“
বাঘ । মানুষ বাঘকে যতটা ভয় করে ততটাই করে সমীহ । বাঘের রাজকীয় সৌন্দর্য্যে , শৌর্য্যে মানুষ চিরকাল মুগ্ধ । আবার মানুষের লোভ বাঘের অস্তিত্বকে বিলুপ্তির পথেও নিয়ে গেছে । প্রত্যেক বছর ২৯ জুলাই দিনটি আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস হিসেবে পালিত হয় । বাঘ দিবসে বাঘের বৃত্তান্ত জানালেন অরুণ কুমার –
বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘের সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য। আর এই আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস বা বিশ্ব বাঘ দিবস সারা বিশ্বে বাঘের সংরক্ষণের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ২৯ জুলাই দিনটি পালন করা হয়ে আসছে ২০১০ সালে রাশিয়ায় সেণ্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ব্যাঘ্র অভিবর্তনে বা সামিটের পর থেকেই। এছাড়া বাঘের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে গেঁথে থাকা ভুল ধারণা ও ভয় দূর করাও আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্যে।
বিংশ শতকের গোড়া থেকেই বন্য বাঘের সংখ্যা ৯৫ শতাংশ কমে যায়। এই বিষয়টি উপলব্ধি করার পরেই বাঘ দিবস পালনের বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগারস সামিটে প্রথম বাঘ দিবস পালিত হয়। বাঘেদের স্বাভাবিক বাসস্থান রক্ষা করাই ছিল এই সামিটের মূল উদ্দেশ্য। সামিটে যে ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেগুলি হল – ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, লাওস, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং রাশিয়া। এই সামিটে ২০২২-এর মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা ৬০০০-এর বেশি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়।
বাঘ ভারতের জাতীয় পশু হওয়ার কারণে এই দিবস আমাদের দেশের একটু বেশিমাত্রায় উপযোগী। গোটা বিশ্বে নগরায়নের কারণে বাঘেরা তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানের ৯০ শতাংশই হারিয়ে ফেলেছে। বর্তামানে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৪০০০-এরও কম। এদিকে জানা গিয়েছে,বিশ্বকে বাঘ সংরক্ষণ শেখাতে চায় ভারত । এ কথা বলেছেন আমাদের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাবড়েকার। সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে দেশের ৫০টি ব্যাঘ্র প্রকল্পে বাঘ ও অন্য জন্তু-জানোয়ারের সবিস্তার অবস্থান জানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে যে ১৩টি দেশে বাঘ আছে, তার মধ্যে ভারতেই রয়েছে ৭০ শতাংশ।২৩১ বাঘ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে জিম করবেট পার্ক। রিপোর্ট বলছে, দেশে মধ্যপ্রদেশ ও কর্নাটকে এই মুহূর্তে সবথেকে বেশি বাঘ রয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গের বক্সা-সহ উত্তর-পূর্বের অন্তত ৩টি ব্যাঘ্র প্রকল্প আপাতত বাঘ-শূন্য। সেগুলিকে ফের বাঘে দিয়ে পূর্ণ করতে সরিস্কা-পান্নার পথে প্রতিস্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। তবে কেন্দ্রীয় বনমন্ত্রী এও উল্লেখ করেছেন, শুধু বাঘের দিকে তাকালেই হবে না। অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের কথা ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। প্রায় ৬০০ পাতার এই রিপোর্টে দেশে ৩০ হাজার হাতি, ৩ হাজার একশৃঙ্গ গন্ডার, ৫০০ সিংহের মতো আরও বহু প্রাণীর তথ্য রয়েছে, যা প্রথমবার সাধারণ মানুষের সামনে এসেছে।বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ও প্রাক্তন ফিল্ড ডিরেক্টর বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প সম্পৎ সিং বিস্ট এর মতে,বাঘ নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই অথচ, নগরায়ণের কারণে ক্রমশ ‘ভিটে-মাটি’ হারাচ্ছে বাঘ।চোরাশিকারকারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে বাঘ মারার প্রবণতা এখনও রয়েছে। এদের প্রতিরোধে বিশেষ টাস্কফোর্স কাজ করে চলেছে।
টাইগার নামটি গ্রিক শব্দ ‘টাইগ্রিস’ থেকে এসেছে যার উৎপত্তি ফার্সি বা ইরানি শব্দ থেকে। শব্দটির দ্বারা একটি তীরকে বোঝায়, যা তার লক্ষ্যের দিকে অবিচল থেকে ধাওয়া করে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির মতে শ্রী বিষ্ট এর মতে, বর্তমানে মাত্র ১৩টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে। এই ১৩টি বাঘ সমৃদ্ধ দেশকে বলা হয় Tiger Range Country (TRC)। দেশগুলো হচ্ছে, বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, ভুটান, নেপাল, থাইল্যান্ড, চীন, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও রাশিয়া। মোট ৬টি দেশের জাতীয় পশু হিসেবে বাঘ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং রাশিয়া। বাঘের বেশ কয়েকটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।বাঘের আটটি উপ-প্রজাতির মধ্যে ইতোমধ্যে বালিনিজ, জাভানিজ ও কাম্পিয়ান টাইগার বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বাঘের পাঁচটি উপ-প্রজাতি বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার এবং ইন্দো-চায়না টাইগার কোনোরকমে টিকে আছে। এ বিষয়ে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফাউন্ডেশন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বে বাঘের সংখ্যা ৩,৮৯০টি। যার মধ্যে ৭০% বাঘ আছে ভারতে। ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালে বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিলো ১০৬টি। ২০১৮ সালের শুমারিতে এ সংখ্যা পাওয়া গেছে ১১৪টি। বিড়াল প্রজাতির মধ্যে বাঘ সবচেয়ে বড় প্রাণী।
ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন গ্রুপ (ডাব্লিউডাব্লিউএফ) এর তথ্য অনুযায়ী একটি বাঘের ওজন ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর বাঁচে ২৬ বছর পর্যন্ত। বাঘের শারীরিক পরিমাপ সম্পর্কে জানা গিয়েছে, বাঘের মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ২৮০ সে.মি.। এখানে শুধুমাত্র লেজর মাপ ১০০ সে.মি.। উচ্চতা হয় ১১০ সে.মি.। বাঘের মস্তিষ্ক বড় হয় যার ওজন ৩০০ গ্রামের মত এবং বাঘের স্মৃতিশক্তি অনেক ভালো। বাঘের স্বল্প মেয়াদী স্মরণশক্তি মানুষের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। ৩০০ কেজি ওজনের একটা বাঘ ৫ মিটার পর্যন্ত (প্রায় ১৫ফুট) লম্বা লাফ দিতে পারে। পেছনের পাগুলি তার সামনের পাগুলির চেয়ে লম্বা হওয়ার ফলে তারা অনেক বেশি দূরত্বে লাফ দিতে সক্ষম হয়। এই বাঘ ঘন্টায় প্রায় ৬০-৬৫ কি.মি. বেগে দৌড়াতে পারে। যদিও এরা হেলেদুলে চলতেই বেশি পছন্দ করে। বাঘের পেনিসে স্পাইন (কাঁটা) থাকে। ফলে মেটিং (প্রজনন) স্ত্রী বাঘের জন্য কষ্টদায়ক হয়। সঙ্গম কালে বাঘের লিঙ্গোথ্থান হয় না। তাদের লিঙ্গে ব্যাকুলাম নামে একটি হাড় রয়েছে, যা সঙ্গমের সময় সংযোগ বজায় রাখতে সহায়তা করার জন্য স্পাইন দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে। আরো উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো এই বাঘের লালায় প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক থাকে। বাঘ তার দেহের ক্ষত সারাতে লালা লাগায়। বাঘের গর্ভকালীন সময় ১০৪-১০৬ দিন। এরা এক সাথে ২ থেকে ৫ টি বাচ্চা জন্ম দেয়। পুরুষ বাচ্চা ৪-৫ বছর ও মেয়ে বাচ্চা ৩-৪ বছরে বয়োপ্রাপ্ত হয়। জন্মের সময় বাঘের বাচ্চাগুলো পুরোপুরি অন্ধ থাকে। জন্মের দেড়-দুই সপ্তাহ পরে এদের চোখ ফুটে। এই বাচ্চাদের অর্ধেক যৌবনে বাঁচে না। বাঘের বাচ্চারা ৬ মাসে স্বাবলম্বী হয়। এর আগে তাদের দেখাশোনা পুরোটাই মা বাঘ করে। পুরুষ বাঘ (পিতা) কোন দায়িত্ব পালন করে না। উল্টো অনেক সময় নিজের বাচ্চাকেও খেয়ে ফেলে। “বিখ্যাত বাঘ শিকারি জিম করবেট বলেছেন, বাচ্চারা মায়ের সাথে ১৮ মাস পর্যন্ত থাকে।” যখন তারা নিজেরা চলাফেরা শিখে যায়, তখন তারা তাদের মাকে ছেড়ে চলে যায় এবং নিজেদের মতো করে একটা এলাকা বেছে নিয়ে বসবাস করা শুরু করে।
বাঘ সাধারণত নিশাচর প্রাণী।পুরুষ বাঘ বাঘিনী এবং শাবকদের ছাড়াই নিঃসঙ্গভাবে চলাফেরা করে। তবে পুরুষ বাঘ শিকার ধরে স্ত্রী বাঘ এবং শাবকদের আগে খেতে দেয়।বাঘের জিহ্বা ভর্তি পিছনের দিকে মুখ করা অনেক ধারালো প্যাপিলা থাকে। যেগুলো যেকোন শিকার থেকে লোম, চামড়া বা পালক ছাড়িয়ে খেতে সাহায্য করে। এগুলো এতটাই অমসৃণ হয় যে তারা খুব সহজেই যেকোনো হাড়ে লেগে থাকা মাংস চেটে তুলে আনতে পারে।বাঘের ডোরাকাটা দাগ শুধু তার লোমে না, চামড়ায়ও থাকে। মানুষের যেমন স্বতন্ত্র ফিঙ্গারপ্রিন্ট থাকে, সেরকম দুইটা বাঘের চামড়ার স্ট্রাইপের প্যাটার্ন কখনো এক হয় না। যার ফলে বাঘেরা খুব সহজেই একে অপরকে শনাক্ত করতে পারে।বিড়ালের মত প্যাডেড পা (নিঃশব্দে চলাফেরার জন্য), প্রায় ৩ ইঞ্চি লম্বা একেকটা ধারালো ক্যানাইন দাঁত, ১০ সে.মি. লম্বা নখর, সমস্ত ফেলাইনের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর থাবা ও দ্রুতগতি থাকা সত্ত্বেও বাঘের শিকার ধরার সফলতার রেট ১০%। অর্থাৎ প্রতি ১০ বারের চেষ্টায় বাঘ মাত্র ১ বার সফল হয়। তবে একটু বড় কিছু ১ বার শিকার করতে পারলে ৫-৬ দিন আর শিকার করে না। বাঘের খাদ্যাভাস পরিমাণ সম্পর্কে জানা গিয়েছে,বাঘ একবারে মোটামুটি ৪০ কেজির মত মাংস খায়। এরা সাধারণত মহিষ, হরিন, বন্য শূকর, বানর, বড় পাখি, বড় মাছ শিকার করে থাকে। এরা ২-৩ সপ্তাহ না খেয়ে থাকলে মারা যায়। আরও যেটা জানা যায় তা হল, বাঘ অন্যান্য প্রাণীর ডাক নকল করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বোকা বানিয়ে শিকার করে।
সুন্দরবনের বাঘ মানুষও খায়। সাতক্ষীরার পচাব্দী গাজী এরকম ৫৬ টি (মতান্তরে ৫৭টি) মানুষখেকো বাঘ শিকার করে বিখ্যাত বাঘ শিকারি হয়েছিলেন।বাঘের গর্জন ৩-৪ কি.মি. দূর থেকেও শোনা যায়। এরা দূরবর্তী বাঘদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ভয়ঙ্কর শব্দে গর্জন করে। কাছ থেকে বাঘের গর্জন শুনলে বধির হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। বাঘের প্রস্রাবের গন্ধ বাটার মাখানো পপকর্ণের মত। নিজেদের এলাকা চিহ্নিত করতে এবং অন্যদের সতর্ক করতে বাঘ প্রস্রাবের গন্ধ কাজে লাগায়। এছাড়া গাছে নখের আঁচড় রেখেও এলাকা চিহ্নিত করে। বিড়াল পরিবারের মধ্যে একমাত্র বাঘ-ই জলকে ভালবাসে। এরা খুবই ভাল সাঁতারু, একটানা ৬ কি.মি. সাঁতারও কাটতে পারে। সাঁতরানোর সময় শিকার ধরতেও এরা বেশ পটু হয়। এদের দৃষ্টিশক্তি প্রখর হয় কিন্তু,বাঘ রাতে স্পষ্ট দেখতে পেলেও দিনের বেলা মানুষের তুলনায় চোখে কম দেখে। এরা অন্ধকারে মানুষের চেয়ে ৬ গুণ বেশি দেখতে পায়। বাঘের পা এতটা শক্তিশালী যে এরা মারা যাওয়ার পরও কিছু সময়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে পারে।
বাঘ সচারচর সামনে দিয়ে আক্রমণ করে না। এজন্য সুন্দরবনের জেলে, বাউয়ালি, মৌয়ালিরা বাঘের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য মাথার পেছনে মুখোশ পরে। বাঘের কানের পেছনের সাদা দাগটিকে ওসেলি বলে। কানের পিঠের এ সাদা দাগগুলি কখনও কখনও পিছন থেকে সম্ভাব্য আক্রমণকারীদের বাধা দেওয়ার জন্য ‘চোখ’ হিসাবে কাজ করে বলে মনে করা হয়। আবার কখনো এ সাদা দাগগুলি ব্যাঘ্র শাবকদের লম্বা ঘাসের মাধ্যমে তাদের মাকে অনুসরণ করতে সহায়তা করে। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে,বাঘ ও সিংহীর সাথে প্রজননের ফলে ‘টাইগন’ এবং সিংহ ও বাঘিনীর প্রজননের মাধ্যমে নতুন প্রজাতির সংকর প্রাণী ‘লাইগার’ এর জন্ম হয়। বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় এ ধরনের প্রাণীকে দেখতে পাওয়া যায় দেশে ও বিদেশে।২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত এই সামিটে যে ১৩টি দেশ অংশগ্রহণ করে, সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০২২-এর মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা ৬০০০-এর বেশি বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। এবং সেই লক্ষ্যেই বিভিন্ন দেশ কাজ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক চোরাচালান কারবারীদের প্রতিরোধে বন্যপ্রাণী আইন কঠোর থেকে কঠোর করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বাঘের আবাসস্থল রিজার্ভ ফরেস্ট গুলিকে আরো বেশি সুসংহত করার লক্ষ্যেই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাঘেদের বসবাসের উপযোগী ও তাদের পর্যাপ্ত খাদ্য সম্ভার যাতে জোগান দেওয়া যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন দেশ উদ্যোগী হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখন দেখার বিষয় এই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস পালনের মধ্য দিয়ে বাঘ সংরক্ষণ এর কাজ কতটা সাফল্য লাভ করবে আগামী দিনে।
পৃথিবী জুড়ে বাঘের সংখ্যা এখনও ৪,০০০-এর কাছাকাছি। আর যার তিন-চতুর্থাংশই ভারতে রয়েছে। ভারত প্রায় ২ ডজন নতুন বাঘের অভয়ারণ্য তৈরি করেছে। এখন দেশে মোট অভয়ারণ্যের সংখ্যা ৫২। শুধু বাঘ নয়, এর ফলে লাভ হয়েছে অন্যান্য বন্যপ্রাণীরও। বনাঞ্চল বৃদ্ধিতেও যা সহায়ক। ”টাইগার করিডর’ হল এমন এক রাস্তা যা বাঘের বাসস্থানগুলিকে জোড়ে। এর মধ্যে বাঘ এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণীরা চলাফেরা করে, শিকার ধরে। করিডর করা না থাকলে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। যা সাধারণ জনবসতির পক্ষে সমস্যার হতে পারে। বাঘ ছাড়া অন্যান্য বন্যপ্রাণীরাও ওই করিডর ব্যবহার করে। এমনটাই বলছে NTCA রিপোর্ট। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এই করিডরগুলিই পরবর্তীকালে বাঘেদের থাকার জায়গা হয়ে উঠবে। স্বভাবতই এই করিডরগুলি সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা চলছে, কাজটা যদিও খুব সহজ নয়। কারণ এই করিডরগুলি জনবসতির উপর দিয়েই গেছে। ফলে মানুষ এবং বাঘের মধ্যে সংঘর্ষের সম্ভাবনা প্রবল। যদিও ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম অ্যানিমল আন্ডারপাস তৈরি করেছে, যা হাইওয়ের নীচ দিয়ে যায়। তবে এমন আরও আন্ডারপাস তৈরির দিকে নজর দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত এখন মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছে। ভারত হয় স্বল্প এবং সীমিত সংখ্যক বাঘ নিয়েই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে। অথবা, বাঘের সংখ্যা বাড়িয়ে ১০,০০ এমনকী ১৫,০০০ করে বিশ্বে ব্যাঘ্র সংরক্ষণে নজির গড়ে তুলতে পারে।যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজস্থানের রণথম্বর ও মুকুন্দ অভয়ারণ্য এবং মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যান সংযোগকারী প্রাকৃতিক করিডর সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। এই রাস্তা দিয়ে ঘন ঘন বাঘেদের চলাচল করতে দেখা যায়। মাস তিনেক পর বাঘেদের সঙ্গী হতে চলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা চিতা। ভারতে শেষ চিতা মারা যায় ১৯৪৭ সালে, ছত্তিসগঢ়ে। এরপর ১৯৫২ সালে চিতাকে বিলুপ্ত প্রাণি হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এবার আফ্রিকা থেকে ১০টি চিতা আনা হচ্ছে, যাদের মধ্যে ৫টি স্ত্রী চিতা। আশা করা যাচ্ছে বাঘের সঙ্গে চিতারও গর্জনও শুনতে পাওয়া যাবে।