পুরভোটের মুখে তাঁর এইসব মন্তব্য দলকে বিপদে ফেলবে না বলেই মনে করেন সুদীপ রায় বর্মন। দলের ভালোর জন্যই মুখ খুলেছেন বলে দাবি করেন তিনি। ত্রিপুরার প্রাক্তন মন্ত্রী বলেন, ” বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব তাঁর মনকে পীড়া দেয় । মূল শত্রুকে চিনতে ভুল করছে দলীয় নেতৃত্ব। যারা ক্ষোভ , দুঃখে , অভিমানে দল ছেড়ে চলে গেছে, তাদের ফিরিয়ে আনা দরকার। ” কিন্তু তা না করে সেই সব নেতা-কর্মীদের আরও দূরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সুদীপ রায় বর্মন। দলের যে নেতাকর্মীদের জোর করে মুখ খুলতে দেওয়া হচ্ছে না , যারা ভয়ে বলার সাহস পাচ্ছেন না , তিনি তাদের হয়ে আওয়াজ তুলেছেন বলে দাবি করেন সুদীপ। তিনি আরও বলেন, ” আমার রাজনৈতিক জীবন ঘেঁটে দেবে এটা তো হতে পারে না। আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করেছি। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি।”
ত্রিপুরা বিজেপির অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের সঙ্গে সুদীপ রায় বর্মনের ঠান্ডা লড়াই দল ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই। বিপ্লব দেব বিজেপির পুরোনো মুখ । সংঘ পরিবারের কাছের মানুষ। অন্যদিকে ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীররঞ্জন রায় বর্মনের ছেলে সুদীপ অনেক দিন ধরেই রাজ্য রাজনীতির অন্যতম জনপ্রিয় মুখ। ২০১৬-য় ছয়জন বিধায়ক সহ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ত্রিপুরা রাজ্য তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন । ২০১৭-য় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন সুদীপ রায় বর্মন। ত্রিপুরায় বিজেপির ভিত শক্তিশালী করার পিছনে সুদীপের অবদান আছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। আঠারোর বিধানসভা নির্বাচনে যদিও সংঘ ঘনিষ্ঠ বিপ্লব দেবকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রোজেক্ট করে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সুদীপ রায় বর্মনকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী করা হলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সুদীপের ঠোকাঠুকি বন্ধ না হয়ে আরও বেড়েই চলে । শেষে ২০১৯-এর জুন মাসে বিপ্লব দেবের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন সুদীপ।
পুরভোটের প্রাক্কালে সুদীপ রায় বর্মনের মুখে বিপ্লব বিরোধী মন্তব্যে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি তৃণমূল। সুদীপের অভিযোগকে স্বাগত জানিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই সুদীপের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে ট্যুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করার পরেই ত্রিপুরা নিয়ে প্রবল উৎসাহী হয়ে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুদীপ রায় বর্মনকে ফিরে পেতে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে খবর । সুদীপ রায় বর্মন মুখে এখনও বিজেপির প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে চললেও তলে তলে কী চলছে বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। পুরভোটের ৪৮ ঘন্টা আগে বিপ্লব দেবকে অপদস্থ করে সুদীপের সাংবাদিক সম্মেলনের পেছনে অনেক হিসেবনিকেশ আছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Photo Credits- Facebook page of Sudip Roy Barman & Biplab Deb.