প্রদ্যুৎ দাস,জলপাইগুড়ি,২ জানুয়ারি : সরকারি হাসপাতালে জটিল অস্ত্রপচার করে রোগীর প্রাণ বাঁচালেন চিকিৎসক । জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে শুক্রবার প্রথমবারের মতো জটিল স্প্লেনেকটমি সার্জারি করলেন শল্য চিকিৎসক ডঃ রজত ভট্টাচার্য । দীর্ঘ সাড়ে তিন ঘন্টার অপারেশনে রোগীর প্লিহা কেটে বাদ দিয়ে পেটে জমে থাকা প্রায় দু’লিটার রক্ত বের করে রোগীকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন ডাক্তারবাবু । প্লিহা বা স্প্লিন ( Spleen ) মানবদেহে পেটের উপরিভাগে থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা লসিকাতন্ত্রে সঞ্চালনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মূলতঃ রক্তের রিজার্ভার হিসেবে কাজ করে থাকে অঙ্গটি ।
জলপাইগুড়ি সুপারস্পেশালিটি হসপিটাল |
দুর্ঘটনায় আহত রোগীর প্রাণ বাঁচাতে প্লিহা কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না চিকিৎসকের সামনে । পেশায় গাড়ির খালাসি অবিনাশ রায় নামে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকের ব্যাঙকান্দির বাসিন্দা ওই রোগী সম্প্রতি ধূপগুড়িতে পথদুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বারো দিন ধরে চিকিৎসাধীন আছেন । গাড়ি থেকে ছিটকে রাস্তার পাথরের ওপর পড়ে গিয়ে অবিনাশবাবুর মাথায় ও পাঁজরে মারাত্মক চোট লাগে । পাঁজরের নিচে প্লিহা পর্যন্ত ফুটো হয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে । স্ক্যান করে চিকিৎসক দেখতে পান প্লিহা থেকে রক্ত বেরিয়ে পেটে জমে যাচ্ছে । রক্তক্ষরণ বন্ধ না করতে পারলে রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব নয় । এই পরিস্থিতিতে প্লিহা কেটে বাদ দেওয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চিকিৎসক ডঃ রজত ভট্টাচার্য । পাঁচ জনের একটি টিম তৈরি করে সরকারি হাসপাতালেই এই জটিল অস্ত্রপচারের ঝুঁকি নেন ডাক্তারবাবু। শুক্রবার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় ধরে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ওটিতে স্প্লেনেকটমি সার্জারি সফল করেই বেরিয়ে আসেন টিমের সদস্যরা । প্লিহা কেটে বাদ দিয়ে রোগীর পেটে জমে থাকা প্রায় দু’লিটার দূষিত রক্ত বের করা হয়েছে বলে ডঃ রজত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন । রোগী এখন সুস্থ আছেন বলে জানান তিনি ।
রোগীর শয্যার পাশে চিকিৎসক ডঃ রজত ভট্টাচার্য |
রোগীর পরিবারের অবস্থা ভাল নয় । কোনও বেসরকারি নার্সিংহোমে স্প্লেনেকটমি সার্জারি করতে কমপক্ষে তিন লক্ষ টাকার ধাক্কা । অবিনাশ রায়ের পরিবারের পক্ষে এই টাকা খরচ করার সামর্থ্য ছিল না । রোগীর প্রিয়জনদের মুখের দিকে তাকিয়ে সরকারি হাসপাতালেই এই দীর্ঘ ও জটিল অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ডঃ রজত ভট্টাচার্য । ডাক্তারবাবুর কাছে তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই অবিনাশ বাবুর পরিবারের সদস্যদের । রোগীর দাদা জ্যোতিষ রায় বলেন , ‘ ভায়ের জীবন ফিরিয়ে দিলেন ডাক্তারবাবু । ওনাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই । ‘
জটিল অস্ত্রপচার শেষে স্থিতিশীল আছেন রোগী |
ভিডিওতে দেখুন –