ওয়েব ডেস্ক : প্যান্ডেমিক পিরিয়ডে টানা আর্থিক ক্ষতির ধাক্কা সামলাতে না পেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল হায়াত রিজেন্সি মুম্বাই । মুম্বাইয়ের সেরা পাঁচ ফাইভ স্টার হোটেলের একটি হায়াত রিজেন্সি মুম্বাই । পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত হোটেলটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে পরিচালন কর্তৃপক্ষ । এশিয়ান হোটেলস ( ওয়েস্ট ) লিমিটেডের ( Asian Hotels (West) Ltd. ) মালিকানাধীন ফাইভ স্টার হোটেলটি মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় সারা বছরই দেশি বিদেশি পর্যটকে গমগম করত । কিন্তু সে সব কোভিড প্যান্ডেমিকের আগের কথা । দুই হাজার বিশে প্রথমদফার লকডাউন কোনমতে কাটিয়ে উঠলেও কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঝাঁপই ফেলে দিতে বাধ্য হল হায়াত রিজেন্সি মুম্বাই । হোটেল বন্ধের কারণ হিসেবে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার হরদীপ মারওয়া জানিয়েছেন, কর্মীদের বেতন ও দৈনন্দিন খরচের টাকা দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছে মালিক পক্ষ ।
দেশের সবকটি মেগাসিটিতেই হায়াত রিজেন্সি গ্রুপের হোটেল আছে । কলকাতা সহ অন্য গুলোর কপালেও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে কিনা এখনও জানা যায় নি । তবে শুধু মুম্বাইয়ের হায়াত রিজেন্সিই নয় কোভিড নাইন্টিন প্যান্ডেমিক ও লকডাউনের ধাক্কায় গোটা দেশের হসপিটালিটি ইন্ডাষ্ট্রি বা আতিথেয়তা শিল্পে মহা বিপর্যয় নেমে এসেছে । হোটেল , রেস্তোরাঁ , রিসর্ট এবং ট্যুর অপারেটরদের নিয়ে তৈরি এই বিশাল হসপিটাললিটি ইন্ডাষ্ট্রি দেশের ৮ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষের রুটিরুজি জোগায় । ২০২০ র মার্চ মাস থেকেই করোনা নামক রাহুর কবলে আতিথেয়তা শিল্প । টানা লকডাউনের কারণে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে গেলে বড় বড় শহর ও পর্যটন স্থলের হোটেল গুলো ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে । গত বছরের অক্টোবর-নভেম্বর থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করলে পর্যটন ও আতিথেয়তা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকলেই আশার আলো দেখতে থাকেন । একুশে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের পর্যটন ক্ষেত্র গুলোতে দেশি পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পায় হসপিটালিটি ইন্ডাষ্ট্রি । কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এই ব্যবসাকে আবার বিশ বাঁও জলে ঠেলে ফেলে দিয়েছে । এই মুহুর্তে আর কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না ফেডারেশন অব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া ( Federation of Hotel & Restaurant Associations of India ) ।
২০২০-২১ অর্থবর্ষে ভারতের হোটেল শিল্পে মোট ক্ষতির পরিমাণ ১.৩ ট্রিলিয়ন রুপি অর্থাৎ ১.৩০ লক্ষ কোটি টাকা । ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দেশের হোটেল শিল্পে মোট রাজস্ব এসেছিল ১.৮২ লক্ষ কোটি টাকা । চলতি অর্থবর্ষে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ৭৫ শতাংশের মতো । দিনের পর দিন হোটেল গুলোতে পরিষেবা বন্ধ । হোটেলের পরিকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ বিল সহ আনুষাঙ্গিক খরচ মেটাতেই হিমসিম খাচ্ছেন মালিকেরা । দেশের মাঝারি হোটেল গুলোতে কর্মরত অসংখ্য কর্মী ইতিমধ্যেই পুরোপুরি বেকার । খাতায়কলমে কর্মচ্যুত হন নি কিন্তু মাসের পর মাস বেতন মিলছে না এমন কর্মীর সংখ্যাও প্রচুর । পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে নন পারফর্মিং অ্যাসেটের (NPA ) ভারেই দেশের হোটেল শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে এফএইচআরএআই ( FHRAI )। এই পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্কের ঋণ মেটানোয় তিন বছরের জন্য অব্যাহতি সহ একাধিক দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে হোটেল মালিকদের সংগঠন ফেডারেশন অব হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া । লকডাউন পরিস্থিতি না কাটা পর্যন্ত সরকারের কাছে সম্পত্তি কর সহ অন্যান্য কর , জল এবং বিদুৎতের বিলেও বড় রকমের ছাড় প্রার্থনা করেছেন হোটেল মালিকেরা।
জনজীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দেশের আতিথেয়তা শিল্প সচল হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নাই । কোভিডের সংক্রমণ কবে থিতোবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেই বিশেষজ্ঞদেরও । নিউ নরমাল জীবনধারায় মানুষ নির্ভয়ে এবং অবাধে ঘরের বাইরে পা রাখার উৎসাহ আর ফিরে পাবে কিনা কেউ জানে না । হোটেল ও পর্যটন শিল্পে কর্মরত লক্ষ লক্ষ মানুষ রোজগার হারিয়েছেন ইতিমধ্যেই । এদের জন্যও সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে হোটেল মালিকদের ফেডারেশন । দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮.০ শতাংশ বহন করে হোটেল ও পর্যটন শিল্প । ভারতের জিডিপির ৬.৮ শতাংশ আসে পর্যটন ক্ষেত্র থেকে । বহু শাখা প্রশাখায় বিস্তারিত আতিথেয়তা শিল্প ফের ঘুরে দাঁড়ানোর মতো জায়গায় না এলে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে বড় চোট লাগবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।