শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগদানের পর অধিকারী পরিবারের গৈরিক হওয়া সময়ের অপেক্ষা ছিল মাত্র |
তৃণমূলের দশ বছরের শাসনে অধিকারী পরিবারের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ও বৈভব দুইই যে বেড়েছে তাতে কারও কোনও সন্দেহ নেই । এবং এটাকে তৃণমূল সুপ্রিমোর অনুগ্রহ নয় বরং নিজেদের প্রাপ্য বলেই মনে করেন কাঁথির শান্তি কুঞ্জের গৃহকর্তা এবং তাঁর তিন পুত্র । এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই যে তৃণমূলের ভেতরে নিজেদের শক্তি বা তাকত সম্পর্কে স্বাভিমান বলুন , অস্মিতা বলুন আর দেমাকই বলুুন যদি কারও থেকে থাকে তবে তা আছে কেবল কাঁথির অধিকারী পরিবারের । শিশির অধিকারীর রক্তে রাজনীতি । শিশিরবাবুর বাবা কেনারাম অধিকারী ছিলেন মেদিনীপুরের সুপরিচিত স্বাধীনতা সংগ্রামী । অধিকারীদের বসতবাড়ি দু’বার ইংরেজরা পুড়িয়ে দিয়েছিল । স্থানীয় মানুষের মধ্যে শিশির অধিকারীর স্বাধীনতা সংগ্রামী পিতার বিরাট প্রভাব ছিল । কাজেই শিশির অধিকারীদের রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি আজকের নয় । ঘরের তিন ছেলেকেই রাজনীতিতে নামিয়েছেন শিশির অধিকারী । এরকম রাজনৈতিক পরিবার কমই আছে পশ্চিমবঙ্গে ।
নন্দীগ্রামকে কেন্দ্র করে যে বাম বিরোধী আন্দোলন তার একাধিক উৎস থাকলেও এই আন্দোলন সংগঠিত করার পেছনে শুভেন্দু অধিকারীর যে আলাদা একটা ভূমিকা আছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই । শিশির অধিকারীর পুত্রদের মধ্যে রাজনৈতিক মাপকাঠিতে তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র শুধু যোগ্যতমই নয় সবথেকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্যারিশ্মাটিকও । বড়ছেলে তাঁকে সবদিক ছাপিয়ে যাওয়ায় অধিকারী সাম্রাজ্য রক্ষা করার যাবতীয় দায় দায়িত্ব শুভেন্দুর ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন শিশির অধিকারী ।
তৃণমূল নামক দলটার ভেতরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামক গাছের ছায়ার নিচে আর কোনও বৃক্ষের জন্ম সম্ভব নয় । মমতা তা চানও না । চারা গাছটাছ পর্যন্ত ঠিক আছে । কেউ তার বেশি মাথা তুলতে চাইলেই তিনি নেত্রীর স্ক্যানারে চলে আসেন । অভিষেকের উত্থানের পর তৃণমূল কংগ্রেসে সেকেন্ড ইন কমান্ডের সিট পাওয়াটাও আর অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয় । এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে তৃণমূল ত্যাগে বাধ্য হয়েছেন মুকুল রায় । অস্বস্তিতে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর মতো স্বাভিমানী নেতাও । ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ১৮ আসন ও চল্লিশ শতাংশ ভোট প্রাপ্তির পর থেকেই কাঁথির অধিকারী পরিবারের ভেতরে অন্য রকম হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে যায় । বর্ষীয়ান শিশির অধিকারী খুব ঠাণ্ডা মাথার মানুষ । তিনি বিজেপি , বাম , কংগ্রেস – সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক রাখতে জানেন , রেখে চলেন । তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রটিও এই ব্যাপারে পিতার মতোই বাস্তববাদী । তৃণমূল ছেড়ে গিয়ে যদি শুভেন্দুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হয় শিশির অধিকারী তাতে পিতা হয়ে বাধা দেবেন কেন ? দেনও নি । সুযোগ না থাকলে আলাদা কথা । শুভেন্দু অধিকারীর মত উচ্চাভিলাসী নেতা ভালোই জানেন আঞ্চলিক নেতার পরিচয় ছাপিয়ে রাজ্যের নেতা হওয়ার এটাই সবথেকে বড় সুযোগ । বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর মতো জনপ্রিয় নেতার দরকার ছিল , যিনি নিজের প্রভাবে রাজ্যের একটি বড় এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন জিতিয়ে আনার সক্ষমতা রাখেন । আবার শুভেন্দুরও বিজেপির মতো একটি দলের দরকার ছিল যেখানে ঢুকলে তিনি পুরোনো দলকে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের দামটাও দর কষাকষির মাধ্যমে বাড়িয়ে নিতে পারবেন ।
মাথায় শিশির অধিকারীর আশীর্বাদ না থাকলে শুভেন্দু বিজেপিতে নাম লেখাতেন না |
এটা অনুমান করতে অসুবিধা হয় না, বাবার আশীর্বাদ মাথায় নিয়েই শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন । যেদিন থেকে শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির নেতা সেদিন থেকেই তৃণমূলে থেকেও নিষ্ক্রিয় হয়ে যান শিশির অধিকারী এবং তাঁর দুই পুত্র । ১৯ ডিসেম্বর অপরাহ্ন থেকেই শিশিরবাবু অপেক্ষায় ছিলেন তৃণমূলের উপেক্ষা আর অপমানের । সেটা নিয়মিতই জুটছিল । শেষে কনিষ্ঠ পুত্র সৌমেন্দুকে কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে অপসারণ করতেই শান্তি কুঞ্জের আরেক সদস্যের গেরুয়া হতে আর কোনও বাধাই রইল না । শুক্রবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে যে ভাষায় মনের ভাব ব্যক্ত করেছেন ৮১ বছরের পোড় খাওয়া রাজনীতিক , তাতে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে শান্তি কুঞ্জের অবশিষ্ট দুই সদস্যও যত দ্রুত সম্ভব তৃণমূলের বোঝা ঘাড় থেকে নামাতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন । এক কথায় বলাই যায় সাংসদ শিশির অধিকারী ও সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী কাগজে কলমে এখনও তৃণমূল না ছাড়লেও নিজেদের বাড়ি ইতিমধ্যেই গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে ফেলেছেন শান্তিকুঞ্জের বড় ছেলে ও সবথেকে বড় সম্পদ শুভেন্দু ।