ওপারে নষ্ট হল পুজো । পুড়ল দেবালয় । জ্বলল গৃহ । ছারখার হল গ্রাম । মরল সংখ্যালঘু । খুন-ধর্ষিতা হল একরত্তি মেয়ে । এপারে মৌন সুধীজন । মৌনতা সম্মতির লক্ষণ – পাছে ভেবে বসে লোকে । ভয়ে বিলম্বিত প্রতিক্রিয়া দিলেন কেহ কেহ । তাহাদের কেউ জাত কবিও বটে । বড়ই পেলব সেইসব প্রতিক্রিয়া ! কবির বিলম্বিত প্রতিক্রিয়ার প্রতি খোলা চিঠি দিলেন শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় –
প্রাণ নাশ দেখে মৌন থেকেছ সুধী,
রটনা শুনেই যেখানে শিবকে রেখেছ উরুর ফাঁকে
যদিও তোমার হারাবার নয় যশ কিংবা গদি,
স্বল্প আয়াসে অনেক অনেক উপার্জনের ডাকে?
বহু বিলম্ব করে ফেলেছ যে কবি,
এখন স্তাবক ছাড়া আর কোন ভবি
ভুলবে এই কৃত্রিম প্রতিবাদে?
নতুন তো নয় ধ্বংসের এই ছবি,
মৌনতাই দিয়েছে বাতাস এতে
চলেছে কোতল শূন্য বাদানুবাদে।
দাঙ্গা বলছ কাকে? দাঙ্গার মানে জানো?
এক পক্ষের ঘৃণা আর আক্রোশে
আরেক পক্ষ বিরল প্রজাতি মানো? অসার কথার পসার সাজিয়ে কেনো
নিজের মুখোশ নিজেই ফেলছ ছিঁড়ে?
শব্দের জালে সত্যকে আর লুকোনো যাবে না জানো?
পাল্টা ছাড়া পাল্টাবে না তো ক্ষয়,
হিংসার কাছে নতজানু মানে লয়।
মার খাওয়াদের সহিষ্ণুতার বাণী
শুনেই লাগছে ভীষণ ভীষণ ভয়!
এসবের পরও তোমাদের পথ খোলা,
রাজনৈতিক পসরায় খুঁজে নেবে।
মৎস শিকারী যখন গঙ্গা ঘোলা
মীরজ়াফরকে বাংলার ভার দেবে।
পুনশ্চ:
সব শক্তি নিঃশেষ শুধু নিরীক্ষণে,
ধ্বংসের স্তূপে বসে কী হবে সৃজনে?
ভালো থেকো মৃতভোজী দগ্ধ লাশ খেয়ে,
আমি তো নিঃস্ব আজও শব্দ ব্রহ্ম পেয়ে।
- কবি পরিচিতি : বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে সাম্মানিক স্নাতক । বিএড ও এমবিএ-র পর প্রত্যাশিত পেশার পরিবর্তে সাহিত্য জগতেই থিতু হয়েছেন শ্রীপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় । বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সাহিত্যের প্রায় সবকটি শাখায় নিয়মিত অবদান রেখে চলেছেন । লিখেছেন অজস্র ইংরেজী কনটেন্টও । বিজ্ঞান, নৃতত্ব, ইতিহাস, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ রচনা শ্রীপর্ণার অন্যতম অনুরাগ ও দায়বদ্ধতার জায়গা । ছোটগল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের জন্য একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি ।