পলিটিক্যাল ডেস্ক : রাজ্যে আট দফা বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন কোনও সভা না করে কলকাতার সাতটি আসনের দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যদিও সোমবার উত্তর কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটার অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনকে কার্যত নির্বাচনী সভায় পরিণত করেন তৃণমূল সুপ্রিমো । সভায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপি অথবা মোদী-শাহের চেয়ে নির্বাচন কমিশনের সমালোচনাতেই অনেক বেশি সময় ও শব্দ খরচ করেন মমতা । সাংবাদিক সম্মেলনে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম পনেরো মিনিট নির্বাচন কমিশনকে কার্যত তুলোধুনো করেন তিনি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ , নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে দালালি করছে । মমতার কটাক্ষ, ‘ কী করে তৃণমূলকে হারানো যায় তার ইজারা নিয়ে বসে আছে নির্বাচন কমিশন । ‘ কোভিড পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা না নেওয়ায় এদিন নির্বাচন কমিশনের কড়া সমালোচনা করে মাদ্রাজ হাইকোর্ট । মাদ্রাজ হাইকোর্টের বিচারকদের প্রতিক্রিয়া কানে যাওয়ার পর কমিশনের বিরুদ্ধে আরও সুর চড়ান তৃণমূল সুপ্রিমো ।
নির্বাচন কমিশন তৃণমূলের সঙ্গে প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ করছে বলে মিনার্ভার সাংবাদিক সম্মেলন থেকে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ আমরা কমিশনকে রেসপেক্ট করি । কিন্তু আপনারা কি রেসপেক্ট এসপেক্ট করেন ? যা করছেন সবই তো বিজেপির হয়ে । ‘ মমতার ভাষায় নির্বাচন কমিশন ‘ বিজেপির মুখপাত্র । টিয়া , ময়না আয়না । ‘ রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পুরো দায় কমিশন , কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বিজেপির ঘাড়ে চাপিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতার অভিযোগ, ‘ ২ লক্ষ পুলিশকে বাইরে থেকে নিয়ে এসেছেন । আপনাদের জন্যই আজ এই অবস্থা । তারাই ( কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা ) কোভিড ছড়াচ্ছে চারদিকে । এক একটা জেলায় যাচ্ছে আর কোভিড ছড়াচ্ছে । আমার সব স্কুল , কলেজ , স্টেডিয়াম দখল করে বসে আছে । এইসব জায়গায় কোভিড ছড়াচ্ছে । ‘
আট দফায় ভোট , কেন্দ্রীয় বাহিনীর মোতায়েন থেকে পুলিশ আধিকারিকদের বদলি – নির্বাচন কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপেই নাখোশ তৃণমূল সুপ্রিমো । রাজ্যের পুলিশের ওপর ভরসা নেই দেখেই কমিশন পশ্চিমবঙ্গে আট দফায় ভোট করছে বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । যদিও ভোটের শেষ লগ্নে এসে দেখা যাচ্ছে রাজ্য পুলিশের একটি অংশের প্রতিও বেজায় ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী । রাজ্য পুলিশের মধ্যে যারা বিজেপি করে তাদেরকেই বেছে বেছে ভোটের কাজে লাগানো হচ্ছে বলে এদিন অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট মিটলে এই পুলিশদের দেখে নেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি । কমিশনের নির্দেশে বদলি হয়ে আসা এসপি’রা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূলের এজেন্টদের থ্রেট করছে বলে অভিযোগ করেন মমতা । মমতার অভিযোগ , ‘ বিজেপির পার্টি অফিস থেকে যাকে ঢোকাতে বলছে পুলিশ তাকেই থানায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে । ‘
কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । |
ভোটে লড়তে নেমে পরিস্থিতি যখন তৃণমূলের জন্য এতটাই প্রতিকূল তখন কীভাবে দলের বিজয় আশা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? এই প্রশ্নের জবাব নিজের মতো করেই দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ‘ নির্বাচন কমিশনের নির্লজ্জ দালালি সত্ত্বেও বিজেপি হারবে । ‘ তবে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির আসন সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা । মমতা বলেন , ‘ বিজেপি সত্তরও ক্রস করত না । কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দৌলতে ৭০-৭৫-৮০ র মধ্যে চলে যাবে । আমরা দুশোর ওপরে থাকব । ‘ শেষ দফা ভোটের আগে মমতার নিজস্ব স্কোরবোর্ডে বিজেপির আসন অনেকটাই বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ।
এদিকে ভোটের পরেই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাওয়া মনস্থ করে ফেলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সোমবার সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের মুখেই এ কথা জানিয়েছেন মমতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ‘ নির্বাচন কমিশনকে আমরা ছাড়ব না। সব ডকুমেন্টস রেখে দিয়েছি । আগামীদিনে এটা নিয়ে মামলায় যাব। সাধারণত দেখা যায় নির্বাচনে পরাজিত পক্ষই আদালতে যায় । তবে কি ভোট পর্ব মেটার আগেই জেতার আশা জলাঞ্জলি দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলের । যদিও ভোটে পরাজয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন , ‘ আমরা জিতবও । মামলাতেও যাব । আমি এদের ছেড়ে কথা বলব না । এই রকম নির্বাচন কমিশন যদি থাকে তবে আগামী দিনে ভারতবর্ষে গণতন্ত্র বলে কিছু থাকবে না। পুরোটাই মোদীর দখলে চলে যাবে । সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে যাব । তিনজন নমিনেটেড লোক বসে যা খুশি তাই করবে , এটা মেনে নেওয়া যায় না । ‘ আট পর্বের ভোট শেষ হওয়ার আগেই মমতার উপলব্ধি নির্বাচন কমিশন সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গেছে ।
আট দফা ভোট শেষ হওয়ার আগেই কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি মমতার । |
যেদিন থেকে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে আট দফায় ভোটের ঘোষণা দিল সেদিন থেকেই মমতার নিশানায় কমিশন । লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি দফার শেষে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতার আক্রমণের ঝাঁঝ বেড়েছে । কোভিড পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতেই শেষ তিন দফার ভোট এক সাথে করাতে কমিশনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তৃণমূল । যদিও এক দফায় ভোট করালে পর্যাপ্ত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা যাবে না – এই কারণে তিন দফার ভোট এক সাথে করানোর দাবি খারিজ করে দেয় নির্বাচন কমিশন । তৃণমূল বাদে সব দলই কমিশনের যুক্তি মেনে নেয় । রাজ্যে ভোট পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আট দফায় হলেও করোনা সংক্রমণের কারণে প্রচারে রাশ টানে নির্বাচন কমিশন । সোমবার ছিল শেষ তথা অষ্টম দফা প্রচারের শেষ দিন। শেষ দিন বিজেপিকে ছেড়ে মমতা কেন কমিশনকে নিয়ে পড়লেন , এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক মহলকে । নির্বাচন কমিশনকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনার বহর দেখে ইতিমধ্যেই বিজেপি বলতে শুরু করে দিয়েছে , দলের পরাজয় নিশ্চিত জেনে এখন থেকেই কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলছেন তৃণমূল সুপ্রিমো ।