হাইলাইটস –
- ফেসবুকে লম্বা পোস্ট বাবুল সুপ্রিয়র ।
- পোস্টে রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা । পোস্টে অভিমানের ছাপ সুস্পষ্ট ।
- মন্ত্রীত্ব থেকে অপসারণ যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করেছে , পোস্টে তা গোপন করেন নি সাংসদ।
- বঙ্গ বিজেপিতে অনেকের সঙ্গে মতান্তর আছে । স্বীকার করেছেন বাবুল।
- সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার সম্ভাবনা নেই। সাংসদ পদ থেকে শীঘ্রই ইস্তফা । জানিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয় ।
পলিটিক্যাল ডেস্ক : রাজনীতি ছাড়লেন বাবুল সুপ্রিয় । শনিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লম্বা পোস্ট দিয়ে রাজনীতিকে আলবিদা জানালেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ । কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার পর থেকেই মনমড়া বাবুল । কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ভালভাবে নেন নি তিনি । সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে নিজের ক্ষোভ গোপন রাখেন নি । কয়েক দিন পরেই রাজনীতিকে বিদায় দেওয়ার ইঙ্গিত দেন বাবুল সুপ্রিয় । রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে বনিবনা নেই আসানসোলের সাংসদের । নির্বাচনের আগে দিলীপ ঘোষ গোষ্ঠীর সঙ্গে বাবুলের তিক্ততা চরমে উঠেছিল । বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে টালিগঞ্জ কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অরূপ বিশ্বাসের কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন বাবুল ।
শীঘ্রই সাংসদ পদ থেকেও তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন বলে ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয় । পোস্টে অভিমানের ছাপ স্পষ্ট । অভিমানের একটি কারণ যে মন্ত্রীত্ব নাশ , তাও গোপন করেন নি । রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে যে তাঁর মতান্তর চলছে তাও জানিয়েছেন । তবে অমিত শাহ , জেপি নাড্ডার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ । দিন কয়েক আগে রাজনীতি ছাড়ার আর্জি নিয়ে এই দুই নেতার কাছে গেলে বাবুলকে নিরস্ত করেন তাঁরা । কিন্তু এবার শাহ-নাড্ডা এমনকি প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করলেও রাজনীতি ত্যাগের সঙ্কল্প থেকে তিনি সরবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাবুল সুপ্রিয় ।
যোগগুরু রামদেবের অনুপ্রেরণায় রাজনীতিতে আসা বিশিষ্ট এই সঙ্গীতশিল্পীর । রাজনীতিতে যখন আসেন তখন প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে মুম্বাইয়ে যথেষ্টই খ্যাতি বাবুল সুপ্রিয়র । ২০১৪ য় আসানসোল থেকে বিজেপির টিকিটে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দেন বাবুল । বাবুলকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেন নরেন্দ্র মোদী । উনিশেও মুনমুন সেনকে হেলায় হারিয়ে সংসদে ফেরেন এই সেলিব্রেটি পলিটিশিয়ান । মন্ত্রিসভায়ও জায়গা পান । তিনি কোন পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে এসেছিলেন পোস্টে তা উল্লেখ করেন বাবুল সুপ্রিয় । বাংলায় বিজেপির উত্থানে তাঁরও যে একটা ভূমিকা আছে নিজের পোস্টে সে কথা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি ।
ফেসবুকে বাবুল সুপ্রিয় যা লিখেছেন –
চললাম..
Alvida…
সবার সব কথা শুনলাম – বাবা, (মা) স্ত্রী, কন্যা, দুএকজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব.. সবটুকু শুনে বুঝেই অনুভব করেই বলি,
চললাম…
‘বেশ কিছু সময়ে তো থাকলাম’.. কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম.. কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম, কোথাও নিরাশ হতাশ করলাম | মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন 😊
আমি ‘আমার’ মনে ওঠা সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরই বলছি.. আমার মতো করেই বলছি..
চললাম… 👋
Social Work করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায় – নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর…
হ্যাঁ, সাংসদ পদ থেকেও obviously ইস্তিফা দিচ্ছি ! [Resigning from my MP-ship too (obviously)]
বিগত কয়েকদিনে বার বার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গেছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন |
আমি তাঁদের এই ভালোবাসা কোনো দিন ভুলবো না আর তাই আবার তাঁদের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলার ধৃষ্টতা আর আমি দেখাতে পারবো না 🙏 বিশেষ করে ‘আমার আমি’ কি করতে চায় তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি || কাজেই আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে কোথাও না কোথাও তাঁরা ভাবতেই পারেন যে আমি কোনো ‘পদের’ জন্য ‘Bargain’ করছি | আর তা যখন একেবারেই সত্য নয় তখন একেবারেই চাইনা যে তাঁদের মনের ঈশান কোণেও সেই ‘সন্দেহের’ উদ্রেক হোক – এক মূহুর্তের জন্য হলেও |
প্রার্থনা করি ওঁরা আমায় ভুল না বুঝে, ক্ষমা করবেন ।
আমি আর বিশেষ কিছু বলবো না – এখন ‘আপনারা বলবেন আমি শুনব’ – দিনেরবেলায়, ‘সন্ধ্যাবেলায়’ 😊
কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব আমাকে দিয়ে যেতেই হবে because it’s pertinent ! প্রশ্ন উঠবেই কেনই বা রাজনীতি ছাড়তে গেছিলাম? মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সাথে তার কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ আছে – কিছুটা তো নিশ্চয় আছে ! তঞ্চকতা করতে চাইনা তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেই তা সঠিক হবে-আমাকেও তা শান্তি দেবে ।
2014 আর 2019 -এর মধ্যে অনেক ফারাক |
তখন শুধু BJP-র টিকিটে আমি একাই ছিল (With due respect to Ahluwaliaji – GJM was BJP’s ally in the Darjeeling seat) কিন্তু আজ বাংলায় বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল | আজ পার্টিতে অনেক নতুন Bright তরুণ তুর্কী নেতা যেমন আছে তেমনি অনেক প্রবীণ বিদগ্ধ নেতাও আছেন | এঁদের নেতৃত্বে দল এখান থেকে অনেক দূর যাবে এটা বলাই বাহুল্য | বলতে দ্বিধা নেই যে আজ পার্টিতে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষের থাকা না থাকাটা যে কোন বড় ব্যাপার নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে এবং এটা মেনে নেওয়াটাই যে সঠীক সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমার দৃঢ়, সুদৃঢ় বিশ্বাস !
আরেকটা কথা.. ভোটের আগে থেকেই কিছু কিছু ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সাথে মতান্তর হচ্ছিল – তা হতেই পারে কিন্তু তার মধ্যে কিছু বিষয় জনসমক্ষে চলে আসছিলো | তার জন্য কোথাও আমি দায়ী (একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলাম যা পার্টির শৃংখলাভঙ্গের পর্যায়েই পড়ে) আবার কোথাও অন্য নেতারাও ভীষণভাবে দায়ী, যদিও কে কতটা দায়ী সে প্রসঙ্গে আমি আজ আর যেতে চাইনা – কিন্তু Senior নেতাদের মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছিলই, ‘গ্রাউন্ড জিরো’-তেও পার্টির কর্মীদের মনোবলকে যে তা কোনোভাবেই সাহায্য করছিলো না তা বুঝতে ‘রকেট বিজ্ঞান’-এর জ্ঞানের দরকার হয়না | এই মুহূর্তে তো তা একেবারেই অনভিপ্রেত তাই আসানসোলের মানুষকে অসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে আমিই সরে যাচ্ছি |
কোথাও চলে গিয়েছিলাম এটা আমি মানি না – আমি ‘আমার’ সঙ্গেই ছিলাম – তাই কোথাও ফিরে যাচ্ছি আজ একথাও বলবো না |
বহু নতুন মন্ত্রী এখনো সরকারি বাড়ী পাননি তাই আমার বাড়িটি আমি এক মাসের মধ্যে (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব – হয়তো তার আগেই) ছেড়ে দেবো |
হ্যাঁ, সাংসদ পদ থেকেও obviously ইস্তিফা দিচ্ছি !
আকাশে, একটি উড়ানে স্বামী রামদেবজীর সঙ্গে একটা ছোট কথোকপথন হয়েছিল | একদমই ভালো লাগেনি যখন বুঝেছিলাম যে বাংলাকে বিজেপি খুব seriously নিচ্ছে, শক্তির সাথে লড়বেও কিন্তু বোধহয় কোনো আসন আশা করছেনা | মনে হয়েছিল, যে বাঙালি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, অটল বিহারী বাজপেয়ীকে এত শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, সেই বাঙালি বিজেপিকে একটাও আসনে জেতাবে না এটা কি করে হতে পারে !!! বিশেষ করে সারা ভারত যখন ভোটের আগেই ঠিক করে ফেলেছিলো যে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি, মনোনীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদিই ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন বাংলা কেন অন্যরকম ভাববে | চ্যালেঞ্জটা একজন বাঙালি হিসেবে তখনই নেওয়া উচিত বলে মনে হয়েছিল তাই সবার কথা শুনেছি কিন্তু নিজের যা মনে হয়েছিল তাই করেছি – অনিশ্চয়তাকে ভয় না পেয়ে নিজে যা ঠিক মনে করেছি, ‘মন-প্রাণ’ দিয়ে করেছি ।
1992 – তে Standard Chartered Bank-এর চাকরী ছেড়ে মুম্বাইতে পালানোর সময়েও তাই করেছিলাম, আজ তাই করলাম !!!
চললাম..
হ্যাঁ, কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো..
হয়তো কখনো বলবো..
আজ নাই বা বললাম..
চললাম..