নাগরিক পলিটিক্যাল ডেস্কের প্রতিবেদন : পয়লা বৈশাখের দিনেই শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সচিব তপন ঘোষের ছেলে তমোঘ্ন ঘোষ। তমোঘ্ন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির একজন সাধারণ সম্পাদক । তমোঘ্নর নিজের পদ এবং রাজনৈতিক পরিচয় কোনোটাই তেমন আহামরি কিছু নয় । তৃণমূল বা যুব তৃণমূলের অন্দরে এই ধরণের সাধারণ সম্পাদক পদের ওজন কতটা তা রাজনৈতিক মহলের অজানা নয় । তারপরেও ভোটের পঞ্চম দফা শেষ হওয়ার আগেই তমোঘ্নর দলবদল নিয়ে বাজারে জোর গবেষণা শুরু হয়ে যাওয়ার একটাই কারণ – তিনি উত্তর কলকাতার তৃণমূল সাংসদ এবং লোকসভায় তৃণমূলের সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সচিবের পুত্র ।
ঘটনার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে ইতিউতি প্রশ্ন তবে কি ফুল বদলের ওয়ার্মআপ শুরু করে দিলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ ? পুত্রের মন কমলে মজেছে তা কি জানতেন না পিতা তপন ঘোষ ? জানার পরেও কি ছেলেকে নিরস্ত করেন নি তপনবাবু ? তপন ঘোষ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক । সুদীপবাবুর সাংসদ তহবিলের টাকা বরাদ্দ কোথায় কীভাবে হচ্ছে তার সবকিছু তিনিই দেখভাল করে থাকেন বলে জানা গেছে । সাংসদের সঙ্গে রোজই যাঁর ওঠাবসা সেই মানুষটার ছেলের বিজেপির সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া চলছে আর সাংসদের কান পর্যন্ত সেই কথা পৌঁছাচ্ছে না তা মানতে মন সায় দিচ্ছে না অনেকেরই । যাদের মনে এই নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে তাদের বড় অংশই তৃণমূল শিবিরের ।
সুদীপকে বরাবরই চোখে চোখে রাখেন মমতা । |
রাজ্যে চতুর্থ দফার ভোট শেষ হয়েছে । পঞ্চম দফার ভোট শনিবার ( ১৭ এপ্রিল ) । সপ্তম দফায় দক্ষিণ কলকাতার চার আসনে ভোট ২৬ এপ্রিল । আর অষ্টম তথা শেষ দফায় ২৯ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে উত্তর কলকাতার সাত আসনে । খাস কলকাতায় ভোট পর্ব শুরু হওয়ার আগেই সুদীপের একান্ত সচিবের ছেলের বিজেপি যাত্রা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই ভোটের বাজারে । ঘটনার জন্য তৃণমূলের অন্দরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই আঙ্গুল উঠতে শুরু করেছে বলে খবর । সাংসদ হিসেবে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দক্ষতা নিয়ে শাসক অথবা বিরোধী কোনও শিবিরেই সন্দেহের অবকাশ নেই। পাঁচবার সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড তাঁর ঝুলিতে । তৃণমূলের যে ক’জন সাংসদ সংসদে বক্তৃতার গুণে সকলের নজর কেড়ে নেন তাঁদের মধ্যে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম । আর এই কারণেই দিল্লির দরবারি রাজনীতিতে সুদীপ পরিচিত মুখ এবং তাঁর যোগাযোগের শেকড় অনেক গভীরে । বিষয়টি জানেন বলেই পরিষদীয় রাজনীতিতে অভিজ্ঞতার খাতিরে সুদীপকে পাত্তা দিলেও সবসময় চোখে চোখে রাখতে ভোলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বরাবরই উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু বারেবারেই তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দমন করেছেন দলনেত্রী । এনডিএ জামানায় একবার আগ বাড়িয়ে মন্ত্রী হতে গিয়ে মমতার বিষ নজরে পড়ার পর থেকেই দলনেত্রী থেকে একটু আলগা আলগা থাকতে পছন্দ করেন সুদীপও । সেই রাগেই ২০০৪ এ তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফেরেন তিনি।২০০৯ এ পালা বদলের আভাস পেয়ে কংগ্রেসের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে ফিরে এসে সাংসদ নির্বাচিত হলেও মমতা ও সুদীপের মধ্যে সম্পর্কের রসায়নটা কোনও সময়েই সহজ নয় ।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় : দক্ষ সাংসদ , উচ্চাকাঙ্খীও । মমতা ও সুদীপে বনিবনা কম থাকার এটাও একটা কারণ । |
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সচিবের ছেলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পেছনে খোদ সুদীপের ইন্ধন থাকতে পারে বলে সন্দেহ তৃণমূলের অন্দরে অনেকেরই । সচিব পুত্রকে কমলকাননে পাঠিয়ে দুঁদে সাংসদ নিজের রাস্তা ক্লিয়ার করে রাখলেন বলে অনেকের ধারণা । কেউ কেউ বলছেন , তলে তলে অনেক দিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাখামাখি । এবারের বিধানসভা নির্বাচন তৃণমূলের জন্য মরণবাঁচন ম্যাচ । সেই ম্যাচেই উত্তর কলকাতার সাংসদ গা বাঁচিয়ে খেলছেন বলে কালীঘাটে কানাঘুষো । এখন ঠিক কোন প্রাপ্তি যোগের আশায় তমোঘ্ন ঘোষের বিজেপিতে পাড়ি দেওয়া তা পরিস্কার নয় । তবে ভেতরের খবর এটাই যে কলকাতা কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পদ্মের টিকিট লাভের আশ্বাস পেয়েই নাকি শুভেন্দুর হাত ধরে তার দলত্যাগ । পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদেরা অনেক কিছুই আগাম টের পান বলে প্রবাদ আছে। তেমন কিছু একটা টের পেয়েই ভরা ভোটের মধ্যেই ঝানু সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের সচিবের ছেলেকে বিজেপিতে পাঠিয়ে দিয়ে ছোট্ট একটা টোটকা ঝেড়ে দিলেন বলে রসিকতা করছেন রাজনৈতিক মহলের কেউ কেউ ।