তেমনটিই কিন্তু বলছে ‘ নেচার ‘ এর গবেষণা ! পাঁচ হাজার বছর ধরেই নাকি পৃথিবীর ওপর চলছে এলিয়েনদের নজরদারি
বিজ্ঞান ডেস্ক : যেই গ্যালাক্সিতে আমরা ভাসছি , সেই মিল্কি ওয়েতে কমপক্ষে দুশো বিলিয়ন তারা আছে বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান । দুশো বিলিয়ন । মানে দুই লক্ষ কোটি ! এখনও পর্যন্ত মহাবিশ্বের যতটুকু জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা তাতে ১২৫ বিলিয়ন গ্যালাক্সির খোঁজ পাওয়া গেছে । অর্থাৎ মহাবিশ্বে গ্যালাক্সির সংখ্যাই এক লক্ষ পঁচিশ হাজার কোটি । এক একটি গ্যালাক্সিতে একশ থেকে চারশ বিলিয়ন করে তারা থাকতে পারে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা । এই বিরাট মহাজগতে আমাদের কি আর কোনও ভাই-বেরাদর নেই ? ভিন গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহল তো বটেই সাধারণ মানুষেরও কৌতুহলের শেষ নেই । স্বাভাবিক । দুনিয়ায় একা থাকতে কারই বা ভাল লাগে । মহাবিশ্বটা যদি একটি পাড়া হয় আমরা তো পড়শির খোঁজ করবই । যদি মহাজগতের কাঁহা কাঁহা মুলুকের সমগোত্রীয়দের সঙ্গ পেতে আপনার মন উশখুশ করতে থাকে , তবে ‘ নেচার ‘ পত্রিকায় সদ্য প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আপনাকে খুশি করতে পারে । ‘ নেচার ‘ কোনও এলিতেলি ম্যাগাজিন নয় । বিশ্ব বিখ্যাত গবেষণাধর্মী সায়েন্স জার্নাল গুলির মধ্যে ১৫২ বছরের ‘ নেচার ‘ অন্যতম । নেচারের ২৩ জুন সংখ্যায় প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে শুধু মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই এমন ২ হাজার তারার সন্ধান মিলেছে যাদের সংসারের কোনও না কোনও ঘরে ( গ্রহে ) প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা প্রবল । শুধু প্রাণের স্ফূরণই নয় গ্রহ গুলিতে বুদ্ধিমান প্রাণীদের আস্তানা থাকা নিয়েও মোটামুটি নিঃসংশয় গবেষক মহল । বুদ্ধির দৌড়ে তারা মানুষের থেকে এগিয়ে ছাড়া পিছিয়ে নেই বলে মনে করেছেন গবেষকেরা ।
নেচারে প্রকাশিত আলেকজান্দ্রা উইটজের প্রবন্ধটির শিরোনাম- ‘ দ্য টু থাউজেন্ডস স্টারস , হোয়ার এলিয়েনস উড ক্যাচ এ গ্লিমপস অব আর্থ ‘ ( The 2,000 stars where aliens would catch a glimpse of Earth ) । বাংলা করলে দাঁড়ায় অনেকটা এ রকম – ‘ দুই হাজার তারা , যেখানে ভিনগ্রহীরা পৃথিবীকে এক ঝলক দেখে নেবে ‘। আমরা যেমন ভিনগ্রহীদের জানার চেষ্টা করছি তেমনি ভিনগ্রহীরাও আমাদের ব্যাপারে জানার চেষ্টা চালাচ্ছে । হয়তো আমাদের ব্যাপারে অনেকটাই জেনে ফেলেছে ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীরা । এবং ভিনগ্রহীদের সেই অনুসন্ধান পর্বের শুরুটা হতে পারে পাঁচ-ছয় হাজার বছর আগে , যখন মানব সভ্যতা আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তি থেকে অনেক অনেক দূরে ।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গাইয়া ( GAIA ) মিশন এবং নাসার মিশন ‘ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট ‘(টেস) এর তথ্যাদি বিশ্লেষণ সাপেক্ষে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ল সাগান ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জ্যোতির্বিজ্ঞানী লিজা ক্যালটেনেগার এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ‘ পৃথিবী থেকে প্রেরিত রেডিও তরঙ্গ গুলো ইতিমধ্যেই ভিনগ্রহীদের কাছে পৌঁছে গেছে এবং ভবিষ্যতে আরও পৌঁছাবে । ‘ যেই হেতু ভিনগ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে আমাদের থেকে অনেক বেশি এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা সেই হেতু আমাদের ওপর তাদের নজরদারি ব্যবস্থাও অনেক উন্নত হওয়ার কথা বলে মনে করছেন লিজা ক্যালটেনেগার ।
এলিয়েনদের খোঁজে বিজ্ঞানীদের অনুসন্ধানকে দূর-দূরান্তের নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে সরিয়ে সৌর মন্ডলের একেবারে কাছাকাছি দূরত্বে থাকা তারাদের জগতে নিবদ্ধ করতে বলেছেন লিজা ক্যালটেনেগারের মতো গবেষকেরা । পৃথিবী থেকে মাত্র এগারো আলোকবর্ষ দূরে ভার্গোনক্ষত্রপুঞ্জের রোজ-১২৮ নক্ষত্রমন্ডলে এমন কয়েকটি গ্রহের খোঁজ বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন , যেগুলিতে প্রাণ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ রয়েছে । কোনও গ্রহে প্রাণ সৃষ্টি হওয়ার পরে যদি প্রাথমিক ধাক্কা সামলে প্রাণ টিকে যায় তবে তার বিকাশ অবশ্যম্ভাবী, যেমনটি ঘটেছে আমাদের পৃথিবীতে । এগারো আলোকবর্ষ দূরের নক্ষত্রমন্ডলেও একই পথ ধরে উন্নততর সভ্যতার অস্তিত্ব অলীক কল্পনা বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বৈজ্ঞানিক মহল ।
পৃথিবী হতে ১০০ থেকে ৩২৬ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে ১৭৭৫ টি নক্ষত্রমন্ডল রয়েছে যার ৬৩২ টিতে প্রাণ তো বটেই এমনকি উন্নত সভ্যতা থাকার সম্ভাবনাও খারিজ করা যাচ্ছে না । মানুষের থেকেও ধারালো বুদ্ধির প্রাণীর গ্রহান্তরে উপস্থিতি এখন আর গালগল্প কিম্বা নিছক কল্পবিজ্ঞানের খোরাক নয় বরং বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু । বুদ্ধির কাছে অসাধ্য কিছু নেই । বুদ্ধির ক্রমান্বয় চর্চা থেকেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষতা চরমে পৌঁছায় । ভিনগ্রহীরা সেই জায়গায় পৌঁছে গেলে পৃথিবী নামক গ্রহটির খোঁজ তারা অনেক আগেই পেয়ে গেছে – এমনটিই মেনে নিচ্ছে নেচারের গবেষণাপত্র । আমাদের হাঁড়ির খবরও তেনাদের নখদর্পণে কিনা তেনারাই ভাল জানেন ।
- প্রচ্ছদের ছবি কাল্পনিক ও প্রতীকি
Photo Credits – The Guardian , Nasa , Cornell University Website .