এন এন ডি সি পলিটিক্যাল ডেস্ক : তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথমবার উত্তরবঙ্গ সফরে এসেই প্রচারে ঝড় তুললেন শুভেন্দু অধিকারী। রবিবার আলিপুরদুয়ারের বাবুরঘাট খেলার ময়দান থেকে ফালাকাটা পর্যন্ত পরিবর্তন যাত্রায় নেতৃত্ব দেন শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু , বিজেপির প্রাক্তন জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা , সাংসদ জন বার্লা সহ অন্যান্যরা । যাত্রার সূচনায় বাবুরহাট খেলার ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় দাঁড়িয়ে নাম না তুলেই মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চাঁচাছোলা ভাষায় জবাব দিতে ভুললেন না শুভেন্দু ।
এদিন শুভেন্দু অধিকারীর ভাষণ শুনতে সমাবেশস্থলে ভিড় উপচে পড়েছিল । শনিবার সোনারপুরের সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘ পদ্মফুল কেটে নিলে ডাঁটি শুকিয়ে মরে যায় । ঘাসফুল কেটে নিলেও আবার নতুন করে গজায় ।‘ এদিন অভিষেকের কটাক্ষ ফিরিয়ে দিতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ শুনে রাখুন তোলাবাজ ভাইপো , আমাদের পদ্মের ডাঁটি শুকোবে না । ঘাসফুল কাটলে নাকি আবার ঘাসফুল গজায় । আমরা ঘাসফুলকে কাটতে আসি নি । উপড়ে ফেলে দিতে এসেছি । যাতে আর গজানোর সুযোগ না থাকে । ‘
আলিপুরদুয়ারে বিজেপির সভায় শুভেন্দু অধিকারী ভাষণ দিচ্ছেন |
তৃণমূল সরকার উত্তরবঙ্গের কোনও উন্নয়নই করে নি বলে সভায় অভিযোগ করেন শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বলেন, ‘ আমি আপনাদের বলব আপনারা উত্তরবঙ্গে কী পেয়েছেন ? চারপাঁচটা দক্ষিণ কলকাতার লোক চালাবে আমাদের ? আমি জেলার ছেলে বিদ্রোহ করেছি । ‘ উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে ভূমিপুত্র রাজবংশীদের আবেগকেও উস্কে দেন শুভেন্দু অধিকারী। ‘২৯৪টি আসনে আমিই প্রার্থী ‘ - মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে খোঁচা দিয়ে বিজেপি নেতা বলেন , ‘ এখন কী বলছেন ? ২৯৪টাতেই আমার প্রার্থী । তাহলে রাজবংশী সমাজের বিধায়কের দরকার নেই বিধানসভায় ? রাজবংশীদের তো এরা বিশ্বাসঘাতক বলে । কে বলে ? বলে সৌরভ চক্রবর্তী , এমএলএ । বলে রাজবংশী সমাজ নাকি বিশ্বাসঘাতক । ‘ লোকসভার মতো বিধানসভা ভোটেও তৃণমূলকে শিক্ষা দিতে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে আবেদন জানান তিনি । রাজবংশী সম্প্রদায়ের উন্নয়নে অমিত শাহের প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে শুভেন্দুর দাবি , রাজবংশীদের উন্নয়নে একমাত্র বিজেপিই দায়বদ্ধ ।
সভায় শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ বড় বড় ভবন নির্মাণকে উন্নয়ন বলে না। রাজ্যে দুই কোটি যুবক বেকার । ২০১৪ থেকে এস এস সি র চাকরি নেই । টেটের খাতা বদল হয় । সাড়ে সাত লক্ষ ছেলেমেয়ে বিএড , আড়াই লক্ষ ছেলেমেয়ে বেসিক ট্রেনিং পাশ করে বসে আছে । চাকরি পাচ্ছে না ।’ তৃণমূল নেতা পরেশ অধিকারীর মেয়ের শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার প্রসঙ্গ টেনে এনে শুভেন্দু অভিযোগ করেন, ‘ ওয়েটিং লিস্টে নাম না থাকা সত্ত্বেও কী করে চাকরি পায় ? ‘ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেড় কোটি চাকরির দাবিকে মিথ্যাচার বলে উপহাস করেন তাঁর সরকারেরই প্রাক্তন মন্ত্রী। শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় প্রকল্পই নাম বদল করে চালাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী । প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার নাম বাংলা আবাস যোজনা দেখে জনগণকে বিভ্রান্ত হতে মানা করেন শুভেন্দু অধিকারী । সমস্ত সরকারি প্রকল্প থেকে তৃণমূলের নেতারা কাটমানি খায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপির রাজ্যে সরকারে এলে মিথ্যাচারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মিথ্যাশ্রী ও তাঁর ভাইপোকে তোলাশ্রী পুরস্কার দেওয়া হবে বলে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু ।
আলিপুরদুয়ারে বিজেপির সভায় শুভেন্দু অধিকারী ও রাহুল সিনহা |
শনিবার দীনেশ ত্রিবেদীকে খোঁচা মেরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘ তৃণমূলে থাকতে থাকতে দমবন্ধ হয়ে আসায় বিজেপির আইসিইউতে ভর্তি হয়েছেন তিনি । ‘ রবিবার আলিপুরদুয়ার থেকে অভিষেকের কটাক্ষের জবাবে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘ দীনেশজি সহ আমাদের সবার তৃণমূলে দমবন্ধ হয়ে আসছিল । তাই বিজেপির আইসিইউতে যেতে হয়েছে । অক্সিজেনের অভাব হলে বাঁচতে গেলে আইসিইউতেই ঢুকতে হবে । ‘
দক্ষিণবঙ্গে প্রত্যেকদিন তৃণমূলের উইকেট পড়ছে বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি আরও উইকেট পড়বে । তবে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে নেওয়া হবে না বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেন শুভেন্দু অধিকারী । জনতাকে আশ্বস্ত করে শুভেন্দু বলেন, ‘ আপনার নিশ্চিত থাকুন তোলাবাজ , প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার টাকা খাওয়া পার্টি , পঞ্চায়েতের টাকা চোর , পাথর-বালি বিক্রি করে এমন কাউকেই বিজেপি নেবে না । জেপি নাড্ডা , দিলীপ ঘোষের পক্ষ থেকে বলে যাচ্ছি ।
আলিপুরদুয়ার থেকে ফালাকাটার পথে পরিবর্তনযাত্রায় শুভেন্দু অধিকারী সহ বিজেপির নেতারা |
তৃণমূলের খেলা হবে আওয়াজেরও নিন্দা করেন শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন , ‘ চার বছর আগে খেলা হবে বলেছিলেন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের এমপি শামীম ওসমান । ‘ তৃণমূল খেলতে আসলে বিজেপিও ছেড়ে দেবে না , এই ইঙ্গিত দিয়ে শুভেন্দুর পাল্টা জবাব, ‘ বিজেপির ছেলেরাও উত্তর দিচ্ছেন। খেলা হবে। পদ্মফুলের মেলা হবে । তৃণমূলকে ফেলা হবে । ‘
রাজনৈতিক মহল বলছে , উত্তরবঙ্গের মানুষের পালস বুঝে প্রতিপক্ষেকে জায়গামতো প্রত্যাঘাত করে শুভেন্দু অধিকারী বুঝিয়ে দিলেন, বাংলার উত্তর ও দক্ষিণ – দুই পিচেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে সমান স্বচ্ছন্দ তিনি ।
ভিডিওতে দেখুন –