নাগরিক নিউজ প্রতিবেদন ,১ মার্চ : ব্রিগেডে জোটের বহু আলোচিত সভা রবিবার হলেও সভা থেকেই বোধ হয় জোটের ওপর শনির নজর লাগল । রকমসকম দেখে তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল । এমনিতেই কংগ্রেসের সঙ্গে আসন রফা হওয়ার আগে ব্রিগেডের মঞ্চে আসতে নারাজ ছিলেন আব্বাস সিদ্দিকি । অনেক কোশিসের পর মান ভাঙিয়ে তবে ভাইজানকে ব্রিগেডে আনতে সক্ষম হন বাম নেতারা । ভাইজান মঞ্চে আসতেই সিপিএমের নেতারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে এমন হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন যে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ভাষণে বাধা পড়ে । বাম নেতাদের বাড়াবাড়ি দেখে অধীরবাবু এতটাই বিরক্ত হন যে ভাষণ শেষ না করেই পোডিয়াম ছাড়তে যান তিনি ।
ভাইজানের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা খুঁজে পেয়েছে সিপিএম |
ব্রিগেডের ভরা সভায় অধীরকে কার্যতঃ অপমানই করলেন ভাইজান |
একপ্রকার হাত-পা ধরে অধীর চৌধুরীকে ঠান্ডা করে তাঁকে দিয়ে ফের বক্তৃতা শুরু করাতে পারলেও রবিবারের ব্রিগেডে শ্যাম ও কুল দুটোই শেষ পর্যন্ত কিন্তু রক্ষা করতে পারলেন না সিপিএমের নেতারা । মঞ্চে ভাষণ দিতে এসেই জোট ধর্মের দফারফা করলেন বামেদের পেয়ারা ভাইজান । আব্বাসের বক্তৃতা শুনে মাঠে উপস্থিত বাম সমর্থকেরা জোশে ফেটে পড়েন । এই দেখে সিপিএমকেও যথেষ্টই হাওয়া দিয়েছেন চতুর পীরজাদা । কিন্তু বামকে পাম্প দিলেও অধীর চৌধুরীর সামনেই কংগ্রেসের হাওয়া বের করে দিয়েছেন ভাইজান । কংগ্রেস নিয়ে দুটো ভালো কথা বলা তো দূরের কথা মঞ্চ থেকে প্রকাশ্যেই অধীরবাবুদের ধমকি দিয়ে বসেন আব্বাস সিদ্দিকি । রাজনীতিতে নেমে এখনও পর্যন্ত যার অন্নপ্রাশন পর্যন্ত হয় নি এই রকম এক ভুঁইফোঁড় নেতার কাছ থেকে কটাক্ষ শুনতে যে কংগ্রেস নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ভালো লাগে নি তা বলাই বাহুল্য । মঞ্চ থেকে নামার পরেও সাংবাদিকদের কাছে প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সম্পর্কে বিষোদগার করেছেন আব্বাস । তিনি বলেছেন, সোনিয়া গান্ধী রাজি থাকলেও আইএসএফকে সিট ছাড়তে নারাজ রাজ্যের কয়েকজন কংগ্রেস নেতা ।
এদিকে মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় আব্বাসের দলকে একটি আসনও দেবেন না বলে অধীর চৌধুরী মনস্থির করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে । মুর্শিদাবাদ নিয়ে অধীর চৌধুরীর স্পর্শকাতরতার কথা বাংলার রাজনৈতিক মহলের ভালোই জানা । মালদহ , মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর – এই তিন জেলা চরম দুঃসময়েও কংগ্রেসকে কখনও খালি হাতে ফেরায় না । উনিশের লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট যেখানে ধুয়ে মুছে সাফ । সেখানে বামেদের থেকে কম শতাংশ ভোট পেয়েও মালদহ ও মুর্শিদাবাদ থেকে শেষ পর্যন্ত দুটো আসন জিতিয়ে আনতে পেরেছে কংগ্রেস । এই রকম দুই শক্ত ঘাঁটি সাধ করে আব্বাস সিদ্দিকির হাতে তুলে দেওয়া কংগ্রেসের জন্য কতটা কষ্টের তা বলার অপেক্ষা রাখে না । রবিবার ব্রিগেডে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অপমানের পর সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘটনায় কতটা ক্ষুব্ধ তারা । আব্বাস সিদ্দিকির থেকেও বামেদের ওপর বেশি রাগ কংগ্রেসীদের । এই পরিস্থিতিতে বাম-কংগ্রেস-ভাইজান জোট প্রক্রিয়া যে জব্বর ধাক্কা খেয়েছে সেই বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই রাজনৈতিক মহলের ।
অপমান গায়ে মেখে হাইকমান্ডের চাপে অধীর চৌধুরী শেষ পর্যন্ত মালদহ, মুর্শিদাবাদ জেলায় আব্বাসকে সিট ছাড়তে বাধ্য হন কিনা এখন এটাই দেখার । অনেকেই বলতে শুরু করে দিয়েছেন , জোট না হলেও নিজের শক্তিতেই রাজ্যের অন্তত তিনটি জেলা থেকে কিছু আসন বের করে আনার তাকত কংগ্রেসের আছে । কিন্তু বামেদের নেই । ঊনিশের লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে একটি বিধানসভা কেন্দ্রেও জেতার মতো অবস্থায় নেই সিপিএম সহ বামফ্রন্টের চার শরিক । আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের মুজাফফর আহমেদ ভবনে বসে অনেক অঙ্ক কষার পরেই বিমান-সেলিম – সূর্যকান্তরা পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির সদ্যজাত দল আইএসএফের কাছে আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেনছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ।
ভোটের হাটে সিপিএমের এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থা |
Pictures Sources – Official Facebook page of CPM and others .