দিল্লির রঙ্গশালার সাজঘরে কার হয়ে কে চাল দেয় কে জানে ! চব্বিশের পালার জন্য ঠিক কী চিত্রনাট্য রচিত হচ্ছে একুশে আগাম বলে দেওয়া সম্ভব নয় ।
চব্বিশে মোদীকে দিল্লির তখ্ত থেকে সরাতে এখন থেকেই নাকি কোমর বেঁধে নামছে বিরোধীরা । জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি থেকে পেগাসাস , কোভিড থেকে কৃষি বিল – বিরোধীদের হাতে ইস্যুর অভাব নেই এবং সংসদের ভেতরে ও বাইরে এই প্রথম মোদী সরকারকে সত্যিই খানিকটা বিচলিত দেখাচ্ছে । কিন্তু বিরোধীদের সবথেকে বড় সমস্যা তাদের মাথাটা হবেন কে । মোদীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের কোনও মহাজোট তৈরী হলে সঙ্গত কারণেই তার বড় শরিক হওয়ার কথা কংগ্রেসের । আর বড় শরিকের মাথাই হবেন জোটের সহজাত কান্ডারি – এই ফর্মুলায় এগোলে গোল বাধার কোনও কথা নয় । কিন্তু বিরোধী শিবিরে কান্ডারি নির্বাচন যে সহজ নয় তেমনই জানান দিচ্ছে ঘটনার গতিপ্রকৃতি । বিরোধী নেতারা সবাই মোদীকে হটাতে জোট চাইছেন কিন্তু কার মনে কী আছে জানেন কেবল অন্তর্যামী । বাংলায় খেলায় জেতার পর থেকেই দিদির কদর বেড়ে গিয়েছে দিল্লিতে । এখন তিনি ঠিক কী চাইছেন এটাই ঠাহর করে উঠতে পারছে না রাজনৈতিক মহল ।
তৃণমূলের নেতারা বলছেন , নেত্রী এবার দিল্লিতেও খেলবেন । কিন্তু এই খেলায় তাঁর কী ভূমিকা হবে তার উপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। একটি টিম একজন ক্যাপ্টেনের নেতৃত্বেই খেলে । তৃণমূল নেতাদের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে চব্বিশে দিল্লি ম্যাচের ক্যাপ্টেন একজনই । তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এখন প্রশ্ন হল মমতা ক্যাপ্টেন হলে রাহুল কে ? রাহুল গান্ধীকে ক্যাপ্টেন মেনে নিয়ে তিনি খেলতে প্রস্তুত – এমন কোনও সামান্য ইশারাও যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিতে রাজি নন দিল্লিতে তৃণমূলের একাধিক আচরণে তা স্পষ্ট । বৃহস্পতিবার দেশের রাজধানীতে কৃষি আইন , পেগাসাস এবং জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধীদের মিছিলের নেতৃত্ব দেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী । মিছিলে সবাই থাকলেও ছিল না তৃণমূল । রাহুলের যে কোনও ধরণের প্রকাশ্য কর্মসূচীকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা ।
এখন প্রশ্ন হল , চব্বিশে বিরোধী জোটের মুখ যদি রাহুল গান্ধী না হন তবে হবেন কে ? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? মমতা নিজের মুখে এখনও কবুল না করলেও তাঁর যে সেই হাউস আছে ষোলো আনা তা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব চাপিয়েছেন অনুগামীদের ঘাড়ে । মমতা জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ হতে চাইলেই তাঁকে লাল কার্পেট বিছিয়ে বিরোধী শিবিরের অন্যান্য নেতারা স্বাগত জানাতে প্রস্তুত পরিস্থিতি এখনও সেদিকে গড়ায় নি । ভবিষ্যতে গড়াবে এমন কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না । সবথেকে বড় প্রশ্ন , মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ বনে গেলে রাহুল গান্ধী কী করবেন ? তাঁর সামনে তো তাহলে রাজনীতি ছেড়ে বনবাসে যাওয়া ছাড়া রাস্তা থাকে না । রাহুল রাজনীতি ছেড়ে সন্ন্যাস নিলে মমতা খুশি হলেও সোনিয়া তা মানবেন কেন । কপিল সিব্বল , শশী থারুর , পি চিদম্বরমরা রাহুলের নেতৃত্বের অবসান চাইলেও কংগ্রেসের সংসারে এখনও নেহেরু-গান্ধী পরিবারের কর্তৃত্ব অটুট । মমতা চাইলেও কংগ্রেসকে মাইনাস করে কোনও কার্যকরী বিরোধী জোট সম্ভব নয় । আবার কংগ্রেসকে জোটের নেতৃত্বে রেখে অকংগ্রেসী কাউকে জোটের মুখ করার বাসনা কারও মনের কোণে জেগে উঠলে তা সকাল সকাল ঝেড়ে ফেলাই ভাল । স্বপ্নে পোলাও রাঁধতে চাইলে যত খুশি ঘি ঢালাই যায় । কিন্তু দ্বিপ্রহরে রাঁধতে গেলে আগে দেখতে হয় ভাঁড়ারে কতটা ঘি মজুত আছে । মোদ্দা কথা হল কোনও আঞ্চলিক দলের নেতানেত্রীর পক্ষেই নিজের তাকতে দিল্লির তখ্তে গিয়ে বসা সম্ভব নয় । বেয়াল্লিশে বেয়াল্লিশ স্কোর করেও যে সেই স্বপ্ন পূরণ সম্ভব নয় লোকসভার মোট আসনসংখ্যার দিকে একবার নজর দিলেই একমাত্র আহাম্মক ছাড়া সবাই বুঝতে পারবে ।
চব্বিশ এখনও অনেক দূর । কিন্তু এখনই আভাস পাওয়া যাচ্ছে , মুখ কে হবে তা নিয়ে বিরোধী জোটে জট লাগার সম্ভাবনা প্রবল । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনের কথা তাঁর পাশের লোকেরা পর্যন্ত আঁচ করতে পারেন না রাহুল-সোনিয়া তো দূর কি বাত । প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চের পর্দা উঠলে সামনে কলাকুশলীদের অভিনয়টা দর্শকেরা দেখতে পান মাত্র । গ্রিনরুমে কার তামাকুতে কে ভাগ বসাচ্ছে ধরা পড়ে না । দিল্লির রঙ্গশালায় সাজঘরে চব্বিশের পালার কী চিত্রনাট্য রচিত হচ্ছে তার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া অত সহজ নয় ।