Views: 1,607
নাগরিক ডেস্ক : উৎসবপ্রিয় বাঙালির জীবনে যদিও বারো মাসই উৎসবময় । তারপরেও বলতে হয় মহালয়া দিয়ে বঙ্গজীবনে যে মহোৎসব পর্বের সূচনা তার অন্ত হয় জগদ্ধাত্রী পুজো দিয়ে । দেবী জগদ্ধাত্রী । নামেই দেবীর পরিচয় । তিনি এই জগতের ধাত্রী , জগতকে ধারণ করে আছেন । তিনি জগতের ধারিণী শক্তি । জগৎ পালিকা তিনি। আসলে দেবী দুর্গারই আরেক রূপ জগদ্ধাত্রী। মা দুর্গার অজস্র রূপের একটি । তিনি ত্রিনয়না এবং চতুর্ভূজা। দেবী জগদ্ধাত্রী ঊর্ধ্ব দক্ষিণ হস্তে চক্র । নিম্ন দক্ষিণ হস্তে বান । ঊর্ধ্ব বাম হস্তে শঙ্খ এবং নিম্ন বাম হস্তে ধনুক ধারণ করেন । দেবীর গলায় নাগযজ্ঞোপবীত । তিনিও দেবী দুর্গার ন্যায়ই সিংহবাহিনী । তবে এই সিংহ করীন্দ্রাসুর বা হস্তিরূপী এক অসুরের ওপর দন্ডায়মান । শাস্ত্র বলছে দেবী জগদ্ধাত্রীর গাত্রবর্ণ সদ্য উদিত সূর্যের ন্যায় ।
তন্ত্র ও পুরাণে জগদ্ধাত্রীর অজস্র উল্লেখ আছে। কেনোপোনিষদে জগদ্ধাত্রীকে উমা হৈমবতী বলে উল্লেখ করা হয়েছে । দেবা-সুরের লড়াইয়ে ব্রহ্মের তেজে বলীয়ান হয়ে দেবতারা বিজয়প্রাপ্ত হন। যদিও জয়লাভের পরেই দেবকূলের অহঙ্কার বেড়ে যায় । দেবতারা ভাবতে থাকেন নিজেদের বলেই অসুরদের পরাস্ত করেছেন তাঁরা। দেবতাদের মিথ্যা অহঙ্কার চূর্ণ করতে যক্ষ রূপ ধারণ করে দেবলোকে আবির্ভূত হন স্বয়ং ব্রহ্ম । দেবতাদের সামনে একটি তৃণ রেখে তা সরাতে বলেন যক্ষরূপী ব্রহ্ম । অগ্নি ও বায়ু পর্যন্ত সেই তৃণখন্ডকে পুড়িয়ে কিম্বা উড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হলে ডাক পড়ে দেবরাজ ইন্দ্রের। দেবরাজ ইন্দ্র যক্ষকে স্বরূপ উন্মোচনের অনুনয় জানালে যক্ষ অদৃশ্য হন এবং আকাশে আবির্ভূতা হন হৈমবতী উমা । ইনিই জগতের পালিকাশক্তি জগদ্ধাত্রী। দেবতারা বুঝতে পারলেন ত্রিভুবনকে ইনিই চালান তাঁরা নিমিত্ত মাত্র ।
শ্রীশ্রী চন্ডীতে খুব সুস্পষ্টভাবেই জগদ্ধাত্রীর উল্লেখ আছে । দেবী দুর্গার সঙ্গে যুদ্ধকালে বারংবার আপন রূপ পরিবর্তন করে ছলনার আশ্রয় নেয় মহিষাসুর। মহিষাসুর একবার হস্তির রূপ ধারণ করলে দেবী দুর্গা চতুর্ভূজা মূর্তিতে রণভূমিতে আবির্ভূতা হন । স্বীয় হস্তের চক্র দ্বারা হস্তির শুঁড়টি কর্তন করে হস্তিরূপী অসুরকে বধ করেন তিনি। সংস্কৃতে হস্তির আরেক নাম করি । তাই শাস্ত্রে এই অসুরের নাম করীন্দ্রাসুর । দেবী দুর্গা যেই রূপ ধারণ করে করীন্দ্রাসুরকে বধ করেন সেই রূপটির নামই জগদ্ধাত্রী । তাই জগদ্ধাত্রীর বাহন সিংহকে একটি মৃত হস্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি আমরা ।
দেবী জগদ্ধাত্রী সত্ত্ব গুণের প্রতীক । কার্তিক মাসের শুক্লা সপ্তমী থেকে নবমী তিথি পর্যন্ত দেবীকে পুজো করার বিধান রয়েছে। তবে অনেকে নবমী তিথিতেই একদিনে তিন তিথির পুজো সেরে ফেলেন । দুর্গাপুজো বাঙালির সর্ববৃহৎ উৎসব হলেও হুগলি জেলার চন্দননগর জগদ্ধাত্রীময় । নদীয়ার কৃষ্ণনগরেও জগদ্ধাত্রী পুজোই সবথেকে বড় পার্বন । হুগলি ও নদীয়া জেলার গঙ্গা তীরবর্তী আরও বহু জনপদেই ধূমধামের সঙ্গে জগদ্ধাত্রী আরাধনা হয়ে থাকে ।
ছবি -ট্যুইটার ও ফেসবুক থেকে সংগৃহীত